প্রায় হাতাহাতি দুই অধিনায়কের

গম্ভীর বনাম মনোজ নিয়ে ফুটছে কোটলা

বাংলা অধিনায়ক বনাম কলকাতা নাইট রাইডার্স ক্যাপ্টেন। শনিবার বাংলা-দিল্লি রঞ্জি ম্যাচে দু’জনের মধ্যে তুমুল ঝগড়া দেখল ফিরোজ শাহ কোটলা। দেখল, দুই অধিনায়ক কী ভাবে নিজেদের মধ্যে প্রায় হাতাহাতি করার মতো অবস্থায় পৌঁছে গিয়েছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, অল্পের জন্য হাতাহাতিতে গড়ায়নি দুই অধিনায়কের অক্রিকেটীয় ‘ডুয়েল’।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০১৫ ০৩:৩১
Share:

মনোজ-গম্ভীর বচসা থামাতে ছুটে আসছেন আম্পায়ার। শনিবার ফিরোজ শাহ কোটলায়। ছবি: রমাকান্ত কুশওয়া

বাংলা অধিনায়ক বনাম কলকাতা নাইট রাইডার্স ক্যাপ্টেন।
শনিবার বাংলা-দিল্লি রঞ্জি ম্যাচে দু’জনের মধ্যে তুমুল ঝগড়া দেখল ফিরোজ শাহ কোটলা। দেখল, দুই অধিনায়ক কী ভাবে নিজেদের মধ্যে প্রায় হাতাহাতি করার মতো অবস্থায় পৌঁছে গিয়েছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, অল্পের জন্য হাতাহাতিতে গড়ায়নি দুই অধিনায়কের অক্রিকেটীয় ‘ডুয়েল’। দুই উত্তেজিত অধিনায়ককে থামাতে যাওয়া আম্পায়ার শ্রীনাথকে মাঝখান থেকে অপদস্থ হতে হয় দিল্লির ক্যাপ্টেন গৌতম গম্ভীরের ধাক্কা খেয়ে। তবু শেষ পর্যন্ত তিনি অবস্থা আয়ত্তে আনতে পারলেও উত্তেজনার আগুন ধিকিধিকি জ্বলছে এখনও।
রঞ্জির ‘এ’ গ্রুপ লিগ টেবলের শীর্ষে থাকা দিল্লির ঘর থেকে বাংলা তিন পয়েন্ট নিয়ে চলে যাবে, এটা মোটেই মেনে নিতে পারছেন না দিল্লির ক্রিকেটার, কর্মকর্তারা। তা তাঁদের ছোটখাটো আচরণেই বোঝা যাচ্ছে বলে বাংলা শিবিরের অভিযোগ। এ বার সেই উত্তেজনারই বিস্ফোরণ ঘটল শনিবার।
প্রথম ইনিংসে ১০৮ রানে এগিয়ে থাকা বাংলা দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে মাত্র দু’রানে দুই ওপেনারকে হারায়। চার নম্বরে মনোজ তিওয়ারি ব্যাট করতে নামার পরই ঘটনাটি ঘটে। মনোজ ব্যাট করতে নামেন টুপি মাথায় দিয়ে। দিল্লির বাঁ-হাতি স্পিনার মনন শর্মা রান-আপ শুরু করতেই তাঁকে থামিয়ে মনোজ হেলমেট চেয়ে পাঠান। প্রথমে মনন ও প্রদীপ সাঙ্গোয়ান মনোজের উদ্দেশ্যে কিছু বলেন। তার পর প্রথম স্লিপ থেকে গৌতম গম্ভীর বলতে শুরু করেন। মনোজের ভাষায়, যা নাকি অশ্রাব্য, ব্যক্তিগত আক্রমণ।
দিনের শেষে বাংলা অধিনায়ক বলেন, ‘‘গৌতমকে আমি ক্রিকেটার হিসেবে শ্রদ্ধা করি। ও আমার সিনিয়রও। কিন্তু আজ ও যা করল, তা সমস্ত সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছে। ও ব্যাক্তিগত পর্যায়ে গিয়ে আমাকে আক্রমণ করতে শুরু করে। সে জন্যই আমি প্রতিবাদ করি।’’
ম্যাচ কভার করতে যাওয়া দিল্লির সাংবাদিকদের ফোন করে জানা গেল, গম্ভীর নাকি মনোজকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘‘শাম কো মিল, তুঝে মারুঙ্গা’’ (সন্ধ্যায় দেখা কর, তোকে মারব)। মনোজ নাকি পাল্টা দেন, ‘‘শাম ক্যায়া, আভি বাহার চল’’ (সন্ধ্যায় কেন, এখনই বাইরে চল না)। দুই ক্যাপ্টেনকে একে অপরের দিকে তেড়ে যেতে দেখে আম্পায়ার শ্রীনাথ উল্টো দিক থেকে দৌড়ে আসেন তাঁদের থামাতে। গম্ভীর তখন তাঁকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে মনোজের দিকে তেড়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। আম্পায়ারের কাছে তিনি মনোজের বিরুদ্ধে সময় নষ্ট করার অভিযোগও আনেন। মনোজ এই ব্যাপারে বলেন, ‘‘বাউন্ডারির ধারে হেলমেটটা রোদে শুকোতে দিয়েছিলাম বলে প্রথমে ওটা পরে নামিনি। ব্যাটসম্যানের টুপি বদলে হেলমেট পরাটা ক্রিকেটে তো প্রথম ঘটল না। সবাই দেখেছে কে ঝামেলাটা শুরু করেছে। গৌতম আমাকে আর একটু হলে মেরেই দিচ্ছিল। আম্পায়ার এসে যাওয়ায় আর পারেনি। আম্পায়ারকে ও ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়। ভিডিও ফুটেজে সব আছে।’’

Advertisement

ম্যাচ রেফারি বালমিক বুচ খেলার শেষে দুই ক্যাপ্টেন ও দু’দলের ম্যানেজারকে অপেক্ষা করতে বলেন। বাংলার ম্যানেজার সমীর দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘ম্যাচ রেফারি আমাদের অপেক্ষা করতে বলেন। মুখোমুখি বসে কথা বলেননি। আমরা কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর উনি আমাদের কাছে এসে জানিয়ে দেন, দু’জনকেই জরিমানা করা হয়েছে। ব্যান করা হচ্ছে না বোধহয়।’’ নিয়ম অনুযায়ী ম্যাচ শেষে ম্যাচ রেফারির জানানোর কথা, কার কী শাস্তি হচ্ছে। তবে সূত্রের খবর, গম্ভীরকে লেভেল টু অপরাধের দায়ে ম্যাচ ফি-র ৭০ শতাংশ জরিমানা করা হচ্ছে আর লেভেল ওয়ান অপরাধের দায়ে মনোজের ম্যাচ ফি-র ৪০ শতাংশ কেটে নেওয়া হতে চলেছে। যার ঘোষণা হবে রবিবার খেলা শেষে।

শনিবার মাঠের ঝামেলা মাঠে মিটে গিয়েছে বলা হলেও তা জিইয়ে রাখেন গম্ভীর। মাঠে ‘‘কিছুই হয়নি’’ বললেও মাঠ থেকে ফিরে দীর্ঘ লিখিত বিবৃতি পাঠিয়ে দেন, যার মোদ্দা বক্তব্য, তিনি আম্পায়ারকে ধাক্কা দেননি। বরং মনোজ নাকি প্রদীপ সাঙ্গওয়ানকে ধাক্কা দিয়েছেন এবং তাঁর ভিডিও ফুটেজও ম্যাচ রেফারির কাছে আছে বলে তিনি দাবি করেন। বিবৃতিতে তিনি লেখেন, ‘‘মিডিয়াতে বলা হচ্ছে আমি নাকি আম্পায়ারকে ধাক্কা দিয়েছি, যা একেবারেই ঠিক না। বাংলাকে ২-২ করে দেওয়ার পর মনোজকে চাপে রাখার জন্য আমরা ওকে ফিল্ডার দিয়ে ঘিরে ধরেছিলাম। কিন্তু ও প্রায় প্রতিটা বলের মাঝেই স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সময় নিতে শুরু করে। আমাদের কয়েকজন এর প্রতিবাদ করলে মনোজই উল্টে ওদের উদ্দেশ্যে উল্টোপাল্টা বলতে শুরু করে। তার পরই আমি বলা শুরু করি। আম্পায়াররা ঘটনাটাকে থামিয়ে খুব ভাল কাজ করেছেন। কিন্তু আমি কোনও আম্পায়ারের গায়ে হাত তুলিনি। বা মনোজকেও মারতে যাইনি বা ওকে মারার কথাও বলিনি। বরং ম্যাচ রেফারি আমাকে বলেছেন, মনোজ যে সাঙ্গোয়ানকে ধাক্কা দিয়েছিল তার ভিডিও ক্লিপিংস আছে। আমার সঙ্গে আম্পায়ারের ঝামেলা নিয়ে কিছু নেই।’’

Advertisement

মনোজ আবার রাতে টুইট করেন, ‘‘গম্ভীরের সঙ্গে কাদা ছোড়াছুড়িতে যেতে চাই না। ও যে মিথ্যা বলছে, তা আলাদা করে বলার দরকার নেই। ম্যাচ শেষ হোক। সবাইকে সব কিছু জানাব।’’ বাংলা দিনের শেষে ৪৭-৩। মনোজ ২১ অপরাজিত। শেষ দিন দ্রুত আড়াইশোর লিড নিয়ে দিল্লিকে ব্যাট করতে পাঠানোর পরিকল্পনার কথা শোনা গেল বাংলা শিবিরে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

বাংলা ৩৫৭ ও ৪৭-২ (মনোজ ন.আ. ২১, মনন ২-১৫)

দিল্লি ২৪৯ (মিলিন্দ ৭৭, প্রজ্ঞান ৪-৭৭, দিন্দা ৩-৫৯)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement