কিংবদন্তি সুইসের তাঁর চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর সামনে বারবার মুখ থুবড়ে পড়ার অন্যতম কারণ হিসাবে টেনিসমহল দেখছে পরাজিতের ওয়ান হ্যান্ডেড ব্যাকহ্যান্ডকে।
নতুন মহাতারকা সুইসের ঐতিহাসিক গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয় আবার সেই ওয়ান হ্যান্ডেড ব্যাকহ্যান্ডেই!
স্ট্যানিসলাস ওয়ারিঙ্কা অস্ট্রেলীয় ওপেন চ্যাম্পিয়ন হয়ে নিজের টেনিস আইডল রজার ফেডেরারকেও যেন চ্যালেঞ্জে ফেলে দিলেন! ওয়ান হ্যান্ডেড ব্যাকহ্যান্ডেও তা হলে রাফায়েল নাদালকে হারানো যায়! কাকতালীয় হয়তো! তবে চ্যাম্পিয়ন হয়ে লকাররুমে ফিরে ওয়ারিঙ্কা দেখেন, তাঁর মোবাইলে প্রথম অভিনন্দনের মেসেজটা ফেডেরারেরই পাঠানো!
পাশাপাশি রবিবার ফাইনালে নাদালের ৩-৬, ২-৬, ৬-৩, ৩-৬ হারের পিছনে তাঁর পিঠের ব্যথার জন্য কোর্টেই লম্বা মেডিক্যাল টাইম-আউট নিয়ে ডাক্তারের শুশ্রূষার পরেও একশো ভাগ ফিট হতে না পারাকেও একটা কারণ বড় হিসাবে দেখা হচ্ছে।
লুসানের ২৮ বছরের যুবকও কি সে জন্য পাঁচ-পাঁচটা নজির গড়ে জীবনের প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতেও নিজেই কিছুটা অবাক? “গ্র্যান্ড স্ল্যাম চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মতো আমি ভাল প্লেয়ার বলে নিজের উপর বিশ্বাস ছিল না। গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতব ভাবিনি কারণ, টেনিসের ফ্যাব ফোর-দের হারানোর মতো ভাল প্লেয়ার বলে নিজেকে ভাবতাম না,” স্বীকার করেছেন ওয়ারিঙ্কা। নাদালের মতোই এ বার মেলবোর্নের আগে জকোভিচকেও কোনও ম্যাচে হারাননি ওয়ারিঙ্কা। কিন্তু প্যাট ক্যাশের মতে, “গত বার এখানে জকোভিচের কাছে পঞ্চম সেটে একচুলের জন্য হারের পরই ওয়ারিঙ্কার বিশ্বাস জন্মায়, ও ফ্যাব ফোর-দের হারাতেও পারে। তার পর প্রাক্তন সুইডিশ তারকা ম্যাগনাস নরম্যানের কাছে কোচিং নিয়ে গ্র্যান্ড স্ল্যাম জেতার জন্য ওর যতটুকু শক্তিশালী হওয়ার দরকার ছিল সেটাও হয়েছে ওয়ারিঙ্কা।”
ওয়ারিঙ্কা অবশ্য তাঁর কথায় বুঝিয়ে দিয়েছেন, ফাইনালে নাদালের চোটের জন্য তিনি বাড়তি সুবিধা পেয়েছেন তা মোটেই নয়। “ম্যাচের শুরুতে ও সুস্থ ছিল। ফিট ছিল। কোনও চোট ছিল না,” বলে ওয়ারিঙ্কা কিছুটা বিরক্তির সঙ্গে যোগ করেছেন, “আমি জানতামই না ওর কী ধরনের চোট ছিল ফাইনালে! সে জন্য কোর্টে নাদালের শুশ্রূষার সময় আম্পায়ারকে পর্যন্ত জিজ্ঞেস করেছিলাম, আমার প্রতিদ্বন্দ্বীর কী হয়েছে? আশ্চর্যের হল, নিয়ম মতো একজন প্লেয়ার কোর্টে মেডিক্যাল টাইম-আউট নিলে তার প্রতিপক্ষকে আম্পায়ারের কাজ হল, কী চোট সারাতে ডাক্তার কোর্টে ঢুকলেন সেটা জানানো। কিন্তু আমাকে আম্পায়ার এ ক্ষেত্রে কিছু জানাননি। তাই আমি কী করে বলব, নাদালের কী চোট ছিল? তবে আমি ফাইনালে খুব ভাল খেলেছি। যোগ্য হিসাবেই জিতেছি।”
নাদাল আবার ভাবছেন, ফাইনালের মাঝপথে ম্যাচ ছেড়ে দিলেই তাঁর সত্যিকারের আত্মসমর্পণ করা হত। “ফাইনাল হেরেছি কিন্তু পালিয়ে যাইনি। যতই শারীরিক সমস্যা থাক, ওয়াকওভার দিতে আমি ঘৃণা করি। সেটার জায়গা আমার টেনিস-ভাবনায় সবশেষে,” বলেছেন নাদাল। জানিয়েছেন, ফাইনালের ওয়ার্ম আপের সময়েই পিঠে একটা সমস্যা টের পান তিনি। “তার পর প্রথম সেটে ব্যাপারটা আর একটু বেশি খারাপ লাগছিল। তবে দ্বিতীয় সেটের গোড়ার মুহূর্তটা আসল। তখনই প্রথম মনে হল, পিঠের পেশি কেমন যেন আটকে যাচ্ছে! ওয়ারিঙ্কা ছাড়াও তখন যন্ত্রণা আর চোটের ভয়ের বিরুদ্ধেও খেলেছি আমি!”
ওয়ারিঙ্কা অবশ্য অতশত ভাবতে রাজি নন। সুইস মিডিয়ার শিরোনাম যদি হয়, ‘ওয়ারিঙ্কার অসম্ভব কাণ্ড!’ তা হলে স্বয়ং সুইস মহানায়কের সরল স্বীকারোক্তি ছিল, “জয়ের রাতটা উপভোগ করতে গিয়ে আমার মাতাল হয়ে পড়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে!”
এ দিকে, মিক্সড ডাবলস ফাইনালে নেস্টর-ম্লাডেনোভিচের কাছে ৩-৬, ২-৬ হারায় সানিয়া মির্জা ও তাঁর রোমানিয়ান সঙ্গী তেকাউকে অস্ট্রেলীয় ওপেনে রানার্সের ট্রফিতেই সন্তুষ্ট থাকতে হল।
গত ১০ বছরে টেনিসের ‘ফ্যাব ফোর’-এর (ফেডেরার-নাদাল-জকোভিচ-মারে) বাইরে দ্বিতীয় প্লেয়ার হিসাবে (দেল পোত্রোর ’০৯ যুক্তরাষ্ট্র ওপেন জয়ের পর) গ্র্যান্ড স্ল্যাম চ্যাম্পিয়ন। ’০৫ অস্ট্রেলীয় ওপেন মারাট সাফিন জেতার পর ৩৬টি গ্র্যান্ড স্ল্যামের ৩৪টিই জিতেছেন ‘ফ্যাব ফোর’-এর কেউ।
গত ২১ বছরে গ্র্যান্ড স্ল্যামে এই প্রথম কেউ এক ও দু’নম্বর বাছাইকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হলেন। ’৯৩ ফরাসি ওপেন জেতেন সের্গেই ব্রুগুয়েরা শীর্ষ বাছাই সাম্প্রাসকে কোয়ার্টারে, দু’নম্বর কুরিয়ারকে ফাইনালে হারিয়ে।
গত ১২ বছরে এটিপি র্যাঙ্কিংয়ে প্রথম দশে বৃহত্তম উত্থান (সোমবারই প্রকাশিত টেনিসের বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে ওয়ারিঙ্কা ৮ থেকে ৩ নম্বর)।
রবিবারের আগে রাফায়েল নাদালের বিরুদ্ধে ১২টি সাক্ষাতে ১২ বারই স্ট্রেট সেটে হারেন ওয়ারিঙ্কা।
রজার ফেডেরারকে সরিয়ে সুইৎজারল্যান্ডের এক নম্বর ওয়ারিঙ্কা।