কোয়ার্টার ফাইনাল যাচ্ছিই: কার্লোস

ঘুম জড়ানো গলায় কার্লোস হার্নান্দেজ বললেন, “কাল রাতে আমাদের দেশে এক জনও কেউ ঘুমোয়নি। আমিও না। প্লিজ পরে ফোন করুন।” কয়েক ঘণ্টা পর শনিবার ভারতীয় সময় রাত আটটায় কোস্টারিকার রাজধানী সান হোসের বাড়িতে যখন মোবাইলে ফের ধরা হল, কার্লোস তখন মোটামুটি ধাতস্থ। কলকাতায় খেলে যাওয়া বিশ্বকাপার-মিডিও প্রথমেই বললেন, “চব্বিশ বছর আগে আমরা যখন শেষ বার বিশ্বকাপে গ্রুপ লিগের গণ্ডি পেরিয়েছিলাম, তখন আমি সবে ফুটবলটা শুরু করেছি।

Advertisement

রতন চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ জুন ২০১৪ ০৩:৫৪
Share:

কলকাতায় খেলে যাওয়া কার্লোস।

ঘুম জড়ানো গলায় কার্লোস হার্নান্দেজ বললেন, “কাল রাতে আমাদের দেশে এক জনও কেউ ঘুমোয়নি। আমিও না। প্লিজ পরে ফোন করুন।”

Advertisement

কয়েক ঘণ্টা পর শনিবার ভারতীয় সময় রাত আটটায় কোস্টারিকার রাজধানী সান হোসের বাড়িতে যখন মোবাইলে ফের ধরা হল, কার্লোস তখন মোটামুটি ধাতস্থ। কলকাতায় খেলে যাওয়া বিশ্বকাপার-মিডিও প্রথমেই বললেন, “চব্বিশ বছর আগে আমরা যখন শেষ বার বিশ্বকাপে গ্রুপ লিগের গণ্ডি পেরিয়েছিলাম, তখন আমি সবে ফুটবলটা শুরু করেছি। আনন্দটা ঠিক সেভাবে উপভোগ করতে পারিনি। গতকাল জীবনের সেরা দিনটা দেখলাম।” কে বলবে, তিরিশ জনের দলে থেকেও শেষ মুহূর্তে ব্রাজিলে যেতে না পারার আক্ষেপ আছে! কে বলবে, কোচ জর্জ লুই পিন্টো প্রতিশ্রুতি দেওয়া সত্ত্বেও ফর্মেশনে খাপ খাবেন না বলে তাঁকে তেইশ জনের স্কোয়াড থেকে বাদ দেওয়ার জন্য দুঃখ আছে। বরং মনে হল, পেলের দেশে স্বদেশের আলোড়ন ফেলা পারফরম্যান্সে তুমুল উচ্ছ্বসিতই আই লিগে ইউনাইটেডের হয়ে অসাধারণ ফ্রিকিকে অনেক গোল করে যাওয়া কার্লোস।

এক ম্যাচ বাকি থাকতেই গ্রুপ অব ডেথ থেকে নক আউটে উঠে যাওয়ায় কোস্টারিকাকেই এখন ভাবা হচ্ছে টুর্নামেন্টের কালো ঘোড়া। ব্রাজিলে তাঁর দেশের এই অসাধারণ পারফরম্যান্সের চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে কালোর্স বলে দিলেন “আরে আমাদের ডেমোক্রেসি স্কোয়ারের জায়ান্ট স্ক্রিনের সামনে তো গতকাল সারা রাত দেখলাম অসংখ্য মানুষের ভিড়। খেলা শেষ হওয়ার পর সবাই বেরিয়ে এসেছিল রাস্তায়। এত লোক একসঙ্গে রাস্তায় কখনও দেখিনি। কোনও বাড়িতেই মনে হয় কেউ ছিল না। পুরুষ-মহিলা-ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা সবাই নেমে পড়েছিল রাস্তায়। যে যার মতো করে গাড়ির হর্ন বা অন্য কিছু বাজাচ্ছিল। অনেককে আনন্দে-আবেগে কাঁদতে পর্যন্ত দেখলাম। আসলে বিশ্বকাপে আমাদের তো কেউ পাত্তাই দিচ্ছিল না। কেউ ভাবেওনি ওই রকম দু’টো হেভিওয়েট টিমকে হারিয়ে কোস্টারিকা ভয়ঙ্কর শক্ত একটা গ্রুপ থেকে প্রি-কোয়ার্টারে যাবে। সবাই তো আমাদের বাতিলের খাতায় ফেলে দিয়েছিল,” এক টানা বলতে-বলতে কলকাতায় দু’বছর আগেই খেলে যাওয়া কোস্টারিকান ফুটবলারের গলায় এক অদ্ভুত উচ্ছ্বাস-আবেগের মিশ্রণ।

Advertisement

আপনাদের দলের এই অসাধারণ সাফল্যের রসায়ন কী? ব্রাজিল রওনা হওয়ার দিনকয়েক আগে পর্যন্তও কোস্টারিকার জাতীয় শিবিরে থাকা কার্লোস বললেন, “আমাদের টিমের ফিটনেস আর স্ট্র্যাটেজি। কোচের সঙ্গে আমার যে সমস্যাই থাকুক, সেটা এখানে কোনও বিষয় নয়। ইতালিকে আমাদের টিম তো বিভ্রান্ত করে দিল শুধু অফসাইড ট্র্যাপে ফেলেই। এটার জন্য ডিফেন্ডারদের পারফরম্যান্সের সঙ্গে-সঙ্গে কোচের স্ট্র্যাটেজিরও প্রশংসা করতে হবে। ইতালি আর উরুগুয়ে দু’টো ম্যাচ আমাদের টিম দু’রকম ভাবে খেলেছে। কোচ বিপক্ষকে নিজের হাতের তালুর মতো না জানলে এটা হয় না। ট্রেনিংয়েও এ রকম অফসাইড-ফাঁদ পাতার প্র্যাকটিস হতো। সবচেয়ে বড় কথা, বিপক্ষে ইতালির মতো দলকে দেখেও ভয় পায়নি আমার বন্ধুরা।”

দুই বিশ্বচ্যাম্পিয়নের বিরুদ্ধে জয়। কোনটা বেশি উপভোগ করলেন? কার্লোস বললেন, “দু’টো দু’রকম ম্যাচ ছিল। এবং দু’টো টিমই যথেষ্ট শক্তিশালী।”


কোস্টারিকার এই উৎসবে তিনিও থাকতে পারতেন।

কোচের সঙ্গে বিরোধ থাকলেও তাঁর সম্পর্কে কোনও কড়া মন্তব্য করছেন না কার্লোস। বরং নিদের দেশের দু’টো ম্যাচ দেখার পর তাঁর মনে হচ্ছে, বেশ কয়েক জন এমন ফুটবলার তাঁদের টিমে আছেন যাঁরা অঘটন ঘটাতেই পারেন। তাঁরা কারা? “প্রথমেই নাম করব টিমের সবচেয়ে জুনিয়র ফুটবলার তেজেদা-র। মাঝমাঠ থেকে প্রচুর বল সাপ্লাই দিচ্ছে ছেলেটা। রুইজ, ক্যাম্পবেল, দুয়ার্তের কথাও বলব। তবে আমাদের দলের আসল শক্তি টিম-গেম।”

কিন্তু নক আউটে কোস্টারিকা কত দূর যেতে পারবে বলে মনে হয়? সামান্য ভেবে কালোর্স বললেন, “কোস্টারিকা যা খেলছে তাতে কোয়ার্টার ফাইনাল যেতেই পারে। তার পর আরও কঠিন লড়াই। দেখা যাক। আমাদের দেশের মানুষের প্রত্যাশা কিন্তু বেড়ে গিয়েছে। টিম সেমিফাইনাল পর্যন্ত যাবে সবাই ভাবছে। সেটা হলে বিশাল ব্যাপার হবে।”

এ রকম সময় দলে না থাকার জন্য কি দুঃখটা আরও বেড়ে গিয়েছে? “তা তো একটু হবেই। কলকাতা ছেড়ে অস্ট্রেলিয়ায় খেলতে গিয়েছিলাম আমাদের জাতীয় কোচ পিন্টো বলেছিলেন বলেই। অস্ট্রেলিয়ায় খেললে সুযোগ দেবেন বলেছিলেন বিশ্বকাপে। মাস খানেক অনুশীলন করলাম টিমের সঙ্গে। নিশ্চিত ছিলাম সুযোগ পাব। তবে কী আর করা যাবে,” দীর্ঘ ফোনালাপে এই প্রথম যেন কার্লোসের গলা থেকে ঝরে পড়ে আক্ষেপ!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement