ক্রিকেটের কসাই আর ‘নিহত’ ফাটকায় শুরুতেই আতঙ্কের ইঙ্গিত

আচ্ছা সচিনের পর এ বার আপনিও নাকি বই লিখছেন? প্রশ্নটা করলেই তীব্র অস্বস্তিতে ভরে যাচ্ছে টিভি বক্সে বসা রাহুল দ্রাবিড়ের মুখ! তাঁর যেন মনে হচ্ছে কেউ সূক্ষ্ম ইঙ্গিত ভাসিয়ে দিচ্ছে, বদলাটা তুমি কত তাড়াতাড়ি নেবে? সেই অস্বস্তির শরীরী ভাষাটা ঠিক কোন মাত্রার? ওহ্, আপনার জানার জন্য কোনও ছবি দেখার দরকার নেই। ডেভিড ওয়ার্নারের কাছে বেধড়ক মার খাওয়া এ দিনের বরুণ অ্যারনকে ইউটিউবে এক ঝলক দেখে নিলেই চলবে! প্রথম টেস্ট ম্যাচে ভারতের পক্ষে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা নেওয়ার কথা ছিল বরুণের। প্রথম দিন সতেরো ওভার পিছু তাঁর সাড়ে পাঁচ রান দেওয়া থেকেই পরিষ্কার, অন্তত টেস্ট ম্যাচে একটা তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা তিনি নেওয়ার দিকে।

Advertisement

গৌতম ভট্টাচার্য

অ্যাডিলেড শেষ আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:৫২
Share:

হিউজ-ঘাতক বাউন্সারকেও স্বাগত জানাল অ্যাডিলেড ওভাল। ছবি: গেটি ইমেজেস

আচ্ছা সচিনের পর এ বার আপনিও নাকি বই লিখছেন?

Advertisement

প্রশ্নটা করলেই তীব্র অস্বস্তিতে ভরে যাচ্ছে টিভি বক্সে বসা রাহুল দ্রাবিড়ের মুখ! তাঁর যেন মনে হচ্ছে কেউ সূক্ষ্ম ইঙ্গিত ভাসিয়ে দিচ্ছে, বদলাটা তুমি কত তাড়াতাড়ি নেবে?

সেই অস্বস্তির শরীরী ভাষাটা ঠিক কোন মাত্রার? ওহ্, আপনার জানার জন্য কোনও ছবি দেখার দরকার নেই। ডেভিড ওয়ার্নারের কাছে বেধড়ক মার খাওয়া এ দিনের বরুণ অ্যারনকে ইউটিউবে এক ঝলক দেখে নিলেই চলবে!

Advertisement

প্রথম টেস্ট ম্যাচে ভারতের পক্ষে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা নেওয়ার কথা ছিল বরুণের। প্রথম দিন সতেরো ওভার পিছু তাঁর সাড়ে পাঁচ রান দেওয়া থেকেই পরিষ্কার, অন্তত টেস্ট ম্যাচে একটা তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা তিনি নেওয়ার দিকে।

ফিল হিউজের স্মৃতিবিজড়িত ক্রিকেট-কবিতার ব্যতিক্রমী দিনে জোড়া অ্যাডভেঞ্চার করেছিল ভারত। কবির নিহত স্বপ্নের মতোই তা লুটোচ্ছে পাশের টেরেন্স নদীতে। প্রথম, গোড়া থেকে ওয়ার্নারকে রাউন্ড দ্য উইকেট বোলিং করা। দুই, অশ্বিনের অভিজ্ঞতাকে পেছনে ফেলে দিয়ে আনকোরা কর্ণ শর্মাকে নিয়ে ফাটকা।

টেস্ট ম্যাচ শুরু হচ্ছে একে ৬৩ সেকেন্ডের অপার্থিব হাততালিতে। তার পর আবার প্রথম বল থেকেই কি না রাউন্ড দ্য উইকেট আসছে ডান হাতি বোলার। চোখে সইতেও কেমন সময় লাগে। আর সেটা লাগার আগেই ওয়ার্নার তাঁর হস্তশিল্প শুরু করে দিয়েছেন। শুরুর দিকটা শামি আর বরুণ দু’জনেই অফস্টাম্পের অনেক বাইরে বাইরে তাঁকে বল করে যাচ্ছিলেন। সম্ভবত লক্ষ্য ছিল, স্লিপ কর্ডনে তাঁকে বেঁধে ফেলা। কিন্তু বোলারদের লাইনের ব্যাপক গণ্ডগোলে ওয়ার্নারের সেই ব্যাটিং-কসাই রূপটাই চরম ব্যতিক্রমী দিনের ক্রিকেটে সামনে চলে এল।

ওয়ার্নার নাকি নেটে বল না দেখে সিডনি মাঠে বন্ধুর লুটিয়ে পড়া দেখছিলেন। তাই একটানা নেট করতে পারেননি। আজ নিশ্চয়ই বন্ধু নয়, ক্রিকেট বলকে ফুটবলের আকারে দেখছিলেন। নইলে প্রথম তিন ওভারে তিনি সাতটা বাউন্ডারি কী করে নিলেন? তখন টেস্ট ক্রিকেটের প্রথম দিন প্রাক্-লাঞ্চ খেলা হচ্ছে, না ওয়ান ডে-র পাওয়ার প্লে? সব গুলিয়ে যাচ্ছে।

জানা কথা এ বার বাউন্সার আসবে। ডিপ ফাইন লেগ আর ডিপ স্কোয়ার লেগে তো পেয়াদা অনেকক্ষণ ধরেই দাঁড়ানো। কিন্তু বোঝা যাচ্ছে না বাউন্সারকে কী ভাবে নেবে মাঠের লোক? আজ তো একটা আধিদৈবিক দিন! যা-ই ঘটছে অন্য মাপকাঠিতে তার হিসেবনিকেশ হচ্ছে। আর বাউন্সার হল কি না ফিলের মৃত্যুঘাতক।

বরুণ অ্যারনের শর্ট পিচ্ডকে কিন্তু জোরালো হাততালিতে স্বাগত জানানো হল। এর পর শামি একটা দিলেন, সেটাকেও। ভাবাই যায় না ক্রিকেট মাঠে বাউন্সার পড়লে হাততালি হচ্ছে। যেন ফিল চলে গিয়েছে ঠিকই, কিন্তু ডেলিভারিকে আমরা রক্ষা করব। তার ভরণপোষণ জোগাব!

মাইকেল ক্লার্ককে নড়বড়ে দেখাচ্ছিল। বোঝাই যাচ্ছে যথেষ্ট প্র্যাকটিস নেই। কিন্তু পোড়খাওয়া ব্যাট তিনি। ঢিলেঢালা বোলিংয়ের সুবাদে ঠিক খেলা ধরে ফেললেন। যে ভাবে তিনি আর ওয়ার্নার ব্যাট করছিলেন, পিঠের নীচ দিকের প্রচণ্ড ব্যথায় অধিনায়ক হসপিটাল চলে যেতে বাধ্য না হলে প্রথম দিনেই ভারতের ম্যাচ ভাগ্য হসপিটালে পাঠিয়ে দিতেন!

স্পেশ্যালিস্ট চার বোলারের দু’জন এত বাজে বল করলে অধিনায়ক কী করতে পারেন। তা-ও অ্যাডিলেডের মতো ব্যাটিং উইকেটে টস হেরে যাওয়ার পর। অ্যাডিলেডের স্থানীয় ক্রিকেট প্রবাদ বলে, তিরিশ ডিগ্রি তাপমাত্রার মধ্যে এখানে টস হারা মানে খালি পায়ে পিচের রাস্তা দিয়ে এক কিলোমিটার হেঁটে যাওয়া! অভিজ্ঞ অশ্বিনকে না খেলিয়ে কর্ণ শর্মাকে টেস্ট টুপি দিলেন কোহলি। এই ভেবে যে, নেট এবং সফরের দু’টো প্রস্তুতি ম্যাচেই অশ্বিনের চেয়ে অনেক ভাল বল করেছেন সাতাশ বছরের কর্ণ। লেগস্পিনার বাউন্স ভরা পিচে বাড়তি সুযোগ পাবে। প্লাস তাঁর সম্পর্কে যথেষ্ট জানে না অস্ট্রেলিয়া। এটা বিরাট ফাটকা।

যা এ দিন সফল না হওয়ার অন্যতম কারণ আইপিএল। বেদী-প্রসন্নর যুগে ভারতীয় স্পিনারদের বিদেশিদের থেকে যথাসম্ভব সরিয়ে রাখা হত। যাতে তাঁদের রহস্যময়তা কমে না যায়। আইপিএল যুগে সে সব ভাবনা অনিবার্য নির্বাসনে গিয়েছে। সানরাইজার্স হায়দরাবাদের নেটে ওয়ার্নার এত খেলেছেন কর্ণকে যে, হাত দেখেই তাঁর গুগলি পড়তে পারেন। ফালা-ফালা করে দেওয়া তীব্রতম ড্রাইভ আর কাটে একাই তিনি কোহলির দলকে ম্যাচের বাইরে করে দিচ্ছিলেন। ১৬৩ ডেলিভারিতে ১৪৫ রানের মোচ্ছব। প্রায় বল পিছু রান!

ভারত শেষ বেলায় ম্যাচে ফিরল। ইয়ান চ্যাপেল চ্যানেল নাইনে খুব প্রশংসা করলেন ঋদ্ধিমানের উইকেটকিপিংয়ের। বললেন, “ধোনির ইংল্যান্ডে কিপিং চোখে দেখা যায়নি। এই ছেলেটা কিন্তু এখনও অবধি খুঁতহীন।” শেন ওয়ার্ন বললেন, “কোহলি ভাল লড়াই দিচ্ছে। ওকে লাগছেও খুব টগবগে। ওয়ার্নার ক্রিজে থাকার সময়ও লড়াই ছেড়ে দেয়নি।”

সবই ঠিক। কিন্তু চারশো হয়ে গেলে অস্ট্রেলিয়ান উইকেটে সেটা সামলানোর বাড়তি নার্ভ লাগবে। উইকেট যতই বোলার-পিপাসু হোক, নার্ভটা না বরুণ অ্যারনের মতো ব্যাটসম্যানদেরও ফেল করে, এটাই এখন ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীর আতঙ্ক! তার নিকুচি করেছে ৬৩ নিয়ে মাতামাতিতে!

অস্ট্রেলিয়া প্রথম ইনিংস

রজার্স ক ধবন বো ইশান্ত ৯

ওয়ার্নার ক ইশান্ত বো কর্ণ ১৪৫

ওয়াটসন ক ধবন বো অ্যারন ১৪

ক্লার্ক আহত অবসৃত ৬০

স্মিথ ব্যাটিং ৭২

মার্শ ক কোহলি বো অ্যারন ৪১

লিয়ঁ বো শামি ৩

হাডিন ক ঋদ্ধিমান বো শামি ০

অতিরিক্ত ১০

মোট ৩৫৪-৬

পতন: ৫০, ৮৮, ২০৬ (ক্লার্ক), ২৫৮, ৩৪৫, ৩৫২, ৩৫৪

বোলিং:

শামি ১৭.২-১-৮৩-২, অ্যারন ১৭-১-৯৫-২, ইশান্ত ২০-৪-৫৬-১, কর্ণ ২৩-১-৮৯-১, বিজয় ১২-৩-২৭-০।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement