রিয়াল মাদ্রিদ-৩ (রোনাল্ডো-পেনাল্টি, পেপে, বেঞ্জিমা)
বার্সেলোনা-১ (নেইমার)
রিয়াল মাদ্রিদ থেকে এ বার ফুটবল বিশ্ব একটা শিক্ষা নিতে পারে। বড় ম্যাচ কী ভাবে বার করতে হয়, তার শিক্ষা।
শনিবার ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোদের খেলা দেখে এক কথায় স্রেফ স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছি। যে কোনও বড় ম্যাচে সাধারণত দেখা যায়, দু’টো টিমই সতর্ক ভাবে শুরু করে। শুরু থেকে লাগামছাড়া আক্রমণে না গিয়ে চেষ্টা করে কাউন্টার অ্যাটাকের রাস্তায় চলে যেতে। আমি বলতে চাইছি, বড় ম্যাচে দু’টো টিমই সাধারণত টেনশনে থাকে একটু। কিন্তু রিয়াল তো বড় ম্যাচে মানসিকতার সংজ্ঞাটাই পাল্টে দিল!
যে সংজ্ঞা ব্রাজিল বা আর্জেন্তিনাও এখন মুখোমুখি হওয়ার আগে ধার নিতে পারে। এক বার ভেবে দেখুন, তিন মিনিটে নেইমারের গোল খেয়ে গিয়ে টিমটা তিন গোল দিয়ে ফিরল! আর শুধু গোল দিয়ে আজকের রিয়ালকে বিচার করলে ভুল হবে। বিচার করতে হবে, ওদের নব্বই মিনিটের খেলা দিয়ে। সোজাসুজি বলছি, নেইমারের গোলটা ছাড়া কিছু করতে পারেনি বার্সেলোনা। গোলটাও হয় না পেপে ঠিকঠাক কভারিং করলে। না প্রথমার্ধে, না দ্বিতীয়ার্ধে কখনওই রিয়াল মাদ্রিদ মেসির বার্সেলোনাকে আজ দাঁড়াতে দেয়নি।
তিনটে জায়গায় আসলে বার্সেলোনা ম্যাচটা হেরে গেল।
রোনাল্ডো-শাসন দেখলেন মেসি। ছবি: এএফপি
প্রথমত, জঘন্য ডিফেন্স। দানি আলভেজ বা জেরার পিকে, দু’জনের অবস্থাই ভয়াবহ। না পারল রিয়াল স্ট্রাইকারদের গতি ম্যানেজ করতে, না পারল ঠিকঠাক একটা বল ক্লিয়ার করতে। পিকে আর আগের পিকে নেই। অনেক স্লথ। পিকে দিয়ে আর চলবে না। আলভেজ দিয়েও আর না। বার্সার দ্বিতীয় সমস্যা, এখনও তিকিতাকার দুনিয়ায় পড়ে থাকা। ইনিয়েস্তা-জাভিরা একটা সময় যে ফুটবলটা খেলত, যে ভাবে বার্সা মাঝমাঠ ওরা নিয়ন্ত্রণ করত সেটা এখন আর পারবে কী ভাবে? বয়স তো বেড়ে গিয়েছে জাভিদের। রিয়াল আজ ওদের সেন্ট্রাল মিডফিল্ডে খেলতে দিল। ইনিয়েস্তারা উঠলও বল নিয়ে। কিন্তু উঠে দেখল আট-ন’জন রিয়াল ফুটবলার অপেক্ষা করছে বলটা কেড়ে নেওয়ার জন্য। আর কেড়ে নিয়ে কাউন্টার অ্যাটাকে ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছে বার্সাকে। আগের গতিতে ইনিয়েস্তারা এখন আর পাস খেলতে পারছে না। তাই বল পজেশন বেশি থেকেও লাভ হচ্ছে না। আর ধ্বংসের তিন নম্বর কারণ, ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো।
প্লেয়ার রোনাল্ডো নয়।
ক্যাপ্টেন রোনাল্ডো।
ফুটবলার রোনাল্ডোর চেয়েও এ দিন অসাধারণ খেলেছে ক্যাপ্টেন রোনাল্ডো। হাতে আর্মব্যান্ড ছিল না, কিন্তু অলিখিত অধিনায়ক ও-ই ছিল। তিন মিনিটে গোল খেয়ে যাওয়ার পরেও টিমকে ঝিমিয়ে পড়তে দেয়নি। ক্রমাগত তাতিয়েছে, চেষ্টা করেছে পুরো মাঠ জুড়ে নিজে খেলার। আসলে বড় ম্যাচ জিততে গেলে একটা বাড়তি খিদে লাগে, যেটা রোনাল্ডোর থেকে পেলাম। রোনাল্ডো প্রচণ্ড গতিতে বল নিয়ে ঢুকেছে দরকারে, দরকারে মোক্ষম সমস্ত পাস বাড়িয়েছে সতীর্থদের। বল ধরা থেকে ছাড়া কোথাওই নিজের ধারেকাছে থাকতে দেয়নি মেসিকে। মেসি বলতে গেলে কোনও প্রভাবই ফেলতে পারেনি ম্যাচে। ওকে বল নিয়ে ঘুরতে দেয়নি রিয়াল ডিফেন্ডাররা। নেইমারও শুধু গোলটা বাদে আহামরি কিছু খেলেনি। সুয়ারেজ এত দিন পরে নেমে চেষ্টা করেছে, কিন্তু তাতে কাঁপুনি ধরেনি রিয়াল ডিফেন্সে। বার্সার লাতিন আমেরিকার ত্রিফলা পরিষ্কার ফ্লপ। বরং রিয়ালের হয়ে কলম্বিয়ার হামেস রদ্রিগেজ খুব ভাল খেলেছে। আর বলব, মার্সেলোর কথা। ব্রাজিল ডিফেন্ডার নেমেছিল লেফট ব্যাকে। কিন্তু খেলেছে পুরো মাঠটা জুড়ে। রোনাল্ডো-মার্সেলো-রদ্রিগেজকে সামলানোর ক্ষমতা পিকেদের ছিল না।
তা-ও গ্যারেথ বেল আজ নামেনি। ওর গতির সামনে পড়লে পিকেদের কী হাল হত কে জানে।
রিয়াল মাদ্রিদ
গোল ৩, শট ১৮, গোলে শট ৬ বলদখল ৪২%, হলুদ কার্ড ২, লাল কার্ড ০
বার্সেলোনা
গোল ১, শট ১৬, গোলে শট ৫, বলদখল ৫৮%, হলুদ কার্ড ৪, লাল কার্ড ০