অবিশ্বাস্য জয়ে উত্তাল নাইট
সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট আর টুইটারের যুগে যেখানে প্রায় যে কোনও ইস্যুতেই প্রতিক্রিয়ার ঝড় ওঠে, সেখানে ক্রিস লিনের অপার্থিব ক্যাচে উঠবে না? অগুনতি পোস্ট-এর ঝড়ে সবচেয়ে সেরাটা বোধহয় ‘ইটস্ দ্য ম্যাডেস্ট... ব্যাডেস্ট ক্যাচ!’ কাছাকাছি আসছে ‘আইপিএল ইতিহাসের সেরা ক্যাচ!’ কিংবা ‘এ বারের টুর্নামেন্টের সর্বোত্তম উত্তেজক মুহূর্ত!’
ক্যাচের মালিক নিজে কী বলছেন?
“আরে আমি তো উঁচু হিটটা আমার দিকে আসছে দেখতে গিয়ে বাউন্ডারি লাইনের সামান্য ভেতরে পা পিছলে পড়েই গিয়েছিলাম... ততক্ষণে ক্যাচটা আমার কাছে এসে পড়েছে... সেই মুহূর্তে ভাবছিলাম যদি আমি এখন উঠে দাঁড়াতে গিয়ে ক্যাচটা ফস্কাই, তা হলে বোকার মতো দেখাবে। সে জন্য নিজের ওই নিচু অবস্থান থেকেই লাফ মেরে ক্যাচটা ধরেই শরীরটা বাউন্ডারি লাইনের ভেতরে রাখার জন্য এক হাতে ভর দিয়ে মাটিতে পড়লাম,” এক সঙ্গে তিনটে পুরস্কার নিয়ে টিভির সামনে ম্যাচ শেষে বলছিলেন ক্রিস লিন।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ ছাড়াও ক্রিস লিন ম্যাচে সর্বাধিক ছক্কা (৩) মারার জন্য এবং সবচেয়ে ‘কুল ক্রিকেটার’-এর এক লাখ টাকা করে আরও দু’টো চেক পকেটস্থ করলেন এ দিন।
আইপিএলে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মাত্র দ্বিতীয় ম্যাচ খেলা ক্রিস লিন।
হ্যাঁ, দু’বছর আগে ডেকান চার্জাসের হয়ে একটিমাত্র ম্যাচ এবং গত বার সানরাইজার্স হায়দরাবাদে ডাগআউটে বসেই গোটা টুর্নামেন্ট কাটিয়ে দেওয়া ক্রিস লিনকে এ বার নাইটরা তাদের তৃতীয় ম্যাচেই সুযোগ দিয়ে যত না বিগ ব্যাশে ব্রিসবেন হিট-এর হয়ে খেলা বছর চব্বিশের অস্ট্রেলীয়কে অবাক করে দিয়েছে, তার চেয়ে বেশি চমকে দিয়েছে আইপিএলপ্রেমীদের। কিন্তু সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন হয়ে থাকল কেকেআর ক্যাপ্টেনের ক্রিকেট-মস্তিষ্কের।
গৌতম গম্ভীর হয়তো সে জন্যই ম্যাচ শেষে একগাল হেসে বলে দিলেন, “আমাদের ব্যাটিং অগোছাল হচ্ছে। ক্রিসের ইনিংসটা (৩১ বলে ৪৫) সেখানে খানিকটা মলমের কাজ করেছে। ওর জন্যই এ দিন প্রথম দশ ওভারে আমাদের ব্যাটিংকে আগের চেয়ে উন্নত দেখিয়েছে। তবে আসল হচ্ছে ওর ওই ক্যাচটা। আক্ষরিক অর্থে অবিশ্বাস্য। অন গ্রহের ফিল্ডিং!”
এবং সে জন্যই বাউন্ডারি লাইনে কোনও ক্রিকেটারের ঘাড়ের উপর তাঁর বাকি দশ সতীর্থই ঝাঁপিয়ে পড়ছে-র মতো বিরলতম মুহূর্ত এ দিন শারজা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু ইনিংসের শেষ ওভারের চতুর্থ ডেলিভারির পর সৃষ্টি হয়েছিল! ম্যাচ শেষের অনেক পরে ক্রিস গেইলের টুইট! হয়তো ওই অভূতপূর্ব ক্যাচে হারের ধাক্কা সামলাতে সময় লেগেছে প্রথম তিন ম্যাচের পরেও ম্যাচফিট হতে না পারা আরসিবি-র তারকা ওপেনারের। ‘ক্যাচেস উইন ম্যাচেস। ক্যাচই ম্যাচ জেতায়। ক্রিস লিনের চোখধাঁধানো ক্যাচে আমরা জেতা ম্যাচ হারলাম।’ কেকেআরের সরকারি টুইটার অ্যাকাউন্টে গভীর রাতে পোস্ট “বিনয় কুমারের ওই একটা ওভারেই সব কিছু নির্ভর করছিল। যেখানে হঠাৎই আমরা দেখলাম লিনস্যানিটি!’
পুরস্কারের হ্যাটট্রিক করা ক্রিস লিন সম্পর্কে তাঁর অধিনায়কের সার্টিফিকেট, “কে কবে শুনেছে, একটা ক্যাচের জন্য এক জন ম্যাচের সেরা হয়েছে! ক্রিস লিন হল সেই বিরল ক্রিকেটার। কুল ক্রিকেটারের চেকটাও ও যোগ্য ক্রিকেটার হিসেবে পেয়েছে। নিজের সমস্ত স্নায়ুকে একেবারে ঠান্ডা না রাখতে পারলে ও রকম ভাবে ক্যাচ ধরা যায় না।”
যে ক্যাচের বর্ণনায় সেই আবার সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটের দ্বারস্থ হতে হচ্ছে ‘এ রকম মুহূর্ত সাধারণত অলিম্পিক জিমন্যাস্টিক্সেই দেখা যায়। ক্রিকেটে বোধহয় এই প্রথম দেখা গেল!