দক্ষিণ আফ্রিকা বোলিংকে রুখলেন রাহানে।
গত দু’সপ্তাহ ধরে চলা যাবতীয় নাটকের পর কোটলা টেস্টের প্রথম দিনে দুটো ব্যাপারের উপর নজর ছিল ক্রিকেট দুনিয়ার।
এক, কোটলার বাইশ গজ কী রকম ব্যবহার করে। দুই, ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা নিজেদের ডিজাইনার পিচে ব্যাটিংটা কী রকম করেন।
প্রথমটা ‘স্টার মার্কস’-সহ উতরে গেলেও দ্বিতীয়টা কিন্তু টেনেটুনে পাশ। সেটাও অবশ্য এক জনের ব্যাটিংয়ের দৌলতে।
বিরাট কোহলি টস জিতলেন। প্রথম ব্যাটিং নিলেন। এবং মোহালি-নাগপুরের চিত্রনাট্য মেনে ভারতীয় ব্যাটিংয়ে ধস নামাও শুরু হল। একটা সময় চায়ের ঠিক পরপর সাত উইকেটে ১৯৮ হয়ে যায় ভারত। মনে হচ্ছিল, এ বারও বুঝি প্রথম দিনে শেষ হয়ে যাবে ইনিংস। হল না, তার জন্য এক জনই দায়ী। অজিঙ্ক রাহানে (৮৯ ব্যাটিং)।
মোহালি এবং নাগপুরের চিত্রনাট্যের সঙ্গে আরও একটা অমিল আছে কোটলার প্রথম দিনের। সেটা হল, রাহানের শট নির্বাচনে। ওই দুটো টেস্টে শরীর থেকে দূরে, পেসারদের শট খেলতে গিয়ে আউট হন রাহানে। এ দিন সেই ভুলটা আর করেননি। তিন উইকেটে ৬৬-তে ব্যাট করতে এসে রাহানে নিজের সেই ব্যাটিংটা তুলে ধরেন, যেটা তাঁকে গোটা বিশ্বে রান করতে সাহায্য করেছে।
কী পরিবর্তন হয়েছে রাহানের ব্যাটিংয়ে? ব্যাটিং কোচ সঞ্জয় বাঙ্গার এ দিন সাংবাদিক সম্মেলনে এসে বলে গেলেন, ‘‘রাহানে আগের দুটো টেস্টের ভুলটা বুঝতে পেরেছিল। তাই এ বার ক্রিজে থাকার মানসিকতা নিয়ে মাঠে নেমেছিল। প্রথম দিকে ঝুঁকি নেওয়া সব শট ছেঁটে ফেলে লুজ বলের জন্য অপেক্ষা করেছিল।’’
এ দিন রাহানের ব্যাটিংয়ে আরও ছোট একটা পরিবর্তন চোখে পড়েছে। সাধারণত একটু লো বাউন্সের উইকেটে যেটা ব্যাটসম্যানদের অস্ত্র হয়ে থাকে। একটু ঝুঁকে থেকে, ব্যাকলিফট একেবারে কমিয়ে স্পিন খেলা। রাহানেকেও এ দিন দেখা গেল সেই স্ট্র্যাটেজি নিয়েছেন। স্পিনারদের খেলার সময় ব্যাট প্রায় তুলছিলেনই না। আগের ইনিংসগুলোয় যতটা উপর থেকে ব্যাট নামিয়ে উইকেট ট্যাপ করছিলেন, এ দিন অনেক নিচু থেকে ব্যাট ট্যাপ করতে দেখা যায় তাঁকে। বাঙ্গার মনে করিয়ে দিয়ে গেলেন, ‘‘দুটো টেস্টে ব্যর্থ হওয়ার পর রাহানে যে মানসিকতার পরিচয় দিল, সেটা এক কথায় অনবদ্য।’’
ভারতকে প্রথম ধাক্কাটা সামলাতে সাহায্য করেছিল যে জুটি (৭০ রান), তার এক জন অপরাজিত থাকলেও অন্য জন দুর্ভাগ্যের শিকার হয়ে আউট হলেন এ দিন। কোহলি (৪৪) জোরালো সুইপ করেছিলেন। কিন্তু ফরোয়ার্ড শর্ট লেগে দাঁড়ানো ফিল্ডারের থাইয়ে লেগে বল উঠে গিয়ে উইকেটকিপারের হাতে চলে যায়। পরে সুনীল গাওস্কর বলছিলেন, কী ভাবে এ রকম দুর্ভাগ্যের শিকার হয়েছিলেন তিনিও। ‘‘সেটা ’৭৪-এ ওয়েস্ট ইন্ডিজ টেস্ট। আমি অ্যান্ডি রবার্টসকে ফ্লিক করলে বলটা ভিভের গায়ে লেগে নন স্ট্রাইকারের কাছাকাছি উঠে যায়। ভিভ ওই অবস্থায় নিজেকে ছুড়ে দিয়ে নন স্ট্রাইকারের সামনে ক্যাচটা তুলে নেয়।’’ গল্প শেষ করে গাওস্করের মন্তব্য, ‘‘মাঝে মাঝে আমরা যখন ব্যাট হাতে নামি, ভাগ্য আমাদের সঙ্গে থাকে না। কোহলি কিন্তু মোটেই অফ ফর্মে নেই। ওকে যথেষ্ট ভাল দেখিয়েছে এ দিন।’’
ভাল দেখাচ্ছে কোটলার পিচকেও। এখন পর্যন্ত সিরিজের সেরা পিচ বলাই যায়। বাউন্স আছে, যদিও একটু কম-বেশি। পেসাররা সাহায্য পেয়েছেন। যেমন কাইল অ্যাবট। স্পিনাররাও। ডেন পিয়েড সিরিজের প্রথম টেস্ট খেলতে নেমে চারটে তুলে নিলেন। অ্যাবট নিলেন তিনটে। সব মিলিয়ে যা পিচ, তাতে আইসিসি বা অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটারদের রক্তচক্ষু দেখানোর সম্ভাবনা নেই।
কিন্তু রক্তচক্ষু এক জনের জন্য অবশ্যই থাকা উচিত। কোহলি তাঁর পছন্দের ফর্মুলা ছেড়ে শেষ দুটো টেস্টে ছয় ব্যাটসম্যানে খেলছেন। কিন্তু তিনটে ইনিংসে সুযোগ পেয়েও ব্যর্থ রোহিত শর্মা। এ দিন করলেন ১। কিন্তু স্কোরের চেয়েও জঘন্য হল রোহিতের আউট হওয়ার ধরনটা। আগের বলেই তাঁর ক্যাচ পড়েছিল। পরের বলটাই তুলে মারতে গিয়ে ক্যাচ।
সবাই বদলে যাচ্ছে। রোহিত শর্মা কবে বদলাবেন?
ভারত
প্রথম ইনিংস
বিজয় ক আমলা বো পিয়েড ১২
ধবন এলবিডব্লিউ পিয়েড ৩৩
পূজারা বো অ্যাবট ১৪
কোহলি ক ভিলাস বো পিয়েড ৪৪
রাহানে ব্যাটিং ৮৯
রোহিত ক তাহির বো পিয়েড ১
ঋদ্ধিমান বো অ্যাবট ১
জাডেজা ক এলগার বো অ্যাবট ২৪
অশ্বিন ব্যাটিং ৬
অতিরিক্ত ৭
মোট ২৩১-৭।
পতন: ৩০, ৬২, ৬৬, ১৩৬, ১৩৮, ১৩৯, ১৯৮।
বোলিং: মর্কেল ১৭-৫-৪০-০, অ্যাবট ১৭-৬-২৩-৩,
পিয়েড ৩৪-৫-১০১-৪, তাহির ৭-১-৩৬-০,
এলগার ৫-০-১৫-০, দুমিনি ৪-০-১২-০।
দিনের তিন মেজাজের ছবি প্রেম সিংহ ও পিটিআইয়ের ক্যামেরাবন্দি।