ফুটবল-হকির পরে কি বাইশ গজেও এ বার কমলা-জার্সির ঝলকানির দিন আগত? বিশ্ব ফুটবলে ডাচ-শক্তি নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। হকিতেও নেদারল্যান্ডস বহু বারের বিশ্বসেরা। সোমবার চট্টগ্রামের মাঠের বাইশ গজেও নেদারল্যান্ডস রীতিমতো চমকে দিল। বিশ্ব টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ইংল্যান্ডকে ৪৫ রানে ধ্বংস করে।
ধ্বংস, কেননা মুদাস্সর বুখারি কিংবা লোগান ফান বিকের মতো অনামী মিডিয়াম পেসারদের সামনে ইংল্যান্ড টি-টোয়েন্টিতে তাদের দ্বিতীয় সর্বনিম্ন রানে ভেঙে পড়ল। ১৩৩ রান তাড়া করতে নেমে ১৭.৪ ওভারে অল আউট ৮৮। বিক ২ ওভারে মাত্র ৯ রান দিয়ে ৩ উইকেট তুলে নিলেও ম্যাচের সেরা বুখারি (৩-১২), যে-হেতু হেলস-লাম্বের মতো ইংরেজ টপ অর্ডার তাঁর বলে বেসামাল। ব্রেসনানের রান আউটের পিছনেও বুখারি। বিপক্ষ অধিনায়ক ব্রড-ও তাঁর শিকার। পাক পঞ্জাবের গুজরাটে জন্মগ্রহণ করা ৩০ বছরের বুখারির ক্রিকেটার হয়ে ওঠা নেদারল্যান্ডসেই। ২৭ ম্যাচে ২৮ উইকেট নিয়ে তিনিই ডাচদের আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ইতিহাসে সেরা বোলার। যাঁর পেশা বেলজিয়ামের শিফোল্ড বিমানবন্দরে বার্গারের দোকান চালানো।
২০০৯ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে উদ্যোক্তা ইংল্যান্ড উদ্বোধনী ম্যাচে লর্ডসে হেরেছিল নেদারল্যান্ডসের কাছে। যদিও শেষ বলে ডাচদের সেই জয়কে এত দিন ‘ফ্লুক’ হিসেবে দেখা হত ক্রিকেটমহলে। সোমবারের পর কিন্তু টুইটারে ইংরেজ ক্রিকেটকেই বরং তুলোধনা চলছে। নাসের হুসেন লেখেন, “জাইলস যেন এর পর ইংল্যান্ডের চিফ কোচের চাকরির ইন্টারভিউয়ে ওর সিভি-তে এটা না লেখে যে, শেষ ম্যাচে ওর দল নেদারল্যান্ডসের কাছেও হেরেছে!’ অ্যান্ড্রু মিলার লিখছেন, “মানসিক ভাবে ইংল্যান্ড ক্রিকেট দল পাহাড় থেকে নামতে নামতে সমুদ্রপৃষ্টে এসে পড়েছে। কাসপিয়ান সি-র উপরে। যাক, ছেলেরা বাড়ির কাছাকাছি এসে পড়েছে!” অধিনায়ক ব্রড ম্যাচ শেষে বলেছেন, “আমাদের পারফরম্যান্স ভয়াবহ।” অন্তর্বর্তীকালীন কোচ জাইলস বলেছেন, “সমস্ত ইংরেজ সমর্থকদের কাছে আমরা ক্ষমাপ্রার্থী এই গ্রীষ্মে আমাদের পারফরম্যান্সের জন্য।” চট্টগ্রামে ইংল্যান্ডের দুঃস্বপ্নের মরসুম শেষ হল, ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে টেস্ট-ওয়ান ডে-টি টোয়েন্টি মিলিয়ে ১৩ ম্যাচে ১২ হার, ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে টি-টোয়েন্টি সিরিজ হার এবং বিশ্বকাপে মাত্র একটা ম্যাচ জিতে লজ্জার বিদায়ের মাধ্যমে। ডাচদের কাছে হারের পর ব্রিটিশ মিডিয়া লিখছে, ‘ইংল্যান্ড আর ইউরোপিয়ান ক্রিকেটেও সেরা নয়!’
নেদারল্যান্ডসের এই বিশ্বকাপে পারফরম্যান্স সত্যিই চমকপ্রদ। ভাগ্য একটু সহায় হলে তারা হয়তো সেমিফাইনাল চলে যেতেও পারত। দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে ডাচরা মাত্র ৬ রানে হেরে গিয়েছিল। আমলা-ডে’ভিলিয়ার্সদের ২০ ওভারে ১৪৫-৯-এ আটকে রেখে! ওই ম্যাচে ডাচ মিডিয়াম পেসার আহসান মালিক জামিলের ৫-১৯ শ্রীলঙ্কা ম্যাচের আগে পর্যন্ত চলতি বিশ্ব টি-টোয়েন্টিতে সেরা বোলিং। টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ উইকেটপ্রাপকও এখনও জামিল-ই। ১২ উইকেট। কোয়ালিফাইং থেকে মূলপর্বে উঠতে আয়ারল্যান্ড ম্যাচে ১৯০ রানের কঠিন টার্গেট ডাচদের টপকাতে হত ১৪ ওভারের মধ্যে। দুর্দান্ত ব্যাটিং দেখিয়ে তারা করে ১৩.৪ ওভারে ১৯৩-৪। এ দিন ডাচদের নিয়ন্ত্রিত বোলিং-ফিল্ডিংয়ের সামনে ইংল্যান্ড ইনিংসে সাকূল্যে চারটি বাউন্ডারি হয়। একটাও ছক্কা নেই। তা-ও ষষ্ঠ ওভারে বাউন্ডারির পর শেষ বাউন্ডারি ১৭তম ওভারে দশ নম্বর ব্যাটসম্যান ট্রেডওয়েল পান পয়েন্টে খোঁচা মেরে! সোজা কথা, কমলা রঙের জার্সির ঝড় বিশ্ব ক্রিকেটের আকাশে দেখা যাচ্ছে!