অতীতে তিনি বিদেশ সফরে ভারতীয় মিডিয়াকে এক বার ‘বয়কট’ করেছিলেন! তাঁর উদাহরণ আছে টেস্ট ম্যাচের আগের দিন নিজে না এসে দলের কোনও সতীর্থকে সাংবাদিক সম্মেলনে পাঠাবার! এ বার মহেন্দ্র সিংহ ধোনি বিশ্বকাপ খেলতে ভারতীয় দল নিয়ে রওনা হওয়ার আগে প্রথামতো সাংবাদিক সম্মেলন করলেন না। ধোনি-ডানকান ফ্লেচারের ভারতীয় দল শুক্রবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি না হয়েই বাংলাদেশ উড়ে গেল মুম্বই থেকে। এই প্রথম ভারতীয় দল আইসিসি-র কোনও টুর্নামেন্ট খেলতে দেশ থেকে উড়ে গেল সাংবাদিক সম্মেলন না করেই।
যা নিয়ে ভারতীয় ক্রিকেটমহলে জল্পনা, দক্ষিণ আফ্রিকার পর নিউজিল্যান্ড সফরে এবং তার পর এশিয়া কাপেও ভারতীয় দল মুখ থুবড়ে পড়াতেই কি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়ার প্রাক্কালে ধোনির টিম ইন্ডিয়া দেশজ প্রচারমাধ্যমের প্রশ্নমালার সামনে পড়তে চাইল না? সন্তর্পণে মিডিয়াকে এড়িয়ে গেলেন ভারত অধিনায়ক এবং ভারতীয় দলের বিদেশি কোচ?
কোচ ডানকান ফ্লেচারকে নিয়েও ভারতীয় দল ঢাকা রওনা হওয়ার আগে কম জল্পনা হল না! ধোনিদের রওনা হওয়ার সময় ভারতীয় দলের সঙ্গে বিমানবন্দরে ফ্লেচারকে দেখা যায়নি। সঙ্গে সঙ্গে ক্রিকেটমহলে জল্পনা ছড়ায় যে, তবে কি বোর্ড প্রেসিডেন্ট শ্রীনিবাসনের কাছে ফ্লেচার ঠিক এখনই জবাবদিহি করছেন? শেষ পর্যন্ত অবশ্য বোর্ডের তরফে সচিব সঞ্জয় প্যাটেল এ দিনই জানান যে, ফ্লেচারের উপর ভারতীয় বোর্ডের পূর্ণ আস্থা আছে।
ফ্লেচারের ‘মধুরেণ সমাপয়েৎ’-এর পরে ধোনিরও যেন মধুরেণ সমাপয়েৎ ঘটল! মুম্বইয়ে না-হওয়া সাংবাদিক সম্মেলনটা একই দিনে ধোনি করলেন ঢাকায়। বাংলাদেশের মাটিতে দলবল নিয়ে পা রেখেই। এবং জানিয়ে দিলেন, তাঁর এই দলের সব ক্রিকেটারের আইপিএল খেলার অভিজ্ঞতাই হবে এ বার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের ভাল করার শক্তি।
ভারত শেষ আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছে ছ’মাস আগে। গত অক্টোবরে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে। বস্তুত, গোটা ২০১৩-এ সেটাই ছিল ভারতের খেলা একমাত্র টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। পাশাপাশি, অস্ট্রেলিয়া, ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো বিশ্বকাপের অন্যতম দাবিদার দেশগুলো সম্প্রতি অনেক আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলে বাংলাদেশে এসেছে কিংবা আসছে।
কিন্তু এ সব ব্যাখ্যাকে উড়িয়ে দিয়ে ধোনি এ দিন ঢাকায় সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেছেন, “আমরাও প্রচুর টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছি। আপনারা বলতে পারেন সেগুলো আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচ নয়, কিন্তু আমাদের এই টিমের প্রত্যেকে গত বছর আইপিএলে প্রচুর টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছে। আর ভারত এবং বাংলাদেশের আবহাওয়া, উইকেট সবই প্রায় একই ধরনের হওয়ায় আমাদের পক্ষে এখানে টি-টোয়েন্টি ফর্ম্যাটে মানিয়ে নিতে তেমন অসুবিধে হওয়া উচিত নয়। গত আইপিএলটা তো ভারতেই হয়েছিল। যেটা এই বিশ্বকাপে আমাদের সাহায্য করবে বলেই মনে হয়।”
চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ২১ মার্চ উদ্বোধনী ম্যাচ খেলার আগে ভারত দুটো প্রস্তুতি ম্যাচ খেলবে আগামী সোমবার শ্রীলঙ্কা এবং বুধবার ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। যা নিয়ে ধোনি এ দিন বলেছেন, “ওই দুটো প্রস্তুতি ম্যাচে আমরা দলের সব ক্রিকেটারকে বিভিন্ন কম্বিনেশনে খেলিয়ে দেখে নেব। যে সুযোগে আমরা বুঝে নিতে পারব, এই ফর্ম্যাটে কোনটা আমাদের সেরা এগারো।”
ভারত অধিনায়কের মতে, কুড়ি ওভারের ফর্ম্যাটে প্রতিটা ম্যাচই সমান গুরুত্বপূর্ণ। প্রত্যেক ক্রিকেটারের প্রতি মুহূর্তে ফোকাসড্ থাকা দরকার। “শেষ দুটো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেই আমরা একটা করে ম্যাচ হেরেছিলাম। তা সত্ত্বেও টুর্নামেন্ট থেকে আগেই ছিটকে পড়তে হয়েছিল। সে জন্য প্রতিটা ম্যাচই এ বার আমাদের জিততে হবে,” বলেছেন এই ফর্ম্যাটের বিশ্বকাপের প্রথম বারের চ্যাম্পিয়ন ভারত অধিনায়ক ধোনি।