আরও এক ট্রফির সামনে পঙ্কজ

আমাকে বিয়ে করলে বিলিয়ার্ডস-স্নুকারের সঙ্গে ঘর করতে হবে

বাঙালি রসনা মেটানোর ইচ্ছে, শহরে পা দেওয়ার পরই আর চেপে রাখেননি। সপ্তাহ দেড়েকের কলকাতাবাসে ‘প্রচণ্ড মিষ্টি স্বাদের’ সন্দেশ চেখে ফেলেছেন। ডায়েটের জন্য সংযম আর বেশি দূর এগোতে দেয়নি এখনও। তাই বিলিয়ার্ডসের পর এ বার জাতীয় স্নুকারের ট্রফির স্বাদ পাওয়ার দিকেই যাবতীয় লক্ষ্য তাঁর। তবে বাড়ির বাইরে পা রেখে, তা দেশের কোনও প্রান্ত হোক বা বিদেশ, মায়ের হাতের রান্নার কোনও বিকল্প নেই তাঁর কাছে। তিনি— পঙ্কজ আডবাণী।

Advertisement

শমীক সরকার

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০১৫ ০৩:৫০
Share:

বাঙালি রসনা মেটানোর ইচ্ছে, শহরে পা দেওয়ার পরই আর চেপে রাখেননি। সপ্তাহ দেড়েকের কলকাতাবাসে ‘প্রচণ্ড মিষ্টি স্বাদের’ সন্দেশ চেখে ফেলেছেন। ডায়েটের জন্য সংযম আর বেশি দূর এগোতে দেয়নি এখনও। তাই বিলিয়ার্ডসের পর এ বার জাতীয় স্নুকারের ট্রফির স্বাদ পাওয়ার দিকেই যাবতীয় লক্ষ্য তাঁর। তবে বাড়ির বাইরে পা রেখে, তা দেশের কোনও প্রান্ত হোক বা বিদেশ, মায়ের হাতের রান্নার কোনও বিকল্প নেই তাঁর কাছে। তিনি— পঙ্কজ আডবাণী।

Advertisement

শুক্রবার সকালে দেশের এক ডজন বিশ্বখেতাবের মালিক বলছিলেন, “মায়ের হাতের রান্নার সঙ্গে তো কিছুর তুলনা চলে না। দেশের বাইরে গেলেও, আমার জন্য বিশেষ ডিশ থাকলেও মার হাতের রান্নার স্বাদই আলাদা। বাড়িতে তো অলিখিত নিয়মই আছে আমি ফিরলেই মা আমার জন্য পালংপনির আর চাপাটি বানায়। যেটা আমার সবচেয়ে পছন্দের।”

আর ব্যক্তিগত জীবনে পছন্দ? নাহ্, সে রকম কেউ এখনও আসেনি। পুরো জায়গাটা জুড়ে রয়েছে বিলিয়াডর্স-স্নুকারই। “এখনই বিয়ে করতে চাই না। বছর দুয়েকের মধ্যে সেরে ফেলতে পারি। আমার কোনও প্রেমিকাও নেই। খেলাটাই আমার স্ত্রী। যখন জীবনে কেউ আসবে তাঁকে আমার সঙ্গে খেলাটার সঙ্গেও ঘর করতে হবে,” আনন্দবাজারকে বলছিলেন দেশের বিলিয়ার্ডস-স্নুকারের পোস্টার বয়। যাঁর দখলে এক ডজন বিশ্বখেতাব থাকলেও এখনও সাফল্যের খিদেটা অটুট। এত রেকর্ড, ট্রফির পরও কী ভাবে এখনও নিজেকে উদ্বুদ্ধ করেন? “আমার কাছে খেতাব জেতাটাই সব নয়, নিজের খেলায় আরও আরও উন্নতি করাটাই সব সময় লক্ষ্য থাকে। তবে হ্যাঁ, দেশের জন্য পদক জেতাটা দারুণ একটা অনুভূতি। খেলাটাকে নিজের কাজে যাতে আরও সহজ করে তোলা যায় সেটাই চেষ্টা করি।”

Advertisement

এ দিন বেঙ্গল রোয়িং ক্লাবে কঠিন পরিস্থিতি কী ভাবে সহজ করে তুলতে হয় সেটা দেখিয়েও দেন পঙ্কজ কোয়ার্টার ফাইনালে রেলওয়েজের ফয়জল খানের বিরুদ্ধে। যাঁর কাছে পাঁচ বছর আগে ‘সিক্স রেড’ স্নুকারের শেষ আটে হেরে গিয়েছিলেন পঙ্কজ। গত বছর এশিয়াডে সোনাজয়ী ভারতীয় দলের অন্যতম সদস্য ফয়জল প্রথম ফ্রেমেই এগিয়ে গিয়েছিলেন। দ্বিতীয় আর তৃতীয় ফ্রেমে পঙ্কজ ফিরে আসলেও চতুর্থ ফ্রেমে ফের সমতায় ফেরেন ফয়জল। পরের ফ্রেমে প্রায় ৩০ পয়েন্টে এগিয়ে একটা সময় পঙ্কজকে প্রবল চাপেও ফেলে দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু প্রবল চাপ সামলে কী ভাবে উঠে দাঁড়াতে হয়, সেটা সেই গেমেই দুরন্ত ব্রেকে ফ্রেম দখল করে দেখিয়ে দেন দেশের বিলিয়ার্ডস-স্নুকারের সম্রাট। শেষ পর্যন্ত ৫-২ চলে যান সেমিফাইনালে। বিকেলে ৯ ফ্রেমের হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পর দখল করেন শেষ চারের লড়াইও।

বছরের পর বছর কী ভাবে সামলান এত চাপ? “প্রতিদ্বন্দ্বীকে দেখি তখন। ভাবি চাপে তো সেও আছে। আর সবচেয়ে খারাপ কী হতে পারে, ম্যাচ হারা ছাড়া? হারলেও তো সব শেষ হয়ে যাচ্ছে না। খেলাটাকে উপভোগ করাটাই আসল কথা।” তাঁর মনোবিদ দাদা শ্রীর ভূমিকাও যে কতটা, জানিয়ে দেন পঙ্কজ। “শ্রী-ই আমায় এই খেলাটায় এনেছিল। তখন এত ছোট যে বিলিয়ার্ডস টেবল ঠিকমতো নাগালে পেতাম না। তখন থেকে ও উৎসাহ দিয়ে আসছে। আমার অ্যাথলিট হয়ে ওঠার পিছনে দাদার প্রচুর অবদান রয়েছে।”

শনিবার ফাইনালের মহাযুদ্ধ। যেখানে গতবারের চ্যাম্পিয়নের তাজ রক্ষায় লড়াই। সঙ্গে চতুর্থ ‘ডাবল’ করার সুযোগ। তবে ফাইনাল নিয়ে মাতামাতি থাকলেও অন্য ম্যাচে কিন্তু সে ভাবে দর্শক হচ্ছে না। ক্রিকেট পাগল দেশে বিলিয়ার্ডস-স্নুকারের সে রকম জনপ্রিয়তা কোথায়! পঙ্কজ অবশ্য মনে করেন, এ দেশে খেলাটার জনপ্রিয়তা বাড়াতে বিলিয়ার্ডস আর স্নুকার দুটোরই ছোট ফর্ম্যাটকে আরও তুলে ধরতে হবে। আইপিএল, প্রো-কবাডি লিগ, আইএসএলের মতো টিভি দর্শকদের কাছে খেলাটা আরও আকর্ষণীয় করে না তুলতে পারলে জনপ্রিয়তা বাড়ানো কঠিন।

তবে বিলিয়ার্ডস-স্নুকারের উঠতি তারকাদের নিয়ে আশাবাদী পঙ্কজ। জাতীয় টুর্নামেন্টে প্রচুর নতুন মুখ উঠে এসেছে। তাঁদের মধ্যে কেউ ভবিষ্যতে পঙ্কজ আডবাণী হতে পারবেন? পঙ্কজ বলছেন, “শুধু ট্রফির কথা ভেবে খেললেই হবে না। যখন আমি কেরিয়ার শুরু করি, ভাবিনি ১২টা বিশ্বখেতাব জিতব। ভেবেছিলাম কেরিয়ারের শেষে এক-আধটা আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট জিতলেও জিততে পারি। তাই বলছি, নিজের স্বপ্নটাকে আঁকড়ে ধরে এগিয়ে চললে সাফল্য আপনিই আসবে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement