এশিয়াডের মঞ্চ থেকে সটান মণ্ডপে। সোমবার দক্ষিণ কলকাতার আবাসনে জোড়া পদক নিয়ে স্কোয়াশ-নায়ক সৌরভ। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস
কোরিয়া থেকে কলকাতার বাড়িতে ফিরেছেন রবিবার রাত আড়াইটে। ভারতকে এশিয়ান গেমসের ইতিহাসে প্রথম স্কোয়াশ সোনা দিয়ে। সোম-সন্ধ্যায় সোনাজয়ী বঙ্গসন্তান সটান পাড়ার পুজো একডালিয়া এভারগ্রিনের প্যান্ডেলে। বাড়ি ফিরেই বেরিয়ে পড়লেন ব্যক্তিগত কাজে। গাড়িতে যেতে যেতেই সৌরভ ঘোষাল সাক্ষাত্কার দিলেন আনন্দবাজারকে।
প্রশ্ন: গ্রিক দেবতার মতো চেহারা। গলায় এশিয়াডের সোনার পদক। পুজো প্যান্ডেলে মহিলা ভক্তরা ঘিরে ধরেনি?
সৌরভ: (লাজুক হাসি) আপনি তো শুরু থেকেই অ্যাটাকে চলে গেলেন...!
প্র: রাজ্য ক্রীড়া দফতর বা কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রীর শুভেচ্ছাবার্তা পেয়েছেন?
সৌরভ: রাজ্যের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় সকালে ব্যক্তিগত ভাবে শুভেচ্ছা জানাতে এসেছিলেন বাড়িতে। ইনচিওনে সিঙ্গলসে রুপো জেতার পরের দিন তামিলনাড়ুর সদ্য অপসারিত মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতা শুভেচ্ছা জানান। আর কোনও সরকারি শুভেচ্ছাবার্তা এখনও পাইনি।
প্র: খারাপ লাগছে না?
সৌরভ: লাগেনি তা বলব না। রাজ্য বা কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে শুভেচ্ছা এলে ভালই লাগত। কিন্তু যখন আসেনি, তখন সেটা নিয়ে হ্যাংলামি করতে পারব না। ফোকাস নষ্ট হবে।
প্র: আগের দু’টো এশিয়াডে ব্রোঞ্জ। সেখান থেকে এ বার সোনা-রুপো জিতে ইতিহাসে!
সৌরভ: কিন্তু লক্ষ্য তো ছিল দু’টো সোনা। সেটা হল কোথায়?
প্র: সিঙ্গলস ফাইনালে দু’গেমে এগিয়েও ২-৩ হারের ধাক্কা সামলে টিম ইভেন্টে ফোকাস করলেন কী ভাবে?
সৌরভ: কুয়েতের আবদুল্লা র্যাঙ্কিংয়ে আমার তিরিশ ধাপ পিছনে। ইন্ডিভিজুয়াল ফাইনালে পিছিয়ে পড়ে ও এমন সব শট মারতে শুরু করেছিল যে, ম্যাচটাই শেষমেশ ওর পকেটে ঢুকে গেল। গেমস ভিলেজে ফিরে ভোর সাড়ে চারটে পর্যন্ত ঘুমোতে পারিনি। বাবা, দাদ্দা (দাদু) ফোন করে বলেছিলেন, টিম ইভেন্টে ঠিক সোনা পাবি। আর এক জন বিশেষ মানুষ বলেছিলেন, জেতা-হারা তোমার হাতে নেই। দলগত ইভেন্টে মনোনিবেশ করো।
প্র: সেই ‘বিশেষ মানুষ’, যিনি আপনার চোখে সব সময় দায়িত্ববোধ দেখেন?
সৌরভ: এটাও জেনে ফেলেছেন?
প্র: বাড়ি ফিরে প্রথম পাতে কী দিয়ে সেলিব্রেশন হল?
সৌরভ: লাউ-চিংড়ি, আলু-পোস্ত, মাংস কব্জি ডুবিয়ে খেলাম। পুজোর সপ্তাহটা নেমন্তন্ন খেয়েই কেটে যাবে!
প্র: অন্য খেলায় আপনার আদর্শ ও পছন্দের সেরা তিন ক্রীড়াবিদ?
সৌরভ: ফেডেরার, সচিন আর উসেইন বোল্ট। এই তিন জনের পরিশ্রম আর জীবন দর্শন অনুসরণ করি। ওঁরা নিজেদের খারাপ দিনেও সাফল্য ধরে রাখতে জানেন। বোল্টকে হাতের কাছে পেয়েছিলাম। গ্লাসগোয় কমনওয়েলথ গেমসে। কিন্তু কথা বলে উঠতে পারিনি। তবে এঁদের থেকেই স্কোয়াশ কোর্টে আগুনটা পাই।
প্র: চাপের ম্যাচে মোটিভেশন মন্ত্র?
সৌরভ: সিনেমা দ্যাখো। গান শোনো। হলিউড, বলিউড, সব দেখি। এই তো, গেমস ভিলেজেই মেরি কমের বায়োপিকটা দেখলাম। সামনের রবিবার ইউএস ওপেন খেলতে বেরিয়ে পড়ব। তার আগে হৃতিক-ক্যাটরিনার ‘ব্যাং-ব্যাং’ও দেখে নিতে হবে।
প্র: এশিয়ায় স্কোয়াশ মানেই ছিল পাকিস্তান। জাহাঙ্গির-জানশের। ব্যাটনটা ওয়াঘা টপকাল কী ভাবে?
সৌরভ: স্রেফ পরিশ্রমের জোরে। আমাদের দেশে এখন এমন চার-পাঁচ জন স্কোয়াশ প্লেয়ার আছে যারা নিজের দিনে এশিয়ার সেরা।
প্র: এমন কাউকে মনে পড়ছে যিনি না থাকলে এই জায়গায় পৌঁছনো যেত না?
সৌরভ: আমার ওয়েস্ট ইয়র্কশায়ারের কোচ ম্যালকম উইলস্ট্রপ। উনি আমার খেলোয়াড় জীবনে না এলে ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৪-এ ইনচিওনে ভারতের জাতীয় সঙ্গীত বাজত না।
প্র: সৌরভ ঘোষালের সংজ্ঞা?
সৌরভ: এক জন বাঙালি, যে বিশ্বের সেরা হতে চায়। তার জন্য ড্রিমিং বিগ। ওয়ার্কিং হার্ড।
প্র: ‘নায়ক’-এর অনিল কপূরের মতো এক দিনের প্রধানমন্ত্রী হলে?
সৌরভ: সবার আগে দেশটাকে দুর্নীতিমুক্ত করব। আর আমাদের বিশাল মানবসম্পদকে কাজে লাগাব।
প্র: প্রেমে পড়েছেন?
সৌরভ: দু’বার। এর বেশি কিছু বলব না।
প্র: কোনও আক্ষেপ?
সৌরভ: অলিম্পিকে যদি স্কোয়াশ থাকত...।
প্র: স্কোয়াশের বাইরে প্রিয় খেলা?
সৌরভ: ফুটবল।
প্র: আইএসএলে নিজের শহর কলকাতা না কি যেখানে স্কোয়াশ প্লেয়ার হয়ে উঠেছেন সেই চেন্নাইয়ের জন্য গলা ফাটাবেন?
সৌরভ: আইএসএলে আমার জন্মভূমি কলকাতার জন্য হৃদয় আর চেন্নাইয়ের জন্য মস্তিষ্ক থাকবে। মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গল, দু’দলের ক্যাপ্টেনই তো খেলবেন চেন্নাই দলে। কী, ঠিক বললাম তো? ফুটবলটারও খবর রাখি তা হলে!