দিদিয়ের দেশঁ আটানব্বইয়ের বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক যতই এই মুহূর্তে ব্রাজিলে ফ্রান্স দলের কোচ হোন, এ বারের বিশ্বকাপে ফরাসিদের প্রচণ্ড আক্রমণাত্মক খেলার জন্য আসল কৃতিত্ব ফুটবলপণ্ডিতরা দিতে চাইছেন মিশেল প্লাতিনিকে। ফরাসি মিডিয়ার বক্তব্য হল, প্লাতিনির ফুটবল দর্শনই অনুসরণ করছেন দেশঁ।
ফরাসি ফুটবলের রাজপুত্রের সেই দর্শন ফুটবল খেলাটা আর কিছুই নয়, স্রেফ নিয়ন্ত্রণের ব্যাপার! বলটাকে যেমন মাঠে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, তেমনই টিমটাকে মাঠ আর মাঠের বাইরেও নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। মাঠে আট গোল আর মাঠের বাইরে শান্ত ফ্রান্স শিবিরের ছবিটা যেন কোচ দেশঁর এ দিন একটা মন্তব্যেই স্পষ্ট। “আমি একটা আনন্দ-ছড়ি দিয়ে ফ্রান্স দলটাকে নিয়ন্ত্রণ করছি!”
প্রথম দু’ম্যাচে আট গোলের ঝড় বইয়ে শেষ ষোলোয় উঠে যাওয়ার পর বুধবার গ্রুপে বেঞ্জিমাদের নিয়মরক্ষার লড়াই ইকুয়েডরের সঙ্গে। অন্য ম্যাচে সুইৎজারল্যান্ডের সামনে হন্ডুরাস। লাতিন আমেরিকান টিমের আর রজার ফেডেরারের দেশের, দু’দলেরই নক আউটে ওঠার সুযোগ আছে। সমসংখ্যক (২) ম্যাচে সমসংখ্যক পয়েন্ট (৩) তাদের। তবে গোলপার্থক্যে ইকুয়েডর (০) সুইসদের (-২) ভাল জায়গায়। ফলে দু’টো ম্যাচই কড়া হওয়ার সম্ভাবনা। চার বছর আগে দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপে অনুরূপ পরিস্থিতিতে সুইৎজারল্যান্ড মুখোমুখি হয়েছিল হন্ডুরাসের এবং সুইসদের ‘পার্টি’ খারাপ করে দিয়েছিল মধ্য আমেরিকান দলটি। গ্রুপে দু’টো ম্যাচই হারলেও হন্ডুরাস শিবির থেকে হুমকি দেওয়া হয়েছে সুইৎজারল্যান্ডকে এ বারও একই ভাবে কপাল পোড়াতে পারে তারা বিপক্ষের।
যার জন্য অন্য ম্যাচে ইকুয়েডর কোমর কষে দুরন্ত ফর্মে থাকা ফ্রান্সের চ্যালেঞ্জ নিতে চাইছে। দেশঁর দল দু’ম্যাচে দু’গণ্ডা গোল করলেও ফরাসি ড্রেসিংরুমে গোল-সংক্রান্তই একটা কাঁটাও কিন্তু বিঁধে আছে। এ বারের বিশ্বকাপে প্রথম পেনাল্টি নষ্ট করার অভিশাপও কিন্তু এক ফরাসি ফুটবলারেরই। আর তাঁর নাম কিনা করিম বেঞ্জিমা-ই। যাঁকে ফ্রান্স দলের আক্রমণাত্মক ফুটবল স্টাইলে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর দেখাচ্ছে। চোটের কারণে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে যাওয়া ফ্রাঙ্ক রিবেরির অভাবও টের পেতে দিচ্ছে না বেঞ্জিমার তুখোড় ফর্ম।
দেশঁর শিবিরের পক্ষে এ দিন আরও একটা ভাল খবর, টিমের অন্যতম ভরসা ভারানে ফিট হয়ে উঠে ফের পুরোদমে ট্রেনিং শুরু করেছেন। বুধবারের ম্যাচে রিজার্ভে রেখে পরের দিকে তাঁকে নামানোও হতে পারে। যেহেতু আগেই নক আউটে উঠে গেলেও গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে শেষ ষোলোয় অপেক্ষাকৃত সহজ প্রতিপক্ষ পেতে মরিয়া ফ্রান্স। দেশঁ দলের চমৎকার ফর্মে এতটাই আত্মবিশ্বাসে টগবগ করছেন যে, বলে দিয়েছেন, “প্রি-কোয়ার্টারেই সন্তুষ্ট থাকার কোনও বাসনা নেই আমাদের। নক আউটেও অ্যাটাকিং ফুটবলই হবে আমাদের অস্ত্র। আক্রমণ হেনেই বিশ্বকাপে আরও এগোতে চাই।”