বিষণ্ণ সকাল। ‘মার্কা’-র প্রথম পাতা। বৃহস্পতিবার
রাত প্রায় এগারোটা। রাস্তাঘাট শুনশান। শ্মশানের নিস্তব্ধতা। জায়ান্ট স্ক্রিনের সামনে যাঁরা ভিড় করে খেলা দেখতে বসেছিলেন, ম্যাচের পরও অনেকে জায়গা ছাড়তে পারেননি। কারও দু’হাত দিয়ে হতাশ মুখটা ঢাকা। কেউ প্রিয় দলের জার্সি গায়ে হতবাক। যেন বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না তাঁদের টিম, গতবারের চ্যাম্পিয়ন স্পেন মাত্র দুটো ম্যাচ খেলেই ব্রাজিল বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে গিয়েছে। অনেকের কাছেই গত ছ’বছরে এমন মুহূর্ত প্রথম। তাই হয়তো বুঝে উঠতে পারছিলেন না, প্রতিক্রিয়াটা কেমন হওয়া উচিত।
নেদারল্যান্ডসের কাছে প্রথম ম্যাচে ১-৫ হারের পরও আশা হারাননি সমর্থকরা। গত বিশ্বকাপেও তো প্রথম ম্যাচে সুইৎজারল্যান্ডের কাছে ০-১ হারার পরও বিশ্বকাপের তাজ উঠেছিল ইকের কাসিয়াসদের মাথাতেই। কিন্তু চিলির ভারগাসের গোলটার পরই সব হিসেব উল্টে গেল। কফিনে শেষ পেরেকটা পুঁতে দিলেন আরাংগুইজ। প্রথমার্ধের শেষেই সব আশায় ঠান্ডা জল পড়ে যায়।
কাকতালীয় ভাবে বুধবারই ছেলে ষষ্ঠ ফিলিপকে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন রাজা প্রথম খুয়ান কার্লোস। আর সে দিনই বিশ্ব ফুটবলে সিংহাসনচ্যুত হল স্পেন। ‘‘তাঁর রাজ্যাভিষেকে যাতে টিম তাড়াতাড়ি দেশে ফিরে আসতে পারে, সেই উদ্যোগ দেখানোয় ষষ্ঠ ফিলিপ প্লেয়ারদের ধন্যবাদ জানিয়েছে।” মজা করে বলছিলেন এক স্প্যানিশ সমর্থক। কিন্তু চুটকি বলার পরও মুখে হাসি কোথায়। অদ্ভুত বিষণ্ণতার ভিড় ঠেলে হাসিঠাট্টার ভেসে ওঠার সাধ্য কী!
যে টিভি চ্যানেল স্পেনে বিশ্বকাপের সম্প্রচার করছিল, তার ধারাভাষ্যকাররা বারবার জাতীয় দলের পারফরম্যান্সের জন্য দুঃখপ্রকাশ করছিলেন। ২০০২ বিশ্বকাপের স্প্যানিশ কোচ অ্যান্টোনিও কামাচো বলছিলেন, “কী যে হল সেটা কেউ জানে না। প্লেয়াররা না। আমরা তো নয়ই।”
মাদ্রিদের বেশ কয়েকটা পানশালায় ম্যাচ শুরু হওয়ার পর সমর্থকরা ভিড় জমাতে শুরু করেছিলেন। প্রথমার্ধের পরই পানশালা প্রায় ফাঁকা। যাঁরা ম্যাচ শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করেছিলেন হারের পরও তাঁদের মধ্যে কোনও প্রতিক্রিয়া ছিল না। বেশ কিছুক্ষণ পর কয়েক জন ‘এসপানা, এসপানা’ বলে চিৎকার করে ওঠেন। এর পরও টিমের পাশে আছেন সেটা বোঝানোর জন্যই হয়তো। কিন্তু সেই সমর্থনেও সে রকম জোর কোথায়! চিৎকার শেষ হওয়ার পরই যেমন ৩০ বছরের কম্পিউটার প্রোগ্রামার ফ্রাঙ্ক পেনা বলেন, “আমি চূড়ান্ত হতাশ। এত আত্মবিশ্বাস নিয়ে বিশ্বকাপে গেল আমাদের টিম। কিন্তু...হয়তো আমাদের টিমের জয়ের খিদেটা ছিল না।”
অনেকে অবশ্য ধ্বংসের মধ্যেও শাপে বর খুঁজছেন। এক সমর্থক ফ্রান্সেসকো লোরেঞ্জো যেমন বলে দেন, “এক দিক থেকে ভালই হল। টিমের পা-টা এত দিন আকাশে উড়ছিল। আবার মাটিতে নেমে এল। এ বার গোটা টিমের খোল-নলচে পাল্টানোর প্রয়োজন কি না সেটা খতিয়ে দেখতে হবে।”
বিষণ্ণ নিশি। মাদ্রিদে বুধবার।
স্প্যানিশ মিডিয়াতেও জাতীয় দলের হারের মিশ্র প্রতিক্রিয়া। ‘মার্কা’ লিখেছে, “স্পেনের সমর্থকদের হতাশ হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। তবে এই টিমটাই স্পেনকে যা দিয়েছে সেটা অমর হয়ে থাকবে।” আর এক স্প্যানিশ পত্রিকা এএস ডট কম লিখেছে, “শেষটা ভয়ঙ্কর ভাবে হল। আধিপত্যটা একদিন শেষ হবে সেটা জানাই ছিল। কিন্তু সেটা যে এত বেদনার, বিশ্রী হবে, সেটা কল্পনা করা যায়নি। গুডবাই ফুটবল বিশ্ব!”