কিরমানিকে টপকাতে হলে ঋদ্ধিকে এখন ধারাবাহিক ভাবে টেস্ট খেলে যেতে হবে।
আমি যখন ছোট ছিলাম, তখন একটা কথা খুব শুনতাম। দক্ষিণ আফ্রিকার কলিন ব্ল্যান্ডের ফিল্ডিং দেখার জন্য লোকে নাকি টিকিট কেটে মাঠে ঢুকত।
আজ একটা কথা বলতে চাই। শুধু ঋদ্ধিমান সাহার কিপিং দেখতেও যেন লোকে টিকিট কিনে মাঠে আসে। বিশেষ করে ছোট ছেলে-মেয়েরা। কী ভাবে টেকনিক্যালি নিখুঁত কিপিং করতে হয়, সেটা ঋদ্ধিকে দেখে বুঝতে পারবে তরুণ প্রজন্মের ক্রিকেটারেরা। শিখতেও পারবে।
‘হাউ টু বিকাম আ পারফেক্ট কিপার’— এ রকম কোনও বই যদি এখন লেখা হয়, তা হলে অবশ্যই সে-ই বইয়ের কেন্দ্রীয় চরিত্র হবে বাংলার ঋদ্ধিমান। এক জন নিখুঁত কিপার হতে গেলে চারটে মন্ত্র সব সময় জপ করতে হয়— এক, অনুমানক্ষমতা। দুই, ফিটনেস। তিন, বল সেন্স এবং চার, শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বলটা দেখা। এবং এই চারটে গুণই ঋদ্ধির মধ্যে দারুণ ভাবে আছে।
উল্টো দিকে যদি মহেন্দ্র সিংহ ধোনিকে দেখেন, কোনও সন্দেহ নেই, ও দারুণ সফল। কিপার হিসেবেও ভাল। কিন্তু টেকনিক্যালি মোটেই নিখুঁত নয় ধোনি। একটা উদাহরণ দিই। পেসারদের বল যখন ওয়ান বাউন্স বা হাফভলিতে ধোনির কাছে যায়, তখন ও পা দিয়ে সেগুলো আটকাতে চেষ্টা করে। এক জন খুব ভাল কিপার কিন্তু এটা করবে না। এর ফলে বল পায়ে লেগে ফাইন লেগ বা থার্ডম্যানের দিকে চলে গিয়ে রান হতে পারে।
আরও পড়ুন: ‘বিরাট ফিট থাকলে ছুঁতেও পারে সচিনকে’
ঋদ্ধি কিন্তু কোনও সময়ই এটা করে না। এক জন কিপারের কাছে কঠিন চ্যালেঞ্জ হল, পেসারদের বল হাফভলিতে ধরা। তার জন্য ঠিক জায়গায় হাত আনতে হবে। ঋদ্ধি এটা নিখুঁত ভাবে করে। আর সেখানেই ওর ক্লাস বোঝা যায়।
কিপারদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হল স্পিনারদের ভিতরে ঢুকে আসা বল ধরা। ঋদ্ধির ক্ষেত্রে যেটা হবে টার্নিং ট্র্যাকে আর. অশ্বিনকে সামলানো বা চায়নাম্যান কুলদীপ যাদকে কিপ করা। কলম্বো টেস্টের চতুর্থ দিন যেমন অশ্বিনকে কিপ করা ছিল মারাত্মক কঠিন কাজ। অফস্পিনারের বল ঠিক মতো ধরতে হলে আপনাকে লেগ সাইডে শক্তিশালী হতে হবে। নিজে একটু-আধটু কিপিং করেছি বলে জানি, লেগ সাইডটা কিপারের কাছে কয়েক মুহূর্তের জন্য ব্লাইন্ড স্পট হয়ে যায়। ব্যাটসম্যানের শরীরে আড়াল হয়ে যায় বলে কিপাররা বলটা দেখতে পারে না। এক জন কিপারের গ্লাভস এবং ব্যাটের মধ্যে ওই সময় কয়েক ইঞ্চির ফাঁক থাকে। ফলে প্রখর অনুমানক্ষমতা এবং রিফ্লেক্সের জোরে বল ‘গ্যাদার’ করতে হয়। কলম্বোয় ঋদ্ধি শুধু ভাল বল ধরেইনি, ওকে আমি কোনও সময় অস্বস্তিতেও পড়তে দেখিনি। আমার প্রিয় কিপার ছিল অ্যালান নট। ওই সময় নটের জন্য বব টেলরকে অনেক দিন বাইরে থাকতে হয়েছিল। টেলরের একটা জিনিস আমার খুব ভাল লাগত। ও যখন বলটা ধরত, কোনও আওয়াজ হতো না। এতই নিখুঁত ছিল ‘গ্যাদারিং’। ঋদ্ধির মধ্যেও এই গুণটা আছে।
বিরাট কোহালি, রবি শাস্ত্রীরা এখন ঋদ্ধিকে বিশ্বের সেরা কিপার বলছে। এই মুহূর্তে ওর প্রতিদ্বন্দ্বীরা হল অস্ট্রেলিয়ার ম্যাথু ওয়েড, দক্ষিণ আফ্রিকার কুইন্টন ডিকক, পাকিস্তানের সরফরাজ আমেদ, ইংল্যান্ডের জনি বেয়ারস্টো, শ্রীলঙ্কার ডিকওয়েলা-রা। ওরা ভাল কিপার হতে পারে, কিন্তু ঋদ্ধি শুধু ভাল-ই নয়, গেমচেঞ্জারও। যেমন কলম্বোয় দেখলাম। কুশল মেন্ডিসের ক্যাচটা ধরে ভারতের কাজটা সহজ করে দিল।
ভারতের সর্বকালের সেরার দৌড়ে কোথায় থাকবে ঋদ্ধি? ধোনির কথা আমি আগেও বলেছি। এ বার বাকি থাকে ফারুখ ইঞ্জিনিয়র, কিরন মোরে এবং অবশ্যই সৈয়দ কিরমানি। ইঞ্জিনিয়র খুব শো-ম্যান ছিল। মাঝে মাঝে ক্যাচ ফস্কালেও এমন ভাব করত যেন বলটা ব্যাটে লাগেনি। মোরে ভাল ছিল, কিন্তু সীমাবদ্ধতা ছিল। কিরমানি কপিবুক কিপিং করত না। হাত ছড়িয়ে বল ধরত। ওর একটা নিজস্ব স্টাইল ছিল। যেটা কপি করা সম্ভব নয়। কিরমানিকে টপকাতে হলে ঋদ্ধিকে এখন ধারাবাহিক ভাবে টেস্ট খেলে যেতে হবে। তবে এটা বলেই দেওয়া যায়, টেকনিক্যালি কিন্তু কিরির চেয়েও এগিয়ে আছে ঋদ্ধি।
ভারতীয় টিমে অনেকের অনেক ডাকনাম আছে। ঋদ্ধির একটা নাম দেওয়ার প্রয়োজন এসেছে। ‘মিস্টার ট্রাস্ট’। উইকেটের পিছনে ঋদ্ধি থাকা মানে আপনি সম্পূর্ণ বিশ্বাস রাখতে পারেন।