মেরি কম। ছবি: টুইটার।
কুস্তিকর্তা ব্রিজভূষণ শরণ সিংহের বিরুদ্ধে কেন্দ্রের তৈরি করা কমিটির রিপোর্টের সঙ্গে সহমত নন এই কমিটিরই অন্যতম সদস্য ববিতা ফোগট। প্রাক্তন কুস্তিগির এবং বিজেপি নেত্রী ববিতা লিখিত ভাবে জানিয়েছেন তাঁর আপত্তির কথা। সত্য অনুসন্ধানের পদ্ধতি নিয়েও আপত্তি রয়েছে ববিতার।
ব্রিজভূষণ বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ খতিয়ে দেখতে কমিটি গঠন করেছিল কেন্দ্র। অলিম্পিক্স পদকজয়ী বক্সার মেরি কমের নেতৃত্বে কমিটির অন্যতম সদস্য ছিলেন ববিতা। মেরির নেতৃত্বে প্রথম কমিটিতে ছিলেন অলিম্পিক্স পদকজয়ী কুস্তিগির যোগেশ্বর দত্ত, তৃপ্তি মুরগুন্ডে, রাধিকা শ্রীমান এবং রাজেশ রাজাগোপালা। পরে কমিটিতে যুক্ত করা হয় ববিতাকে। সেই কমিটির রিপোর্ট নিয়ে আপত্তি রয়েছে তাঁর। নিজের অসন্তোষের কথা জানিয়ে হাতে লিখে চিঠি দিয়েছিলেন কমিটিকে। ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে দিল্লি পুলিশের দেওয়া চার্জশিটের সঙ্গে রয়েছে ববিতার সেই চিঠি। গত ১৫ জুন আদালতে কুস্তিকর্তার বিরুদ্ধে ১৫৯৯ পাতার চার্জশিট জমা দিয়েছে দিল্লি পুলিশ।
মহিলা ক্রীড়াবিদদের হেনস্থার অভিযোগের সমাধানের জন্য চারটি সুপারিশ করেছিল মেরির নেতৃত্বাধীন কমিটি। সুপারিশগুলির অন্যতম ছিল, হেনস্থা হওয়া কুস্তিগিরেরা এবং ঘটনার সাক্ষীরা যাতে কোনও বৈষম্যের শিকার না হয়, তা নিশ্চিত করা। ববিতার প্রথম অভিযোগ, সাক্ষীদের সঙ্গে যোগাযোগ না করেই রিপোর্ট তৈরি করেছিল কমিটি। অথচ ওই সাক্ষীরাই কুস্তিগিরদের একাংশের অভিযোগগুলির সত্যতা সম্পর্কে তথ্য দিতে পারতেন। দ্বিতীয় অভিযোগ, কমিটিকে সর্বভারতীয় কুস্তি ফেডারেশনের আর্থিক অনিয়ম সংক্রান্ত পর্যাপ্ত প্রমাণ দেওয়া হয়নি। ববিতা চিঠিতে লিখেছেন, কমিটির রিপোর্টের সঙ্গে তিনি সহমত নন। যে ভাবে কাজ করা হয়েছে, তাতে তিনি হতাশ। ইংরেজি নিয়ে সমস্যা থাকায় বোঝার সুবিধার জন্য রিপোর্টের একটি হিন্দি প্রতিলিপি চেয়েছিলেন। তাঁর দাবি, সেই অনুরোধও মানা হয়নি। কমিটির সদস্য হিসাবে যথাযথ গুরুত্ব না পাওয়ার কথাও বলেছেন ববিতা।
অন্য দিকে দিল্লি পুলিশ চার্জশিটে জানিয়েছে, অভিযোগকারী ছ’জন কুস্তিগিরের মধ্যে দু’জনের বক্তব্য সমর্থন করেছেন ১৫ জন সাক্ষী। তদন্তকারীরা মোট ১০৮ জন সাক্ষীর সঙ্গে কথা বলেছেন। তাঁদের মধ্যে খেলোয়াড়, ফেডারেশনের কর্তা এবং কর্মীরা আছেন। ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ রয়েছে বলেও চার্জশিটে জানিয়েছেন দিল্লি পুলিশের তদন্তকারীরা। বৃহস্পতিবার দিল্লির একটি আদালত বিজেপি সাংসদ ব্রিজভূষণ এবং আর এক অভিযুক্ত বিনোদ তোমারের জামিনের আর্জি মঞ্জুর করেছে। দু’জনকেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, দেশের বাইরে যেতে হলে আগাম জানাতে হবে এবং অনুমতি নিতে হবে। অভিযোগকারী বা সাক্ষীদের কোনও রকম প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ হুমকি দেওয়া, ভয় দেখানো বা প্ররোচনা দেওয়া যাবে না।
কুস্তিকর্তা ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ তুলে আন্দোলনে নামেন দেশের সেরা কুস্তিগিরদের একাংশ। আন্দোলনের প্রধান তিন মুখ সাক্ষী মালিক, বজরং পুনিয়া এবং বিনেশ ফোগট। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং ক্রীড়ামন্ত্রী যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেওয়ায় আন্দোলনের পথ থেকে সরে এসেছেন তাঁরা। এখন চলছে আইনি লড়াই।