চনমনে: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ম্যাচের প্রস্তুতিতে পোগবা। ছবি: এএফপি।
আসন্ন বিশ্বকাপে তাদের মাঠে নামতে বাকি আর ছয় দিন। অথচ ফ্রান্সের তারকা মিডফিল্ডার পল পোগবাকে নিয়ে বিতর্ক কিছুতেই থামছে না। এক দিকে পোগবার ধারাবাহিকতার অভাব নিয়ে যখন সরব বিশেষজ্ঞরা, তখন অন্য দিকে কাউকে ছেড়ে কথা বলার পাত্র নন ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের এই ফরাসি মিডফিল্ডার। তিনিও পাল্টা জবাব দিচ্ছেন তাঁর নিন্দুকদের।
গত কয়েক দিন ধরে একাধিক প্রাক্তন তারকা পোগবার সমালোচনা করার পরে এ বার ফ্রান্সের বিশ্বকাপজয়ী দলের অন্যতম সদস্য ফ্রাঙ্ক লেবফ তাঁকে প্রায় হুঁশিয়ারি দিয়ে জানিয়েছেন, পোগবার যা পারফরম্যান্স, তাতে তাঁর এই বিশ্বকাপে ফ্রান্সের প্রথম দলে জায়গা হওয়া উচিত না। তিনি বলেছেন, ‘‘ও খুব চাপে রয়েছে। বিশ্বকাপে ওকে প্রথম দলে রাখা হবে বলে আমার মনে হয় না। কোঁহতা তুলিসো বা ব্লেজ মাতুইদিরা মনে হয় ওর চেয়ে এগিয়ে থাকবে।’’
বিশ্বকাপের আগে ফ্রান্স শনিবার শেষ প্রস্তুতি ম্যাচ খেলতে নামছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে। সেই ম্যাচে কোচ দিদিয়ে দেশঁ পোগবাকে শুরু থেকে খেলাবেন কি না, সেটাই দেখার। যদি না খেলান, তা হলে লেবফের ধারণা সত্যি হতে পারে। ১৯৯৮-এ ফ্রান্সকে চ্যাম্পিয়ন করার পিছনে যাঁদের প্রধান ভূমিকা ছিল, তাঁদের অন্যতম লেবফ মনে করেন, ‘‘পোগবার প্রতিভা আছে। কিন্তু গত দু-তিন বছরে জাতীয় দলের হয়ে নেমে ও তা দেখাতে পারেনি। ও ব্যালন ডি’ওর পাওয়ার কথা বলে। দাবি করে, ও-ই নাকি ফ্রান্সের এক নম্বর ফুটবলার। বিশ্বকাপ ফ্রান্সের সবচেয়ে বড় ভরসাও নাকি ও। কিন্তু এ সব কথা বলে পোগবা নিজেকে অযথা চাপে ফেলে দেয়।’’ লেবফের মতে, পোগবার উচিত এত কথা না বলে মাঠে নেমে নিজেকে প্রমাণ করা। বলেছেন, ‘‘শুধু মুখে বললেই হবে না। করেও দেখাতে হবে।’’
ইতালির বিরুদ্ধে শেষ প্রস্তুতি ম্যাচে ফ্রান্সের সমর্থকেরা গ্যালারি থেকে পোগবাকে বিদ্রুপ করেছিলেন। ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের সমর্থকেরাও তাঁর পারফরম্যান্সে খুশি নন। ফুটবল পণ্ডিতদের একাংশের মতে, পোগবার খেলায় সেই আগ্রাসনই নেই, যা বিপক্ষের মনে ভয় ধরাতে পারে। অভিযোগ উঠেছে, ধারাবাহিকতারও নেই তাঁর খেলায়। তাঁই কোচেরা পোগবার উপর ভরসা করতে পারছেন না।
এ সব সমালোচনার কড়া জবাবও দিয়েছেন পোগবা। বলেছেন, ‘‘বরাবর আমি এ রকমই খেলি। এটাই আমার খেলার ধরন। এ রকম খেলেই সাফল্য পেয়েছি। আমি কী ভাবে খেলব, তা কাউকে বলে দিতে হবে না। ওটা আমাকেই ঠিক করতে দিন।’’ জবাব দিতে গিয়ে কয়েক দিন আগেই তিনি লিয়োনেল মেসির উদাহরণ দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, ‘‘মেসি যখন মাঠে হেঁটে বেড়ায়, তখন তো কেউ তার নিন্দা করে না। তিনটে গোল করলেই সবাই চুপ হয়ে যায়। আমি যে ভাবে ফুটবল খেলি, সে ভাবেই খেলব। তা কেউ পছন্দ করুক বা না করুক, তাতে কিছু আসে যায় না। কারও বিনোদনের জন্য আমি খেলি না। কখনও খেলবও না।’’
তবে শুধুই সমালোচক নয়, তাঁর শুভাকাঙ্খীও রয়েছেন ফুটবলবিশ্বে। যেমন লরাঁ ব্লঁ। লেবফেরই বিশ্বকাপজয়ী দলের সতীর্থ ব্লঁ বলেছেন, ‘‘টেকনিকে পোগবা কিন্তু অনেকের চেয়ে এগিয়ে। শরীরসর্বস্ব ফুটবল খেলে না ও। আমাদের দলে (১৯৯৮) প্যাট্রিক ভিয়েরার মতো শারীরিক শক্তিতে ভরপুর একাধিক ফুটবলার ছিল। ফুটবলার হিসেবে ভিয়েরার চেয়ে এগিয়ে পোগবা। ওর মধ্যে যা সম্ভাবনা রয়েছে, তাতে ফ্রান্সের ফুটবলের উপকারই হবে। টেকনিকের সঙ্গে ও যদি শক্তিকে ভাল ভাবে মেশাতে পারে, তা হলে আরও ভাল ফুটবলার হয়ে উঠতে পারে।’’