গোলের পর থিয়াগো সিলভার উল্লাস। ছবি: এএফপি।
নেইমার নেই। গোল করার লোক কম। দুর্বল রির্জাভ বেঞ্চ। এই সব বাধাও আটকাতে পারল না ব্রাজিলকে শেষ আটে পৌঁছনোর থেকে। রবিবার রাতে ভেনেজুয়েলাকে ২-১ হারিয়ে কোপা আমেরিকা জেতার স্বপ্ন টিকিয়ে রাখল দুঙ্গার ব্রাজিল।
পরিসংখ্যান অনু্যায়ী ভেনেজুয়েলা ‘পয়া’ দল ব্রাজিলের। এর আগে কোপা আমেরিকায় ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে ছ’টা ম্যাচে অপরাজিত ছিল ব্রাজিল। এ দিনও সেই ধারা বজায় থাকল। এমনিতেই গোটা সপ্তাহ খারাপ কারণেই শিরোনামে আসে ব্রাজিল। নেইমারের চার ম্যাচ নির্বাসন নিয়ে তোলপাড় হয়ে যায় ফুটবলবিশ্ব। তবে দলের সেরা বাজিকে ছেড়ে কি ভাবে জিততে হয় ভাল ভাবেই দেখিয়ে দিল ব্রাজিল। ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে ৪-২-৩-১ ছকে কুটিনহো-উইলিয়ান-রবিনহো সহ র্ফিমিনোকে নিয়েই ফরোয়ার্ড লাইন সাজান দুঙ্গা। দশ মিনিটের মধ্যেই প্রথম গোল পায় ব্রাজিল। রবিনহোর নেওয়া কর্নার থেকে র্দুদান্ত ভলি দিয়ে গোল করেন থিয়াগো সিলভা। নেইমার না থাকলেও ব্রাজিলের ফরোয়ার্ড লাইন বেশ সুন্দর যোগসূত্র তৈরি করে একে অপরের সঙ্গে। উইলিয়ান যেমন ক্রমাগত উপর-নীচ করছিলেন। উইংয়ে খেলা ছড়াতে সাহায্য করছিলেন। প্রথম দলে প্রত্যাবর্তনে আবার রবিনহো প্রমাণ করলেন তাঁর প্রতিভা পুরোপুরি ফুরিয়ে যায়নি। যাঁর স্কিলে দুর্দান্ত কিছু মুহূর্ত তৈরি হল। দলে সেই ক্রিয়েটিভ আউটলেট ছিলেন রবিনহো। তবে মাঝে মাঝে অতিরিক্ত পাস দেওয়ায় ফাইনাল থার্ডে গিয়ে সু্যোগ নষ্ট করছিল ব্রাজিল। গত দুই ম্যাচের মতো ব্রাজিলের দুই সাইডব্যাক ফের ছন্দে ছিলেন। ফিলিপে লুইসের নেওয়া একটা শট প্রায় গোল হয়ে যাচ্ছিল। আবার দানি আলভেজ তাঁর সেরা ফর্মটাই দেখাচ্ছেন দেশের জার্সিতেও। ফের্নান্দিনহো ও এলিয়াসও মাঝমাঠ নিজেদের দখলে রাখছিলেন।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুর থেকেই ব্যবধান বাড়াতে আক্রমণ করতে থাকে ব্রাজিল। কুটিনহো ভাল সু্যোগ পেয়েও শট বাইরে মারেন। আবার কর্নার থেকে থিয়াগো সিলভার হেড দুর্দান্ত বাঁচান ভেনেজুয়েলা গোলরক্ষক। তবে খুব বেশিক্ষণ ব্রাজিলকে আটকে রাখতে পারেনি ভেনেজুয়েলা। উইং থেকে ইনসাইড-কাট করে ফির্মিনোকে অনবদ্য পাস বাড়ান উইলিয়ান। সঠিক জায়গায় সঠিক সময় থেকে গোল করে ২-০ করতে ভুল করেননি ফির্মিনো। দেখিয়ে দিলেন কেন ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের মতো ক্লাব তাঁকে সই করাতে আগ্রহী। ফির্মিনোর গোল দেখে হাসি ফুটে ওঠে ভিআইপি বক্সে বসে থাকা নেইমারের মুখেও। দ্বিতীয় গোল করে পুরোপুরি রক্ষণাত্মক ছকে চলে যায় ব্রাজিল। পরিবর্তে দাভিদ লুইজকে নামিয়ে ডিফেন্সে লোক বাড়িয়ে দেয় ব্রাজিল। খেলা স্লো করে দেয়। তবে ম্যাচের শেষেও ফুটবলপ্রেমীদের জন্য বরাদ্দ ছিল টানটান উত্তেজনা। পরিবর্তে নামা ভেনেজুয়েলার মিকু গোল করে ২-১ করেন। আর তাতেই শেষ কয়েক মিনিট জমে যায়। দ্বিতীয় গোলটা পাওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে ভেনেজুয়েলা। তবে ব্রাজিল লিড ধরে রাখতে সফল হয়।
নেইমার না থাকলেও পুরো ম্যাচে নিজেদের গুটিয়ে খেলেনি ব্রাজিল। বরং আক্রমণ করেছে। সেই চেনা পাসিং ফুটবল খেলেছে। ডিফেন্সও সারা ম্যাচে বেশ আঁটোসাঁটো ছিল। সঙ্গে গোলকিপার জেফারসনও নিজের কাজটা ভাল ভাবেই করলেন। কলম্বিয়ার বিরুদ্ধে হারের পরে প্রশ্ন উঠে গিয়েছিল, এই ব্রাজিলের ক্ষমতা কি? নেইমার ছাড়াই বা কতটা ভাল খেলবে দল? প্রমাণ হল, এই ব্রাজিল দুর্বল হতে পারে। তবে তারা জানে কী রকম ভাবে ধৈর্য্য রেখে জিততে হয়। প্রমাণ হল, ব্রাজিল কোনওদিন ব্যক্তিগত প্রতিভার উপরে র্নিভর করে থাকে না। ব্রাজিল মানেই দলগত কেরামতি।
কোয়ার্টার ফাইনালে ব্রাজিলের মুখোমুখি প্যারাগুয়ে। ২০১১ কোপা আমেরিকায় প্যারাগুয়েই ছিটকে দিয়েছিল ব্রাজিলকে। এ বার কী সেই ছবি পাল্টাতে পারবে দুঙ্গার দল, সেটা সময়েই বলবে।
অন্যান্য কোয়ার্টার ফাইনালে চিলির মুখোমুখি উরুগুয়ে। বলিভিয়া বনাম পেরু। তবে শেষ আটের সবথেকে বড় ম্যাচ কলম্বিয়া বনাম আর্জেন্তিনা।