নজরে: মহড়ায় বুমরা। সঙ্গী সঞ্জু স্যামসন। শুক্রবার গুয়াহাটিতে। পিটিআই
ছোট রান-আপ, সেই অদ্ভুত অ্যাকশন ও দুরন্ত গতি। প্রায় চার মাস এই দৃশ্য থেকে বঞ্চিত ছিলেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। শেষ ম্যাচ খেলেছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজে। সাবাইনা পার্কে প্রথম ইনিংসে হ্যাটট্রিক করে দলের জয় নিশ্চিত করে দিয়েছিলেন ভারতীয় পেসার। কিন্তু কোমরের চোট (স্ট্রেস ফ্র্যাকচার) তাঁকে মূল স্তরের ক্রিকেট থেকে বিশ্রাম নিতে বাধ্য করেছিল।
সময়ের তুলনায় দ্রুতই সুস্থ হয়ে উঠেছেন যশপ্রীত বুমরা। নতুন বছরে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচে গুয়াহাটি সাক্ষী থাকবে তাঁর প্রত্যাবর্তনের। শুক্রবার থেকেই যার প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন ভারতীয় পেসার। নেটে বল করেননি। কোচ রবি শাস্ত্রী ও বোলিং কোচ বি অরুণের সঙ্গে মাঠে মূল পিচের পাশে একটি আলাদা পিচে বল করলেন ৪৭ মিনিট ধরে। কারণ, আর পাঁচটি ম্যাচের তুলনায় বুমরার কাছে এই ম্যাচের গুরুত্ব সম্পূর্ণ ভিন্ন। মুম্বই ইন্ডিয়ান্সে সতীর্থ লাসিথ মালিঙ্গার সঙ্গেই তাঁর মূল লড়াই। দু’জনেই অদ্ভুত অ্যাকশনে বল করে ক্রিকেটবিশ্বে ত্রাস হয়ে উঠেছেন। পার্থক্য শুধু অভিজ্ঞতায়। তিন ফর্ম্যাটের ক্রিকেট মিলিয়ে মালিঙ্গার মোট শিকার ৫৪৫। বুমরার এখনও পর্যন্ত মোট শিকার ২১৬।
১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার সঙ্গেই বইছে ঠান্ডা হাওয়া। বুমরা সেই পরিবেশে প্রথম বল করে ছিটকে দিলেন পিচে পুঁতে রাখা একটিমাত্র স্টাম্প। বুঝিয়ে দিলেন, মাঠের বাইরে থাকলেও সেই বিধ্বংসী মেজাজ হারিয়ে যায়নি। পিছনে দাঁড়িয়ে ভারতীয় দলের হেড কোচ চেঁচিয়ে উঠলেন, ‘‘সাবাশ বুমরা।’’
শুরুতে বেশি গতি ব্যবহার করছিলেন না। ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করে তাঁর গতি। পরিবর্তন হয় লেংথেও। টি-টোয়েন্টিতে সফল হওয়ার জন্য যে যে অস্ত্রে শান দেওয়া দরকার, তার প্রত্যেকটিই করে গেলেন বুমরা। গুড লেংথে বল ফেলার পরে গতি বাড়িয়ে ইয়র্কার দিতে শুরু করেন ভারতীয় পেসার। টানা ১৫ থেকে ২০টি ডেলিভারি ইয়র্কার করে গেলেন। অধিকাংশ বলেই ছিটকে দিলেন স্টাম্প। বুমরার সঙ্গেই বল করছিলেন শার্দূল ঠাকুর ও শিবম দুবে। বুমরার তুলনায় তাঁদের বড্ড ফিকে দেখিয়েছে।
গতিময় ইয়র্কারের সঙ্গেই বুমরা মিশিয়ে দিলেন স্লোয়ার ইয়র্কার। বিপক্ষ অধিনায়ক লাসিথ মালিঙ্গার অন্যতম অস্ত্র এই ডেলিভারি। মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের হয়ে খেলার সুবাদে মালিঙ্গার থেকে স্লোয়ার ইয়র্কারের পাঠ নিয়েছিলেন বুমরা। এ বার তাঁর শেখানো অস্ত্র দিয়েই শ্রীলঙ্কার ত্রাস হয়ে উঠতে পারেন ভারতীয় পেসার।
বুমরার চমক এখানেই শেষ নয়। চোট থেকে ফিরে এসে একটি করে বৈচিত্রময় অনুশীলন করে নিলেন একাধিক বার। বাউন্সার ও স্লোয়ার-বাউন্সার মিশিয়েও পরীক্ষা করলেন। ম্যাচে তাঁর প্রত্যেকটি অস্ত্রই ধেয়ে আসবে শ্রীলঙ্কার ব্যাটসম্যানদের উদ্দেশে। কিন্তু একই রকম অ্যাকশনে কোন বল কী হবে, তা নিয়ে সংশয়ে থাকবেন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথেউজরা। ‘হোমওয়ার্ক’ করে আসতে না পারলে বুমরার রহস্য ভেদ করা কঠিন। সেই পরীক্ষায় নিরোশন ডিকওয়েল্লারা আদৌ পাশ করেন কি না দেখার।
শুক্রবার বর্ষাপাড়া ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শুধু ভারতই অনুশীলন করল। বৃহস্পতিবার গুয়াহাটি পৌঁছলেও অনুশীলন করেনি শ্রীলঙ্কা। প্রস্তুতির শুরুতেই ঋষভ পন্থ, শ্রেয়স আইয়ারকে নিয়ে গা ঘামিয়ে নেন অধিনায়ক বিরাট কোহালি। সুইৎজ়ারল্যান্ড থেকে ছুটি কাটিয়ে ফিরে ফিল্ডিং অনুশীলনের প্রথম ক্যাচটিই নেন ডান দিকে ঝাঁপিয়ে। চোট লাগার ভয়ে অনেকেই অনুশীলনে এ ধরনের ক্যাচ নিতে ভয় পাবেন। কিন্তু বিরাট সামনে থেকে দলকে নেতৃত্ব দিতে পছন্দ করেন। অনুশীলনেও কোনও রকম গা-ছাড়া ভাব দেখা যায় না। তাঁর নেতৃত্বেই ফিটনেস বিপ্লব ঘটে ভারতীয় শিবিরে। বিরাট জানেন, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে শেষ সিরিজে একাধিক ক্যাচ পড়েছে। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে সিরিজ শুরু হওয়ার আগে তাই ফিল্ডিংয়েই বেশি জোর দিলেন ভারত অধিনায়ক।
২০১৮-র অক্টোবরে এই মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ১০৭ বলে ১৪০ রান করে দলকে জিতিয়েছিলেন কোহালি। রোহিত শর্মার সঙ্গে ২৪৬ রানের জুটি গড়েছিলেন অধিনায়ক। কিন্তু ‘হিটম্যান’ এ বার বিশ্রামে। অধিনায়ক ও সহ-অধিনায়কের সেই জুটির অভাব অনুভব করবেন অনেকেই। কিন্তু বিরাট-শাসন থেমে থাকবে না। ছুটি কাটিয়ে ফিরে তিনি আরও চনমনে। বড় ইনিংস দিয়েই বছর শুরু করতে তৈরি গত বছরের সর্বোচ্চ রানের মালিক।
ভারতীয় দলের অনেকে এ দিন অনুশীলনে আসেননি। শিখর ধওয়ন, রবীন্দ্র জাডেজা, হোটেলেই বিশ্রাম নেন। শনিবার তাঁরা অনুশীলনে যোগ দেবেন।