মহমেডানের জার্সি তুলে দেওয়া হচ্ছে প্লাজার হাতে। —নিজস্ব চিত্র।
ইস্টবেঙ্গলের জার্সিতে তাঁকে অনেক বিদ্রুপ, সমালোচনা হজম করতে হয়েছিল। ২০১৮ সালে ডার্বি ম্যাচ হেরে যাওয়ার পরে লাল-হলুদ ছেড়ে দেয় ত্রিনিদাদ-টোব্যাগোর স্ট্রাইকারকে। কলকাতা ছেড়ে গোয়ায় পাড়ি জমান তিনি। চার্চিল ব্রাদার্সের হয়ে ফুল ফোটান উইলিস প্লাজা। এ বার তিনি ফিরে এসেছেন কলকাতায়। সই করেছেন মহমেডান স্পোর্টিংয়ে। পুরনো ক্লাব ইস্টবেঙ্গল, আইএসএল, বন্ধু সুনীল নারিন এবং সাদা-কালো জার্সিতে ভবিষ্যৎ নিয়ে আনন্দবাজার ডিজিটাল-কে সাক্ষাৎকার দিলেন উইলিস প্লাজা।
আপনি কি চ্যালেঞ্জ নিতে ভালবাসেন? ইস্টবেঙ্গল থেকে চলে গেলেন চার্চিল ব্রাদার্সে। সেখান থেকে বাংলাদেশের বসুন্ধরা কিংসে। এ বার ফিরলেন মহমেডান স্পোর্টিংয়ে। সম্পূর্ণ নতুন ক্লাব, নতুন পরিবেশ, পরীক্ষাও কঠিন। আই লিগের দ্বিতীয় ডিভিশনে খেলতে হবে আপনাকে।
আমি পেশাদার ফুটবলার। যে ক্লাবে ডাক পাব, সেই ক্লাবের হয়েই খেলবো। নিজের সেরাটা দেওয়ারই চেষ্টা করি এবং করবো। চার্চিলে ভাল অফার পেয়েছিলাম, তাই চলে গিয়েছিলাম। একই কারণে বসুন্ধরা কিংসে গিয়েছিলাম। এ বার বলতে পারেন কিছুটা হৃদয়ের ডাকেই মহমেডান স্পোর্টিংয়ের প্রস্তাবে চলে এসেছি। মহমেডান স্পোর্টিংয়ের ঐতিহ্য রয়েছে। প্রচুর সমর্থক। আমি যদি মহমেডান স্পোর্টিংকে আই লিগের প্রথম ডিভিশনে তুলতে পারি, তা হলে ভাল লাগবে। আর ক্লাবও বহু দিন পরে সাফল্য পাবে। সমর্থকদের মুখে হাসি ফুটবে। আমি সেটাই দেখতে চাই। আপনি বলছিলেন কঠিন পরীক্ষার কথা। পেশাদার ফুটবলারকে সব সময়েই কঠিন পরীক্ষায় বসতে হয়। অজানা, অচেনা পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে হয়। যত দ্রুত মানিয়ে নিতে পারবেন, ততই ভাল। পেশাদার হিসেবে এই চ্যালেঞ্জটা নিতে আমার ভালই লাগে।
আগেও তো মহমেডানে সই করেছিলেন।কিন্তু একটা ম্যাচও না খেলে চলে গিয়েছিলেন।
সেই সময়ে দেশের হয়ে আমার খেলা ছিল। তখন মহমেডানের হয়ে খেললে, ওদের সমস্যাই হত। কারণ ন্যাশনাল ডিউটি সবার আগে। দেশের হয়ে খেলার জন্য আমাকে ছাড়তেই হত। একজন গুরুত্বপূর্ণ প্লেয়ার ছাড়াই মাঠে নামতে হত মহমেডানকে। সেই কারণেই আমাকে চলে যেতে হয়েছিল। বলতে পারেন, তখনই স্থির করে নিয়েছিলাম, সুযোগ এলে আবার মহমেডানের হয়ে খেলব। ওদের কিছু ফিরিয়ে দিতে চাই। এ বার কর্তাদের ডাক আমি ফেরাতে পারিনি।
আরও পড়ুন: ‘ক্ষমতা রয়েছে কিন্তু ভিতরের আগুনটা দেখতে পাচ্ছি না ওদের মধ্যে’
পারবেন মহমেডান স্পোর্টিংকে প্রথম ডিভিশন আই লিগে তুলতে? দ্বিতীয় ডিভিশনে খেলার মতো মোটিভেশন পাবেন?
কেন পারব না? আমরা যদি নিজেদের ক্ষমতা অনুযায়ী খেলতে পারি, তা হলে শেষ হাসি সমর্থকরাই হাসবেন। আর কোনও অ্যাথলিট বা খেলোয়াড় কি খেলতে নামার আগে নিজের ক্ষমতা নিয়ে সন্দিহান থাকে? আমি পেশাদার ফুটবলার। যে কোনও পরিস্থিতির সঙ্গেই মানিয়ে নিতে হয়। আমি আশাবাদী।
আপনি ইস্টবেঙ্গলে খেলেছেন। সমর্থকদের আবেগ দেখেছেন। মহমেডান স্পোর্টি ক্লাব নিয়ে মারাত্মক আবেগপ্রবণ সমর্থকরা। সমর্থকদের উদ্দেশে কী বলবেন?
একটা কথাই বলবো। ক্লাবের পাশে থাকুন, সমর্থন করুন। মাঠে নেমে আমরা নিজেদের প্রয়োগ করতে পারলে সমর্থকদের মুখে হাসি ফোটাতে পারব বলেই আশাবাদী।
ওয়াসিম আক্রম, দীপেন্দু বিশ্বাস, বেলাল আহমেদরা এ বার দারুণ পরিশ্রম করে দল সাজিয়েছেন।
জানি। দলের উপরে ওঁদের পূর্ণ আস্থা রয়েছে। প্রচণ্ড পরিশ্রম করে ওরা এ বারের দল তৈরি করেছে। আমাকে ওরা যেভাবে সমাদর করে ডেকে এনেছে, তাতে আমি খুব খুশি। ক্লাবকে একটা অন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন কর্তারা। ওদের এই চেষ্টায় সামিল হতে পেরে আমারও ভাল লাগছে। আরও একটা কথা বলতেই হবে, ওঁরা আমাকে সন্তানের মতোই স্নেহ করছেন। আমাদের হাতে পাঁচটা ম্যাচ রয়েছে। আমি এবং আমার সতীর্থরা ওদের এই মরসুমে খুশি করতে পারব বলেই আমি আশাবাদী।
একটু অন্য প্রসঙ্গে আসি। আপনি চার্চিলের হয়ে অনেক গোল করেছেন। সুপার কাপে আইএসএল-এর টিমকে একাই হারিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু আইএসএল-এ আপনাকে দেখা যায় না কেন?
এখনও পর্যন্ত আইএসএল-এর কোনও ক্লাব থেকে আমাকে ডাকা হয়নি। দেশ ও প্লেয়ারের নাম দেখে আইএসএল-এ ডাকা হয় বলেই আমার মনে হয়েছে। আমাকে ডাকা হচ্ছে না, তাই মনের ভিতরে একটা জেদ জন্মাচ্ছে। মাঠে যদি ওদের বিরুদ্ধে খেলার সুযোগ হয়, তা হলে দেখিয়ে দেব আমিও কোনও অংশে কম নই। সুপার কাপে ওই জেদটা নিয়েই খেলতে নেমেছিলাম। দিল্লিকে হারিয়ে দিয়েছিলাম।
মোহনবাগান এ বার আইএসএল খেলবে। ইস্টবেঙ্গল খেলবে কিনা তা এখনও পরিষ্কার নয়। ক্লাব কর্তারা মরিয়া একটা চেষ্টা করছেন। আপনার পুরনো ক্লাবের আইএসএল ভবিষ্যৎ নিয়ে কী বলবেন?
ইস্টবেঙ্গল ক্লাব কী করবে সেটা ওদের কর্তারাই স্থির করবেন। তবে ওদের যতটা চিনি, জানি, মনে হয় না ওরা অন্য কোনও ক্লাবের সঙ্গে মার্জড হবে। এটা আমার ব্যক্তিগত মতামত, অন্য কোনও ক্লাবের সঙ্গে মার্জ করে যেন আইএসএল না খেলে ইস্টবেঙ্গল। ইস্টবেঙ্গল নামটাই যথেষ্ট। আমি চাই ইস্টবেঙ্গল নিজের নামেই আইএসএল খেলুক। আর মার্জ করে কী হবে? এটিকে আর মোহনবাগানের তো মার্জার হয়েছে।মার্জারের ফলে তো শুনছি ফুটবলাররা জব লেস হয়ে পড়ছে। ক্লাব খুঁজছে। সেই কারণেই আমার মতে, ইস্টবেঙ্গল নিজের নামেই আইএসএল খেলুক। ইস্টবেঙ্গল আইএসএল খেললে অনেক ফুটবলার খেলতে পারবে। সুযোগও তৈরি হবে।
আপনার স্কুল জীবনের বন্ধু তো সুনীল নারিন। আইপিএলে বন্ধুর খেলা নিশ্চয় দেখবেন?
সুনীলের সঙ্গে অনেকদিন কথা হয়নি। কলকাতায় যখন ছিলাম, তখন কথা হয়েছিল। আমি আর সুনীল এক স্কুলে পড়তাম। একসঙ্গে ক্রিকেটও খেলেছি। তার পরে দু’ জনের পথ আলাদা হয়ে গিয়েছে। এ বারের আইপিএলের আগে সুনীলের সঙ্গে কথা হলে বলবো, বন্ধু, তোমাকে দারুণ পারফরম্যান্স দিতে হবে। দলকে জেতানোর মতো পারফরম্যান্স তোমার কাছ থেকে চাই।