ফাইল চিত্র।
ভারতীয় বোর্ডের জাতীয় নির্বাচকমণ্ডলীতে নতুন প্রতিনিধিদের আসা নিয়ে নাটক জমতে শুরু করেছে। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়দের নতুন বোর্ড জানিয়ে দিয়েছে, দু’জন নির্বাচকই খালি বদল হবে। দক্ষিণাঞ্চল থেকে এম এস কে প্রসাদের মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে। তাঁকে চলে যেতে হবে। মধ্যাঞ্চলের প্রতিনিধি হিসেবে গগন খোড়াও তাঁর মেয়াদকাল কাটিয়ে ফেলেছেন। নির্বাচক কমিটিতে বাকি তিন জন — পূর্বাঞ্চল থেকে দেবাং গাঁধী, উত্তর থেকে শরণদীপ সিংহ এবং পশ্চিমাঞ্চল থেকে যতীন পরাঞ্জপের আরও এক বছর বাকি রয়েছে। তাঁদের সেই মেয়াদ সম্পূর্ণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বোর্ড।
মেয়াদ শেষ করে ফেলা দু’জনের জায়গায় একাধিক প্রার্থী রয়েছেন। মধ্যাঞ্চল থেকে যেমন প্রাক্তন অফস্পিনার রাজেশ চৌহান এবং বাঁ হাতি ব্যাটসম্যান অময় খুরাসিয়া আবেদন করেছেন বলে খবর। এই দু’জনের মধ্যে কিছুটা হলেও চৌহান এগিয়ে। মহম্মদ আজহারউদ্দিন অধিনায়ক থাকার সময় দেশের মাটিতে স্পিন আক্রমণ শানিয়ে যে জেতার নকশা তৈরি হয়েছিল, তাতে অন্যতম অস্ত্র ছিলেন অফস্পিনার চৌহান। যদিও পরের দিকে তাঁর বোলিং অ্যাকশন নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় কেরিয়ার খুব বেশি দূর গড়ায়নি।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, সৌরভের অধীনে খেলা মহম্মদ কাইফ আবেদন করতে পারেন মধ্যাঞ্চল থেকে। কিন্তু কাইফ আইপিএলে দিল্লি ক্যাপিটালসের সঙ্গে যুক্ত। লোভনীয় চুক্তি ছেড়ে আসবেন না বলেই খবর। তবে বিরাট কোহালিদের ব্যাটিং কোচ হিসেবে বরখাস্ত হওয়া সঞ্জয় বাঙ্গারের নাম ভেসে উঠেছে। বাঙ্গার ঘরোয়া ক্রিকেটে রেলওয়েজের হয়ে খেলেছেন। ভারতীয় দলের পদ হারানোর পরে বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করছেন। কমেন্ট্রি বক্সে তাঁকে দেখা গিয়েছে। কিন্তু কোনও আইপিএল দলের সঙ্গে এখনও যুক্ত হননি।
তবে আগামী কয়েক দিনে দক্ষিণাঞ্চল থেকে নতুন প্রতিনিধি কে হবেন, তা নিয়ে জটলা বেড়ে যেতে পারে। এখন পর্যন্ত ফেভারিট প্রাক্তন লেগস্পিনার লক্ষ্মণ শিবরামকৃষ্ণন। তিনি প্রাক্তন বোর্ড প্রধান এন শ্রীনিবাসনের পছন্দের প্রার্থী। বোর্ডে ক্ষমতাসীন প্রধান কর্তারা কতটা শ্রীনির ইচ্ছাকে গুরুত্ব দিতে চাইবেন, তার উপরে নির্ভর করছে শিবরামকৃষ্ণনের ভাগ্য। কয়েক দিন আগেই মুম্বইয়ে শীর্ষ কর্তাদের বৈঠকে ধোনিকে চুক্তিতে রাখতে চেয়েও সফল হননি শ্রীনি। তাই আগের মতো প্রতাপ যে তাঁর নেই, তা স্পষ্ট।
বোর্ডের প্রভাবশালী মহলে সকলে যে প্রাক্তন লেগস্পিনারের নাম শুনে খুব উচ্ছ্বসিত, এমন নয়। শিবরামকৃষ্ণন ১৯৮৫-তে অস্ট্রেলিয়ায় বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপ জেতা ভারতীয় দলের অন্যতম প্রধান সদস্য। সেই দলে এখনকার হেড কোচ রবি শাস্ত্রী ছিলেন, যিনি সেই প্রতিযোগিতায় ‘চ্যাম্পিয়ন অব চ্যাম্পিয়ন্স’ হয়েছিলেন। জাতীয় অ্যাকাডেমিতে স্পিন বোলিং পরামর্শদাতার কাজও করেছেন তিনি। সমস্যা হচ্ছে, ৫৪ বছরের শিবরামকৃষ্ণন খেলেছেন মাত্র ৯টি টেস্ট এবং ১৬টি ওয়ান ডে। শিবা এলে তিনিই চেয়ারম্যান হয়ে যেতে পারেন, এমন একটা সম্ভাবনাও রয়েছে। কিন্তু নতুন বোর্ডে শীর্ষ কর্তাদের একটা অংশ মাত্র ২৫টি আন্তর্জাতিক ম্যাচের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন শিবাকে চেয়ারম্যান পদে বসানোর পক্ষে নেই। এম এস কে প্রসাদ থাকাকালীন বার বার নির্বাচকদের খেলোয়াড়জীবনের অভিজ্ঞতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। প্রাক্তনরা তোপ দেগেছেন, মাত্র ৬টি টেস্ট এবং ১৭টি ওয়ান ডে খেলা প্রসাদকে কী করে চেয়ারম্যান পদে বসানো হল? বর্তমান কর্তারা কেউ কেউ এই দিকটা নিয়ে চিন্তিত। শিবরামকৃষ্ণন বা বাঙ্গারকে (২৭টি আন্তর্জাতিক ম্যাচের অভিজ্ঞতা রয়েছে) আনলে সেই সব সমালোচনা কি থামানো যাবে? আর একটু ওজনদার কোনও নাম চেয়ারম্যান হিসেবে আনা উচিত কি না, তা ভেবে দেখা হচ্ছে। কারও কারও মুখে বেঙ্কটেশ প্রসাদের নাম শোনা যাচ্ছে। কেউ আবার বলছেন, কৃষ্ণমাচারী শ্রীকান্ত এর আগে চেয়ারম্যান থাকার সময় পুরো মেয়াদ সম্পূর্ণ করেননি। যদি সময় বাকি থাকে, তাঁকে নিয়ে আসা হোক। প্রসাদ বা শ্রীকান্ত আবেদন করেন কি না, সেটাই দেখার।
এই মুহূর্তে যা সব নাম পাওয়া যাচ্ছে, তাতে সব চেয়ে বেশি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা থাকছে রাজেশ চৌহানের। তিনি ২১টি টেস্ট ও ৩৫টি ওয়ান ডে খেলেছেন। শিবরামকৃষ্ণনের চেয়ে যা বেশি। আবার বয়সের দিক থেকে লেগস্পিনার শিবা অফস্পিনার চৌহানের চেয়ে বড়। তা হলে এঁরা দু’জন নির্বাচক কমিটিতে এলে কাকে চেয়ারম্যান করা হবে? আবার নির্বাচকদের যাঁরা নির্বাচন করবেন, সেই ক্রিকেট উপদেষ্টা কমিটিও নতুন করে গড়তে হবে। গৌতম গম্ভীরের বিরুদ্ধে স্বার্থ সংঘাতের অভিযোগ ওঠায় তাঁকে আনা যাবে না। দিলীপ দোশীর নাম শোনা যাচ্ছিল কিন্তু তাঁর ক্ষেত্রেও কোনও সমস্যা আছে কি না, দেখে নিতে হবে। সব মিলিয়ে উত্তর কম, প্রশ্নই বেশি।