গত বারের দল থেকে ১১জন ক্রিকেটারকে ছেড়ে দিয়েছে কলকাতা নাইট রাইডার্স। এর মধ্যে সাতজন স্বদেশি ক্রিকেটার। আর চারজন বিদেশি। ফলে, নিলামে দল গুছিয়ে নিতে নির্দিষ্ট পরিকল্পনা থাকতেই হবে নাইটদের। নিলামে খরচ করার জন্য ৩৫ কোটি ৬৫ লক্ষ টাকা হাতে রয়েছে শাহরুখের ফ্যাঞ্চাইজির। এর চেয়ে বেশি টাকা হাতে নিয়ে নিলামে যাচ্ছে শুধু কিংস ইলেভেন পঞ্জাব। তাদের হাতে রয়েছে ৪২ কোটি ৭০ লক্ষ টাকা।
ক্রিস লিন ও জো ডেনলি, কেকেআর ছেড়ে দিয়েছে দু’জন বিদেশি ওপেনারকেই। এর মধ্যে লিন বহু দিন ছিলেন দলের অবিচ্ছেদ্য অংশ। টপ অর্ডারে ভাল শুরু করার দায়িত্ব থাকত তাঁর উপরেই। ছেড়ে দেওয়া হয়েছে আর এক ওপেনার রবিন উথাপ্পাকেও। ফলে, নিলামে ভাল বিদেশি ওপেনার প্রয়োজন কলকাতার। দেখে নেওয়া যাক, নিলামে কোন বিদেশি ওপেনারদের দিকে নজর থাকবে নাইটদের।
অ্যারন ফিঞ্চ: আইপিএলে সাতটি দলের হয়ে খেলেছেন এই অজি ওপেনার। যা রেকর্ড। তাঁর আগে কোনও ক্রিকেটার আইপিএলে এতগুলো দলের হয়ে খেলেননি। এই তথ্যেই পরিষ্কার যে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো কতটা গুরুত্ব দিয়ে দেখেছে অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ককে। তবে এখনও কেকেআরে খেলেননি তিনি।
এই মুহূর্তে ফর্মেও রয়েছেন ফিঞ্চ। ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপে ১০ ইনিংসে ৫০৭ রান করেছিলেন তিনি। অস্ট্রেলিয়াকে সেমিফাইনালে তোলার নেপথ্যে তাঁর অবদান ছিল অনেকটাই। তা ছাড়া তিনি অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক। অনায়াসে কেকেআরের ক্যাপ্টেন করা যায় তাঁকে। আইপিএলে নেতৃত্ব দেওয়ার অভিজ্ঞতা তাঁর রয়েওছে।
লেন্ডল সিমন্স: আইপিএলে দীর্ঘদিন ধরেই খেলছেন ক্যারিবিয়ান এই ওপেনার। এখনও পর্যন্ত ২৯ ম্যাচ খেলেছেন। করেছেন ১০৭৯ রান। মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের প্রাক্তন ওপেনারের আইপিএলে সেঞ্চুরিও রয়েছে। এই সেঞ্চুরি এসেছিল ২০১৪ সালে কিংস ইলেভেন পঞ্জাবের বিরুদ্ধে। তবে মুম্বই ইন্ডিয়ান্স ছেড়ে দেওয়ার পর আইপিএলে তিনি আর খেলেননি।
আগের দু’বার আইপিএলের নিলামে সিমন্সকে কোনও ফ্যাঞ্চাইজি নিতে আগ্রহ দেখায়নি। যদিও এ বারের ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগে ত্রিনবাগো নাইট রাইডার্সের হয়ে ১১ ইনিংসে ৪৩০ রান করেছেন তিনি। সদ্য তিরুঅনন্তপুরমে ভারতের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে ম্যাচ জেতানো ইনিংসও খেলেছেন ডানহাতি এই ওপেনার।
কলিন মুনরো: দিল্লি ক্যাপিটালস ছেড়ে দিয়েছে নিউজিল্যান্ডের এই অলরাউন্ডারকে। ফলে, এই মুহূর্তে ফাঁকা রয়েছেন তিনি। আরও এক কারণে তাঁকে নিয়ে আগ্রহ দেখাতে পারে কেকেআর। এই ফ্র্যাঞ্চাইজিরই ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগের দল ত্রিনবাগোর হয়ে ধারাবাহিক থেকেছেন তিনি। এ ছাড়া আইপিএলে দিল্লি ডেয়ারডেভিলস, মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের হয়েও খেলেছেন।
বাঁ-হাতি কিউয়ি ওপেনার চার বছরে ত্রিনবাগোর হয়ে ১৫০০ রান করেছেন। ২০১৮ মরসুমে তিনি ৫৬৭ রান করেছিলেন। যা ছিল ফ্যাঞ্চাইজির হয়ে সেই মরসুমের সর্বাধিক রান। এর আগে তিনি কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়েও খেলেছেন। ফলে নাইট ম্যানেজমেন্টও ভাল ভাবেই জানে ৩২ বছর বয়সি ঠিক কী করতে পারেন।
ডেভিড মালান: আইপিএলে কখনও খেলেননি ডেভিড মালান। তবে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে তাঁর অভিজ্ঞতা অগাধ। আর শুধু ঘরোয়া টি-টোয়েন্টিতেই নয়, আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতেও নিয়মিত তিনি। ইংল্যান্ডের নিউজিল্যান্ড সফরে মাত্র ৪৮ বলে সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি। যা কোনও ইংল্যান্ড ব্যাটসম্যানের টি-টোয়েন্টিতে দ্রুততম সেঞ্চুরি।
টি-টোয়েন্টি ব্লাস্টেও ঝড় তুলেছেন মালান। ১৪ ম্যাচে করেছেন ৪৯০ রান। এর মধ্যে ১১৭ রানের ইনিংসও রয়েছে। ৩২ বছর বয়সি বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যান ইংল্যান্ডের হয়ে ৯টি-টোয়েন্টিতে ৫৭.২৫ গড়ে ৪৫৮ রান করেছেন। স্ট্রাইক রেট ১৫৬.৩১।
ব্রেন্ডন কিং: ভারতের বিরুদ্ধে টি-টোয়েন্টি সিরিজে সদ্য খেললেও তেমন নজর কাড়তে পারেননি ক্যারিবিয়ান এই ওপেনার। কিন্তু তা দিয়ে এই ওয়েস্ট ইন্ডিয়ানকে বিচার করলে ভুল হবে। কারণ, ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগে রীতিমতো মেজাজে ব্যাট করেছেন ব্রেন্ডন কিং। তিনিই টুর্নামেন্টের সর্বাধিক রান সংগ্রহকারী।
গায়ানা আমাজন ওয়ারিয়র্সের হয়ে ১২ ম্যাচে ৫৫.১১ গড়ে ৪৯৬ রান করেছেন ব্রেন্ডন। এর মধ্যে ৭২ বলে ১৩২ রানের বিধ্বংসী ইনিংসও রয়েছে। কলকাতা যদি তাঁকে নেয়, তবে বিকল্প উইকেটকিপার হিসেবেও ব্যবহার করতে পারে। যে কাজটা রবিন উথাপ্পা করতেন, সেই ভূমিকায় দেখা যেতেই পারে তাঁকে।