ওয়েলিংটনে প্রথম টেস্টে চার দিনের মধ্যে ১০ উইকেটে জিতেছে নিউজিল্যান্ড। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ শুরু করার পর এই প্রথম টেস্ট হারল বিরাট কোহালির দল। কোনও ইনিংসেই ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা দু’শো রান করতে পারেনি। শনিবার থেকে ক্রাইস্টচার্চে শুরু হচ্ছে সিরিজের শেষ টেস্ট। ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য ভারতকে কী করতে হবে? স্ট্র্যাটেজিতে কী বদল আনতে হবে বিরাটদের?
বিরাট কোহালি ওয়েলিংটন টেস্টের পর বলেছিলেন যে, পরাজয়ের নেপথ্যে বড় কারণ হল টস। টস হেরে প্রথম দিন সকালে ব্যাট করতে গিয়েই চাপে পড়ে গিয়েছিল ভারতীয় ইনিংস। সেই চাপ আর কাটিয়ে ওঠা যায়নি। কিউয়ি পেসাররা সবুজ পিচে সকালের মেঘলা পরিবেশকে কাজে লাগিয়ে বিধ্বংসী হয়ে উঠেছিলেন।
মুশকিল হল, টস জেতা যাবে কি না, তার উত্তর একমাত্র সময়ই দিতে পারে। তাই টসকে প্রথমেই মাথার বাইরে রাখতে হবে। টস হেরে প্রথমে ব্যাট করতে হলে ওখানেই ম্যাচ হেরে যাওয়া নিশ্চিত মনে করলে মানসিক ভাবেই পিছিয়ে পড়তে হবে। আর সেই পিছিয়ে প়ডা পুষিয়ে দেওয়া অসম্ভব।
আসলে সিম-সুইং কন্ডিশনে ব্যাটসম্যানদের টেকনিকের দুর্বলতাই ফুটে উঠেছে প্রথম টেস্টে। পৃথ্বী শ যেমন ওপেনারের ভূমিকায় ভরসা দিতে ব্যর্থ। তাঁর ব্যাটিং দেখে নিউজিল্যান্ডের পরিবেশে টেস্ট ক্রিকেটের পক্ষে অচল বলে মনে করছেন অনেকে। রোহিত শর্মার অনুপস্থিতিতে পাওয়া সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি পৃথ্বী।
দ্বিতীয় টেস্টে শুভমন গিলকে খেলানো একটা সমাধান হতে পারে। নিউজিল্যান্ডে এসে ‘এ’ দলের হয়ে ধারাবাহিক থেকেছেন তিনি। একটা ডাবল সেঞ্চুরিও করেছেন গিল। ছন্দে থাকা ব্যাটসম্যানকে খেলানো যেতেই পারে। অন্তত, পৃথ্বী যা রান করেছেন, তার চেয়ে খারাপ কিছু হবে না।
ভুল শট বাছাই। বেসিন রিজার্ভে শট নেওয়ার ক্ষেত্রে অনেক ভুল করেছেন ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা। ময়াঙ্ক আগরওয়াল, বিরাট কোহালিরা দ্বিতীয় ইনিংসে অহেতুক শট নিয়ে ফিরেছেন সাজঘরে। ভুল শটে উইকেট দেননি শুধু চেতেশ্বর পূজারা ও হনুমা বিহারি।
পূজারার সমস্যা আবার অন্য। ভুল শট ছেড়ে দিন, তিনি শটই নিচ্ছেন না। ফলে, বোলাররা ক্রমশ চড়ে বসছে মাথায়। স্কোরবোর্ড সচল রাখা কিন্তু ব্যাটসম্যানেরই দায়িত্ব। যা পালন করতে পারেননি পূজারা. ফলে, উল্টো প্রান্তে থাকা ব্যাটসম্যান চাপে পড়ে যাচ্ছে।
অধিনায়ক বিরাট কোহালিকে নিয়ে বাড়ছে উদ্বেগ। ইডেনে গোলাপি বলের টেস্টে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে শেষ সেঞ্চুরি এসেছিল তাঁর। কোহালির ব্যাটে এই সফরে এসেছে একটাই মাত্র হাফ-সেঞ্চুরি। স্বয়ং তিনি যদিও মানছেন না ব্যাডপ্যাচের কথা। তবে একমাত্র বড় রানই পারে এই চর্চায় দাঁড়ি ফেলতে।
ভারতের মিডল অর্ডার চেতেশ্বর পূজারা, বিরাট কোহালি ও অজিঙ্ক রাহানের উপর নির্ভরশীল। গত অস্ট্রেলিয়া সফরে পূজারার ব্যাট নির্ভরতা জুগিয়েছিল দলকে। ওয়েলিংটনে সেই ঢালই উধাও থেকেছে। ফলে, মিডল অর্ডার প্রথমেই চাপে পড়ে গিয়েছে। যা আর কাটানো যায়নি।
পূজারাকে অবশ্য শুধু ক্রিজে টিকে থাকলেই চলবে না। ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে ব্যাট করতে হবে। কারণ, অনেক ক্ষণ ক্রিজে থাকা তখনই উপকারী যদি তার প্রতিফলন ঘটে রানে। তা একমাত্র হতে পারে তখনই যখন আলগা বলগুলোকে সীমানায় পাঠানো সম্ভব। খারাপ বলেও রান না এলে দলই চাপে পড়ে যায়।
হনুমা বিহারি দুই ইনিংসেই বড় রানের সুযোগ পেয়েছিলেন। কিন্তু তা কাজে লাগাতে পারেননি। ভারতীয় দলে যা লড়াই, তাতে সব সুযোগই কাজে লাগাতে হবে তাঁকে। না হলে মুশকিল। লোকেশ রাহুল, শ্রেয়স আইয়াররা কিন্তু ফর্মেই আছেন এখন। ফলে, সুযোগ নষ্ট করলে চাপ বাড়বে নিজেরই।
ঋদ্ধিমান সাহার জায়গায় প্রথম এগারোয় উইকেটকিপার হিসেবে ওয়েলিংটনে এসেছিলেন ঋষভ পন্থ। ব্যাটিং দক্ষতায় তিনি এগিয়ে, এটাই ছিল যুক্তি। দুই ইনিংসেই সুযোগ ছিল ঋষভের সামনে। কিন্তু সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি তিনি। অবশ্য প্রথম ইনিংসে রান আউট হতে হয়েছিল তাঁকে।
কিন্তু, রান না পেলে ঋষভকে খেলানোর যৌক্তিকতা নেই। এটা ভারতীয় দল পরিচালন সমিতিও জানে। ঋষভ যদি ব্যাট হাতে ভরসাই না দিতে পারেন, তাহলে ঋদ্ধিকে খেলাতে অসুবিধা কোথায়? অন্তত, উইকেটকিপার হিসেবে সেরা লোককেই খেলানো হচ্ছে, এই ভরসাটুকু তাতে থাকে। তবে যিনিই খেলুন, রান চাই ব্যাটে।
প্রশ্ন হচ্ছে, এই অবস্থায় কি রবীন্দ্র জাডেজাকে খেলানো উচিত? রবিচন্দ্রন অশ্বিন এখন আর ব্যাট হাতে রান পাচ্ছেন না। উপমহাদেশের বাইরে বল হাতেও ফারাক গড়ে দিচ্ছেন, এমন পারফরম্যান্স নেই। সেক্ষেত্রে জাডেজাকে খেলানো যেতেই পারে।
নিউজিল্যান্ডের লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যানরাও ব্যাট হাতে ভরসা দিয়েছে দলকে। কিন্তু, কোনও ইনিংসেই ভারতের তলার দিকের ব্যাটসম্যানরা তা দিতে পারেননি। আধুনিক ক্রিকেটে কিন্তু বোলারদেরও রান করা জরুরি।
নিউজিল্যান্ডের যখন সাত উইকেট পড়ে গিয়েছিল ওয়েলিংটন টেস্টে, তখন লিড ছিল মাত্র ৬০ রান। সেখান থেকে কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম, কাইল জেমিসন, ট্রেন্ট বোল্টরা লিড নিয়ে যান ১৮৩ রানে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এখানেই ম্যাচ বেরিয়ে গিয়েছিল ভারতের হাত থেকে।
যশপ্রীত বুমরা দলের এক নম্বর স্ট্রাইক বোলার। কিন্তু তাঁর বোলিংয়ে পুরনো ছন্দ নেই। উইকেট আসছে না। ফলে, বিপক্ষ ইনিংস শুরু থেকেই তরতরিয়ে এগোচ্ছে। ভারতকে টেস্ট সিরিজ ড্র করতে গেলে বুমরাকে উইকেট নিতেই হবে।