বিরাট জবাব: মন্তব্য হবেই, দলের স্বার্থ দেখেই একাদশ বাছি

অভিজ্ঞ রোহিত শর্মার পরিবর্তে হনুমা বিহারীকে খেলানোর সিদ্ধান্তেও সফল কোহালি। প্রথম ইনিংসে ৩২ রান করে ফিরে যাওয়ার পরে দ্বিতীয় ইনিংসে ৯৩ রানের দুরন্ত ইনিংস উপহার দেন অন্ধ্রপ্রদেশের তরুণ।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০১৯ ০৫:০৯
Share:

উল্লাস: দু’ইনিংস মিলিয়ে আট উইকেট। ইশান্ত শর্মার সঙ্গে উচ্ছ্বাস অধিনায়ক কোহালির। রবিবার। এপি

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে প্রথম টেস্টে প্রথম একাদশে সুযোগ পাননি আর অশ্বিন ও রোহিত শর্মা। যা নিয়ে বেশ কয়েকজন প্রাক্তন ক্রিকেটার অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন। বিষয়টি ভারতীয় অধিনায়কের কানেও পৌঁছেছে। কিন্তু বিরাট কোহালির সামনে প্রাক্তনদের প্রতিক্রিয়ার চেয়েও বড় দলগত সংহতি। তাই প্রত্যেক ম্যাচের আগে দলীয় বৈঠকে আলোচনা করেই সেরা একাদশ বেছে নেওয়ার চেষ্টা করেন ভারত অধিনায়ক।

Advertisement

প্রথম টেস্টে অশ্বিনের পরিবর্তে রবীন্দ্র জাডেজাকে খেলানোয় সুনীল গাওস্কর প্রশ্ন তুলেছিলেন। বলেছিলেন, ‘‘অদ্ভুত সিদ্ধান্ত।’’ কিন্তু সেই জাডেজা কঠিন পরিস্থিতিতে ব্যাট করতে নেমে হাফসেঞ্চুরি করে দলকে ভাল জায়গায় পৌঁছে দেন। সঙ্গে গতিময় পিচে দু’টি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট নিয়ে অধিনায়কের সিদ্ধান্তের মর্যাদা রাখেন তিনি। ভারত জেতে ৩১৮ রানে। সেই সঙ্গে ৬০ পয়েন্ট পেয়ে টেস্ট বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের তালিকায় শীর্ষে বিরাট কোহালির দল।

তাই বিরাটের বলতে দ্বিধা নেই, ‘‘দলের স্বার্থ মেনেই প্রথম একাদশ গড়া হয়। সব সময় দলীয় বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় কোন এগারোজন খেললে সব চেয়ে ভাল ফল পাওয়া যাবে। আমাদের একাদশ নিয়ে অনেকেই তাঁদের মতামত দিতে পারেন, কিন্তু এও জেনে রাখা দরকার দলীয় স্বার্থ না মেনে প্রথম একাদশ গড়া হয় না।’’

Advertisement

অভিজ্ঞ রোহিত শর্মার পরিবর্তে হনুমা বিহারীকে খেলানোর সিদ্ধান্তেও সফল কোহালি। প্রথম ইনিংসে ৩২ রান করে ফিরে যাওয়ার পরে দ্বিতীয় ইনিংসে ৯৩ রানের দুরন্ত ইনিংস উপহার দেন অন্ধ্রপ্রদেশের তরুণ। এ ছাড়াও প্রয়োজনে তিন-চার ওভার তাঁকে দিয়ে বলও করিয়ে নিতে পারেন অধিনায়ক। তাই রোহিতের আগে বেছে নেওয়া হয় হনুমাকেই। কোহালি বলেছেন, ‘‘দলের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য রোহিতের আগে হনুমাকে বেছে নেওয়া হয়। ভাল ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি পার্ট-টাইম বোলিংও করে দেয়। স্লো ওভার রেটের সময় ওকে দিয়ে বল করিয়ে নেওয়া যায়।’’

ক্রিকেটারদের পারফরম্যান্সের পাশাপাশি তাঁদের ওয়ার্কলোড সম্পর্কেও ওয়াকিবহাল বিরাট। যেমন টেস্ট বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে খেলানোর জন্য সীমিত ওভারের সিরিজে দলে রাখা হয়নি যশপ্রীত বুমরাকে। যার ফল হাতেনাতে পেল ভারত। রবিবার বিপক্ষকে ১০০ রানে অলআউট করার পিছনে বুমরাই মূল কাণ্ডারি। আট ওভারে সাত রান দিয়ে পাঁচ উইকেট নেন ভারতীয় পেসার। তাঁর পরিসংখ্যান ৮-৪-৭-৫। বাউন্সার ও ইনসুইংয়ের সঙ্গে আউটসুইংও রপ্ত করেছেন ভারতীয় পেসার। কোহালি বলেছেন, ‘‘বুমরার থেকে সেরাটা বার করে আনার জন্য ওর ওয়ার্কলোড সম্পর্কে খবর রাখা জরুরি। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে ওকে পাওয়ার জন্য সীমিত ওভারের সিরিজে বিশ্রাম দেওয়া হয়েছিল। ভারতীয় পেস বিভাগকে এ ভাবেই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে খেলানোর পরিকল্পনা রয়েছে। শামির ওয়ার্কলোড সম্পর্কেও নজর রাখা হয়। ইশান্ত যে হেতু টেস্টই খেলে, তাই ওকে নিয়ে সেই সমস্যা নেই।’’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘‘ইশান্ত, শামি, বুমরা কোনও ম্যাচে খেলছে। ওদের মধ্যে কোনও একজনকে বিশ্রাম দিতে হলে আমার কাছে বিকল্পও তৈরি। উমেশ বসে আছে। নবদীপ সাইনিকে এখনও টেস্ট দলে সুযোগ দেওয়া হয়নি, কিন্তু ও তৈরি হচ্ছে।’’

বোলিং বিভাগের সাফল্যের সঙ্গেই কোহালি মুগ্ধ অজিঙ্ক রাহানের পারফরম্যান্সে। দু’বছর আগে সেঞ্চুরি করেছিলেন রাহানে। তার পর থেকে সে রকম রান পাচ্ছিলেন না। ফর্ম হারিয়েছিলেন। কয়েকটি ম্যাচে দলের বাইরে বসতেও হয়েছে। কিন্তু অ্যান্টিগায় প্রথম ইনিংসে ৮১ রান করার পরে দ্বিতীয় ইনিংসে ১০২ রান করে সেঞ্চুরি খরা কাটালেন রাহানে। ম্যাচের সেরাও বেছে নেওয়া হয় ভারতের সহ-অধিনায়ককে। রাহানে ফর্মে ফেরায় দলের মিডল অর্ডার নিয়ে স্বস্তিতে ভারত অধিনায়ক। বলছিলেন, ‘‘জিঙ্কস (রাহানেকে এই নামেই ডাকা হয়) ফর্মে ফেরায় অনেকটা স্বস্তিতে দল। অ্যান্টিগার কঠিন উইকেটে দুই ইনিংসেই দুরন্ত ব্যাটিং করেছে ও। কে এল রাহুলও খারাপ ব্যাটিং করেনি। দুই ইনিংসেই উইকেটে থিতু হয়ে গিয়েছিল। নতুন বল সামলানোর কাজটি ও করে গিয়েছে। তিন থেকে চার বার ম্যাচ থেকে বেরিয়ে গিয়েও আমরা ফিরে এসেছি। অস্ট্রেলিয়া সফরের পরে এটা কিন্তু একটি ইতিবাচক দিক।’’

অধিনায়ক নিজেকে ভাগ্যবান মনে করেন। কারণ, দলে যাঁদের তিনি সুযোগ দিচ্ছেন তার মধ্যে অধিকাংশই পারফর্ম করছেন। যা অধিনায়কের কাজটি অনেকটাই সহজ করে দিচ্ছে। এটাই কি সাফল্যের রসদ? কোহালির উত্তর, ‘‘সাফল্যের রসদ কিন্তু দলের মধ্যে এই বোঝাপড়া। সবাই কিন্তু সবার সঙ্গে মিলেমিশে থাকে। কাকে দলে নেওয়া হবে অথবা কাকে নেওয়া হবে না, সেই সিদ্ধান্ত আমি নিলেও ওরা পারফর্ম না করলে আঙুল আমার দিকে উঠবে। সেই সুযোগ ওরা দিচ্ছে না।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আমি ভাগ্যবান যে, দলকে অনেক ভাবে সাহায্য করতে পারছি। কিন্তু দল যদি আমার পাশে না থাকত, তা হলে এর একাংশও করা সম্ভব হত না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement