কোয়ার্টার ফাইনালে কি এই মেজাজেই দেখা যাবে শ্রীবৎসকে? —ফাইল চিত্র।
আর মাত্র তিন ধাপ। তা হলেই স্বপ্নপূরণ। আর এই আবেগ, উচ্ছ্বাস, প্রত্যাশাকেই মাথায় রাখতে চাইছেন না বাংলার উইকেটকিপার শ্রীবৎস গোস্বামী।
ওড়িশার বিরুদ্ধে রঞ্জি ট্রফির কোয়ার্টার ফাইনাল খেলতে সোমবার সন্ধেয় বাংলা দল উড়ে গেল কটক। বৃহস্পতিবার থেকে সেখানেই শেষ চারে ওঠার লড়াইয়ে নামবে অভিমন্যু ঈশ্বরনের দল। স্বাভাবিক ভাবেই বঙ্গ ক্রিকেটমহলে জন্ম নিচ্ছে প্রত্যাশা।
বাংলা দলের অন্যতম ভরসা শ্রীবৎস অবশ্য চাইছেন সেই প্রত্যাশার আবহকেই শিবির থেকে দূরে রাখতে। আনন্দবাজার ডিজিটালকে তিনি বললেন, “জানি, অনেক আশা রয়েছে আমাদের ঘিরে। আমি কিন্তু সবাইকে বলতে চাই যে বড় স্বপ্ন দেখে লাভ নেই এখন। আমাদের একটা করে ম্যাচ ধরে খেলতে হবে। ক্রিকেট খেলাটা কেমন, কতটা অনিশ্চয়তার, আমরা সকলেই জানি। যাঁরা সমর্থক, যাঁরা আমাদের এখন থেকেই ট্রফি হাতে দাঁড়িয়ে থাকার স্বপ্ন দেখছেন, তাঁদেরও বুঝতে হবে যে, ক্রিকেট খেলায় আগাম কিছু ভেবে রাখা ঠিক নয়। এই পর্যায়ে কোনও দলই ছোট বা বড় নয়। ওড়িশাই হোক বা কর্নাটক, সবই সমান। আমাদের তাই প্রথম টার্গেট কোয়ার্টার ফাইনালে জেতা। সেটা যদি হয়, তার পর সেমিফাইনাল নিয়ে ভাবব। তখন যাদের সঙ্গেই খেলা পড়ুক না কেন, উজাড় করে দেব। কিন্তু তার আগে কটকে জিততে হবে।”
আরও পড়ুন: ক্রিস লিন অতীত, এই মরসুমে ওপেনিংয়ে নাইট রাইডার্সের তুরুপের তাস হতে পারেন এঁরা
মানুন অথবা না মানুন, শ্রীবৎসের কথায় অবশ্য রঞ্জি জয়ের স্বপ্ন মিশে থাকছে। না হলে কেন বলবেন, “দীর্ঘদিন ধরে বাংলার হয়ে খেলছি। চাই বাংলার হয়ে রঞ্জি ট্রফি জিততে। সেটা স্বপ্ন তো বটেই। তবে আবার বলছি, কাজটা সহজ নয়। তবে আমাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য যে রঞ্জি চ্যাম্পিয়ন হওয়া, সেটা অস্বীকারের জায়গাও নেই।”
বাংলা দলের ভারসাম্য যে বড় ভরসার জায়গা, তা মনে করিয়ে দিচ্ছেন উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান। জয়পুরে রাজস্থানের পর পাটিয়ালায় পঞ্জাব, শেষ দুই ম্যাচে সরাসরি জয় এসেছে দুই ধরনের প্রতিকূল পরিবেশে। জয়পুরে ছিল পেস সহায়ক পিচ। আর পাটিয়ালায় ছিল ঘূর্ণি পিচ। শ্রীবৎসের কথায়, “এই বছর আমাদের দল দারুণ ব্যালান্সড। বোলাররা উইকেট নিয়েছে। সব ব্যাটসম্যানরাও রান করেছে। আমাদের বিরুদ্ধে পুরো রঞ্জি ট্রফিতে মাত্র একটা সেঞ্চুরি হয়েছে। আর আমরা করেছি তিনটি সেঞ্চুরি। আসলে উইকেটগুলো এমন থাকছে যে ব্যাটসম্যানদের কড়া পরীক্ষায় পড়তে হচ্ছে। বেশি রান কিন্তু হচ্ছে না। ফরম্যাট এমনই যে, সেরা আট দল উঠছে শেষ আটে। আগে প্রত্যেক গ্রুপের সেরা দলগুলো অংশ নিত। এখন তা নয়। ফলে লড়াইও বেড়েছে। আর যেখানে আমাদের গ্রিন টপ দেওয়া হয়েছে, সেখানে আমারা পেসার খেলিয়েছি। যেখানে আমাদের টার্নিং পিচ দেওয়া হয়েছে, সেখানে আমরা বেশি স্পিনার নামিয়েছি। আর পেসার-স্পিনাররা সবাই উইকেট নিয়েছে। আসলে টিম কম্বিনেশন আমাদের খুব ভাল হয়েছে। যে কোনও কন্ডিশনেই আমরা শক্তিশালী। যে কন্ডিশনেই আমাদের ফেলা হোক না কেন, দলে কোনও দুর্বলতা নেই।”
আরও পড়ুন: আর দু’-এক জনের উপর নির্ভরশীল নয় দল, বলছেন বাংলার অধিনায়ক
শ্রীবৎস নিজে ১১ ইনিংসে ২৮.০৯ গড়ে করেছেন ৩০৯ রান। যার মধ্যে দুটো হাফ-সেঞ্চুরি রয়েছে। বাঁ-হাতি নিজেও মানছেন যে বড় রান আসেনি। তবে দলের স্বার্থের বিচারে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ জুটিতে ভূমিকা ছিল তাঁর। বললেন, “দলের বিপদে জুটি গড়েছি। তবে বড় রান করতে পারলে ভাল লাগত। সেটা মাথায় রেখেও বলছি, ঠিকঠাকই আছে। আশা করছি, কোয়ার্টার ফাইনালে বড় রান আসবে। সবাই তো নম্বর দেখে। এটা তো আর কেউ দেখবে না যে উইকেট কেমন, কোন পরিস্থিতিতেই বা খেলতে হয়েছে। দিনের শেষে এটাই দেখা হবে যে কত রান করতে পেরেছি। বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ অবদান থাকলেও তাই খচখচানি রয়েছে নিজের মধ্যে। মন হচ্ছে, এই অবদানগুলো যদি রানসংখ্যাতেও প্রতিফলিত হত!”
কিন্তু, ইডেনেই তো আলগা শটে বড় রানের সুযোগ নষ্ট করেছিলেন। শ্রীবৎস স্বীকার করে নিচ্ছেন। বললেন, “হ্যাঁ, ওই একটাই খারাপ শট মেরেছি। ওই ম্যাচটা মিস হয়ে গিয়েছে। বড় রান আসত। আর কল্যাণীতে ৯৫ করে আউট হয়েছিলাম। সেঞ্চুরি হারিয়েছিলাম অল্পের জন্য।” আফশোস এখনও টাটকা।
ওড়িশার বিরুদ্ধে এই রানের খিদেও সঙ্গী হচ্ছে ময়দানের শ্রী-র!