ছবি সংগৃহীত।
আইপিএলে মহেন্দ্র সিংহ ধোনি বনাম বিরাট কোহালি দ্বৈরথ শুরু হওয়ার আগেই ‘বড় উইকেটের পতন’! জনরোষের মুখে পড়া চিনা স্পনসর নাটকীয় ভাবে ‘বোল্ড’ হয়ে গেল আইপিএল থেকেই।
এখনও সরকারি ভাবে বোর্ড ঘোষণা না করলেও, সিদ্ধান্ত হয়েই গিয়েছে যে, এ বছরের আইপিএলে টাইটেল স্পনসর হিসেবে থাকবে না চিনা মোবাইল সংস্থা ভিভো। আলোচনার মাধ্যমে এই বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দু’পক্ষ মিলে। ওয়াকিবহাল মহলের খবর, আপাতত শুধু এক বছরের জন্যই বিচ্ছেদ। চিনের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতি হলে মোবাইল সংস্থাও ফিরতে পারে সামনের বছর। এই স্পনসরের সঙ্গে বোর্ডের পাঁচ বছরের চুক্তি শেষ হচ্ছিল ২০২২ সালে। এমনও কথা হয়েছে যে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে নতুন করে তিন বছরের চুক্তি হতে পারে সামনের বছর থেকে।
চুক্তির ধারা অনুযায়ী, মাঝপথে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, জয় শাহদের পক্ষে নিজে থেকে স্পনসরকে সরানো কঠিন ছিল। আবার এই উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে চিনা স্পনসর ধরে রাখাও অসম্ভব হয়ে দাঁড়াচ্ছিল। আলোচনার মাধ্যমে সমাধানসূত্র বার করাই ছিল একমাত্র পথ। সেই রাস্তাতেই তাঁরা হাঁটেন মঙ্গলবার।
আইপিএলের গভর্নিং কাউন্সিলের বৈঠকে চিনা স্পনসরকে ধরে রাখার কথা হলেও এই সিদ্ধান্তের দেশব্যাপী প্রতিবাদ হচ্ছিল। গত চব্বিশ ঘণ্টায় যত জোরালো হয়েছে আইপিএলে চিনা স্পনসর হটানোর দাবি, ততই এসপার-ওসপার সিদ্ধান্তের দিকে এগোতে বাধ্য হয়েছেন বোর্ড কর্তারা। বিশ্বস্ত সূত্রের খবর, মঙ্গলবার একেবারে শীর্ষ স্তরে, বোর্ড প্রেসিডেন্ট সৌরভ এবং সচিব জয় শাহ মিলে এই সিদ্ধান্ত নেন। দুপুরের মধ্যেই ঠিক হয়ে যায়, চিনা স্পনসরকে এ বার আর রাখা যাবে না। আলোচনার মাধ্যমে সমাধানসূত্র বের করা হয় যে, এ বছরের জন্য তারা সরে দাঁড়াক। সামনের বছর আইপিএলের আগে নতুন করে ভাবা যাবে।
চিনা স্পনসর বছরে প্রায় সাড়ে চারশো কোটি টাকা দেয় বোর্ডকেও। চুক্তি ছিল পাঁচ বছরের। কিন্তু পরিস্থিতি এমনই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে যে, চরম সিদ্ধান্ত নেওয়া ছাড়া উপায় ছিল না সৌরভ-জয়দের। এক দিকে লাদাখে ভারত-চিন সংঘাতের জেরে দেশ জুড়ে চিনা পণ্য বর্জনের দাবি জোরালো হচ্ছে। ২০ জন সেনা সংঘর্ষে মারা গিয়েছেন। তা নিয়ে জনরোষ বাড়তে শুরু করেছে। টিকটকের মতো একাধিক চিনা অ্যাপ সরকার বন্ধ করে দেওয়ায় আরও বেশি করে কথা উঠছে, তা হলে আইপিএলেই বা কেন ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে?
ক্রিকেট বোর্ডের সচিব আবার জয় শাহ, যিনি অমিত শাহের পুত্র। তাই খেলার আকাশ ছাড়িয়ে রাজনৈতিক রং যোগ হয়ে বিতর্কের আগুনে ঘি পড়েছে। নানা রাজনৈতিক নেতা, নানা রাজনৈতিক দলই বলতে শুরু করেছে, সরকারই যেখানে চিনের জিনিস বন্ধ করার কথা তুলছে, দেশজ পণ্যের উপর জোর দেওয়ার কথা বলছে, সেখানে ক্রিকেটের চিনা স্পনসর স্বমহিমায় রয়েছে। তা হলে সরকার চুপ কেন? দেশ জুড়ে নানা মহলে তৈরি হওয়া চাপ সৌরভ-জয়রা অনুভব করেননি, মানা যাচ্ছে না। বিশেষ করে জয় শাহের গায়ে রাজনৈতিক বিতর্কের আঁচ একটু বেশিই লেগে থাকতে পারে। এমনকি আরএসএস অনুমোদিত স্বদেশি জাগরণ মঞ্চও আইপিএলে চিনা সংস্থার স্পনসর থাকা নিয়ে তোপ দেগেছিল। জানিয়েছিল, নিহত সেনাদের প্রতি চরম অশ্রদ্ধা দেখানো হবে চিনা সংস্থার সঙ্গে সংশ্রব রাখলে। এ বছরের আইপিএল বয়কট করারও হুমকি দিয়েছিল তারা।
বাণিজ্যিক জগতের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত কয়েক জন বিশেষজ্ঞের মনে হচ্ছে, ভারতীয় বোর্ড এবং চিনা স্পনসর— দু’পক্ষই নিজেদের ‘ব্র্যান্ড’ রক্ষা করার কথাও ভেবেছে। স্পনসর বুঝেছে, মোটা টাকা বিনিয়োগ করলেও এই পরিস্থিতিতে নেতিবাচক প্রচার ছাড়া কিছুই জুটবে না। বোর্ডও বুঝেছে, জনতার কাছে জনপ্রিয় আইপিএল তার আকর্ষণ হারাবে যদি না চিনা স্পনসরকে আপাতত সরানো যায়। ‘‘প্রতিবাদ গর্জে উঠে শেষে আইপিএলকেই না বর্জনের দাবি ওঠে!’’ এমন আশঙ্কার কথাও শোনা যাচ্ছিল বোর্ডের অভ্যন্তরে।
বোর্ড সূত্রে খবর, এই এক বছরের জন্য নতুন কোনও স্পনসর নিয়ে আসা হবে। এক বছরের আয়োজন কাদের সঙ্গে হতে পারে, তা নিয়ে ক্রিকেট বাজারে মঙ্গলবার থেকেই জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে। শোনা যাচ্ছে, দৌড়ে আছে অতি পরিচিত একটি ঠান্ডা পানীয় সংস্থার নাম। যারা এর আগে আইপিএলের টাইটেল স্পনসরও হয়েছে। তবে যারাই আসুক, ‘বিডিং’-এর মাধ্যমেই আসতে হবে। এ মাসের মধ্যেই নতুন টাইটেল স্পনসর ঠিক করতে হবে। হাতে অল্প সময় থাকলেও দ্রুত গতিতে ‘বিডিং’ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার কথা ভাবতে শুরু করেছে বোর্ড।
মঙ্গলবার রাতের দিকে বোর্ড কর্তাদের কারও কারও মুখে আবার শোনা গেল, ‘‘দেশি কোনও সংস্থাকেও আনা যেতে পারে।’’ তবে কি চিনা-সঙ্গ ছেড়ে ‘আত্মনির্ভর’ স্লোগান ঢুকে পড়ছে বোর্ডে? সময়ই বলে দেবে।