সহমর্মী: বিশ্বকাপে স্মিথকে বিদ্রুপ করতে দর্শকদের নিষেধ করেছিলেন বিরাট। অভিভূত স্মিথ এসে হাত মিলিয়ে গিয়েছিলেন তাঁর সঙ্গে। ফাইল চিত্র
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক ২০০৮ সালে। তিনি পরিচিত ছিলেন ভারতীয় ক্রিকেটের ‘ব্যাড বয়’ হিসেবে। এক যুগ পরে, বুধবার আইসিসি ‘স্পিরিট অব ক্রিকেট’ পুরস্কার তুলে দিল ভারতীয় অধিনায়ক বিরাট কোহালিকে। পাশাপাশি টেস্ট এবং ওয়ান ডে দলের অধিনায়ক হিসেবেও তাঁকে বেছে নিল বিশ্বক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ামক সংস্থা।
‘ব্যাড বয়’ থেকে একজন দায়িত্বপূর্ণ অধিনায়ক হয়ে ওঠার পিছনে যেমন নিরলস পরিশ্রম রয়েছে, তেমনই রয়েছে ত্যাগ, শৃঙ্খলার অনেক কাহিনি। ২০১১-১২ অস্ট্রেলিয়া সফরে সিডনির সমর্থকদের অশ্লীল ইঙ্গিত করে সমস্যায় পড়েছিলেন বিরাট। ৫০ শতাংশ ম্যাচ পারিশ্রমিকও কাটা হয়েছিল। ২০১৩ আইপিএলে তাঁর এক সময়ের সতীর্থ গৌতম গম্ভীরের সঙ্গে মাঠেই বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন কোহালি। দু’দলের ক্রিকেটারেরা এসে দু’জনকে সরিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন।
২০১৬-১৭ মরসুমে টেস্ট সিরিজে স্টিভ স্মিথকে ‘প্রতারক’ বলতেও পিছু হটেননি তিনি। জানিয়েছিলেন, ড্রেসিংরুমের সাহায্যে ডিআরএস নিয়েছেন স্মিথ। সেই তাঁকেই দর্শকদের বিদ্রুপের হাত থেকে রক্ষা করে সকলের মন জয় করেছিলেন বিরাট।
আরও পড়ুন: একটা বাজে দিন, ধৈর্য ধরতে বলছেন সৌরভ
বিশ্বকাপে ভারতীয় সমর্থকদের বিদ্রুপের শিকার হয়েছিলেন স্মিথ। তখনই এগিেয় এসে দর্শকদের বিদ্রুপ বন্ধ করার জন্য অনুরোধ করেন কোহালি। বরং নির্বাসন কাটিয়ে ফেরা স্মিথকে উৎসাহ দিয়ে স্বাগত জানানোর আহ্বান জানান ভারতীয় অধিনায়ক। কোহালি যদিও বিস্মিত, ‘স্পিরিট অব ক্রিকেট’ পুরস্কার পেয়ে। বুধবার মুম্বইয়ে কোহালি বলেছেন, ‘‘এত বছর ধরে নানা ধরনের ভুল করার পরেও আইসিসি-র ‘স্পিরিট অব ক্রিকেট’ পুরস্কার পেয়ে বেশ অবাক হয়েছি।’’
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট জীবন শুরু হওয়ার পরেও তাঁর শৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। কিন্তু নিজেকে আমূল পাল্টে ফেলেছেন কোহালি। তাঁর উপলব্ধি, ‘‘প্রত্যেককেই জায়গা দেওয়া উচিত নিজেকে শুধরে নেওয়ার জন্য। শুরুতে যে বদমেজাজি, পরের দিকে সে শান্ত হতেও পারে। দলের তরুণ ক্রিকেটারদের সঙ্গে এটা হোক, আমি চাই না।’’
আরও পড়ুন: ডার্বির মহড়ায় ইস্টবেঙ্গল জুড়ে শুধুই অন্ধকার
স্মিথের পাশে দাঁড়ানো নিয়ে বিরাট বলেন, ‘‘ও যে পরিস্থিতি থেকে ফিরেছিল, সেটা যে সহজ নয় তা অনুভব করেছিলাম। বিদ্রুপ করার অর্থই ওর অসহায়তার সুবিধা নেওয়া। তা ছাড়া ভারতীয় সমর্থকেরা তো খেলাকে বেশি প্রাধান্য দেন। কোনও ক্রিকেটারের আবেগে আঘাত করা উচিত নয়।’’ যোগ করেছেন, ‘‘আমি চাই একজন বড় ক্রিকেটারের চেয়েও মানুষ আমায় মনে রাখুক ভাল ব্যক্তিত্বের জন্য। ছোটবেলায় ভাবতাম কী করে বিশ্বখ্যাত হওয়া যায়। এখন বুঝেছি, প্রশংসার থেকেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ সম্মান। ভক্তেরা যদি আমাকে সম্মানের চোখে দেখেন সেটাই সেরা প্রাপ্তি।’’ তাঁর কথা শুনে অভিভূত পাক পেসার মহম্মদ আমিরের টুইট, ‘‘সেরা ক্রিকেটারের মুখে সেরা কথাটাই শুনলাম।’’
সেরা ওয়ান ডে দল: রোহিত শর্মা, শেই হোপ, বিরাট কোহালি (অধিনায়ক), বাবর আজ়ম, কেন উইলিয়ামসন, বেন স্টোকস, জস বাটলার (উইকেটকিপার), মিচেল স্টার্ক, ট্রেন্ট বোল্ট, মহম্মদ শামি, কুলদীপ যাদব।
সেরা টেস্ট দল: মায়াঙ্ক আগরওয়াল, টম লাথাম, মার্নাস লাবুশানে, বিরাট কোহালি (অধিনায়ক), স্টিভ স্মিথ, বেন স্টোকস, বিজে ওয়াটলিং (উইকেটকিপার), প্যাট কামিন্স, মিচেল স্টার্ক, নিল ওয়াগনার, নেথান লায়ন।