ছবি শঙ্কর নাগ দাস
ভারতকে প্রথম টেস্টে বাঁচিয়ে দিয়েছিল বিরাট কোহালি। ভারতকে দ্বিতীয় টেস্ট জিতিয়ে দিল সেই বিরাট কোহালিই। দুটো দলের মধ্যে পার্থক্য হল বিরাট। ও হল সেই বাড়তি গিয়ার বা সেই অতিরিক্ত কিছু, যার জোরে গাড়ি বা লেখক, মেশিন বা মানুষ, বাকিদের চেয়ে আলাদা হয়ে যায়।
বিরাটের ব্যাটিং একেবারে স্বতন্ত্র। যে কোনও মাস্টারপিসের মতো তা মানুষকে অভিভূত করে দেয়। ওর ফুটওয়ার্ক, সেটা ফরোয়ার্ড হোক বা ব্যাকে, মুচমুচে আর নিশ্চিত। ও যখন ডিফেন্স করতে গিয়ে বলের উপর মাথা রেখে ঝুঁকে পড়ে, দুটো পায়ের মধ্যে অনেক ফাঁক রেখে, তখন ও বোলারদের সেই চিরন্তন দ্বিধায় ফেলে দেয়। এ রকম দুঁদে ব্যাটসম্যানকে বল করার জন্য কোন লেংথ সঠিক? এখন পর্যন্ত বিরাটের জন্য ইংল্যান্ড দু’রকম কৌশল চেষ্টা করেছে। অফস্টাম্পের অনেকটা বাইরে বল করা আর লেগে ফাঁদ পাতা। দুটো ট্যাকটিক্সই টোপ দেওয়ার মতো, দুটোই রক্ষণাত্মক। এখন পর্যন্ত বিরাট-ধাঁধার কোনও সমাধান পাওয়া যায়নি।
চেতেশ্বর পূজারার বিরুদ্ধেও মনে হচ্ছে অনেকটা একই রকম স্ট্র্যাটেজি নিয়েছে ইংল্যান্ড। লেগে পড়ে থাকো, আর আশা করো যে কখনও না কখনও ভাগ্যে শিকে ছিঁড়বে। পূজারার কাছে সব সময়ই খিদে, তীক্ষ্মতা আর টেকনিক ছিল। স্ট্রোক খেলার দিক দিয়েও এখন ও নিজেকে সম্পূর্ণ স্বাধীন করে ফেলেছে। যে ছয়টা মেরে পূজারা সেঞ্চুরি করল, সেটা ওর প্রতিভার প্রতীক। যে প্রতিভা অবিরত বিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
আর যে জিনিসগুলো আমার ভাল লেগেছে তার মধ্যে থাকবে রবিচন্দ্রন অশ্বিনের ধৈর্য, নবাগত জয়ন্ত যাদবের আত্মবিশ্বাস, বাংলার সুলতান মহম্মদ শামি আর বিদর্ভ এক্সপ্রেস উমেশ যাদবের ব্যাঘ্রসম জুটি। আর হ্যাঁ, আজকাল মাঠে যে কাউকেই খুব একটা দায়সারা লাগে না, সেটাও কিন্তু দারুণ ব্যাপার। কেউই আজকাল শুধু ক্রিজে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে না। গত দুটো মরসুমের সেরা দ্রষ্টব্য হল ভারতীয় টেলএন্ডারদের উত্থান। দশটা উইকেট না পড়া পর্যন্ত এখন ভারতীয় ইনিংস কিন্তু শেষ হয় না।
বিশাখাপত্তনমে ওদের হারের ব্যবধান যা বোঝাচ্ছে, ইংল্যান্ড কিন্তু মোটেই অতটা খারাপ খেলেনি। প্রথম ইনিংসে স্টোকস আর বেয়ারস্টো যে ও রকম পার্টনারশিপ করে দেবে, কেউ ভাবতে পারেনি। একই রকম অপ্রত্যাশিত ছিল দ্বিতীয় ইনিংসে কুক আর হামিদের নাছোড় পাল্টা লড়াই। শক্তি আর কার্যকারিতার দিক দিয়ে অ্যান্ডারসন বা ব্রড কেউই নিষ্প্রভ হয়ে যায়নি। আর ওদের সঙ্গে যে স্পিন আক্রমণ নিয়ে এসেছে ইংল্যান্ড, তারা যে কোনও টেস্টে ভারতের কুড়িটা উইকেট তুলে নিতে পারে।
তাই বলে এটা বলছি না যে, মোহালি টেস্টের আগে ইংল্যান্ড দল নিয়ে ভাবনাচিন্তার প্রয়োজন নেই। বেন ডাকেট আর জাফর আনসারির উপর নিশ্চয়ই টিম ম্যানেজমেন্ট কড়া নজর রেখেছে। ইংল্যান্ড টিমটাকে দেখে মনে হচ্ছে আগামী কয়েকটা সপ্তাহে ওদের হারাতে গেলে ভালই খাটতে হবে। বোলিং আর ব্যাটিং, দুই বিভাগেই ওরা ভারতকে ভাল লড়াই দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। এক কোহালিই যা বারবার ওদের টেক্কা দিয়ে যাচ্ছে!
ভারত
প্রথম ইনিংস: ৪৫৫, দ্বিতীয় ইনিংস: ২০৪
ইংল্যান্ড
প্রথম ইনিংস: ২৫৫
দ্বিতীয় ইনিংস (আগের দিন ৮৭-২)
রুট এলবিডব্লিউ শামি ২৫
ডাকেট ক ঋদ্ধিমান বো অশ্বিন ০
মইন ক কোহালি বো জাডেজা ২
স্টোকস বো জয়ন্ত ৬
বেয়ারস্টো ন.আ. ৩৪
রশিদ ক ঋদ্ধিমান বো শামি ৪
আনসারি বো অশ্বিন ০
ব্রড এলবিডব্লিউ জয়ন্ত ৫
অ্যান্ডারসন এলবিডব্লিউ জয়ন্ত ০
অতিরিক্ত ৩, মোট ১৫৮। পতন: ৭৫, ৮৭, ৯২, ১০১, ১১৫, ১১৫, ১২৯, ১৪৩, ১৫৮। বোলিং: শামি ১৪-৩-৩০-২, উমেশ ৮-৩-৮-০, অশ্বিন ৩০-১১-৫২-৩, জাডেজা ৩৪-১৪-৩৫-২, জয়ন্ত ১১.৩-৪-৩০-৩।