প্রথম ইনিংসে করেছিলেন মাত্র ২। দ্বিতীয় ইনিংসে করলেন ১৯। পর পর ব্যর্থতা প্রশ্ন তুলছে বিরাট কোহালির ফর্ম নিয়ে। ব্যাটসম্যান হিসেবে তাঁর গ্রাফ কি এ বার নীচের দিকে, প্রশ্ন উঠেছে ক্রিকেটমহলে। কারণ, চলতি সফরে পুরনো মেজাজে একেবারেই পাওয়া যায়নি তাঁকে। বলা হচ্ছে, কোহালির কেরিয়ারে এমন ব্যাডপ্যাচ শেষ বার এসেছিল ২০১৪ সালের ইংল্যান্ড সফরে।
শুক্রবার চলতি টেস্টের প্রথম ইনিংসে জেমিসনের বাইরে বেরিয়ে যাওয়া ডেলিভারিতে ড্রাইভ মারতে গিয়ে ক্যাচ দিয়েছিলেন প্রথম স্লিপে রস টেলরকে। তার আগে জেমিসন ক্রমাগত শর্টপিচ ডেলিভারি করে চলেছিলেন। এবং তার পর অফস্টাম্পের বাইরে ড্রাইভ করার বল দিয়েছিলেন। ফাঁদে পা দিয়ে ফিরেছিলেন কোহালি।
রবিরার চলতি টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে তাঁকে শর্টপিচ ডেলিভারি ক্রমাগত করে যাওয়ার সুফল পেলেন ট্রেন্ট বোল্ট। টেস্ট শুরুর আগে বলেছিলেন যে কোহালির উইকেট পেতে চান তিনি। সেই কথা তিনি রাখলেন। বোল্টের বাউন্সারে মারতে গিয়ে উইকেটকিপারকে ক্যাচ দিলেন কোহালি।
২০১৮ সালে ইংল্যান্ডে হওয়া টেস্ট সিরিজে ভারত ৪-১ ফলে হেরেছিল। কিন্তু তার মধ্যেও উজ্জ্বল ছিলেন কোহালি। তিনি করেছিলেন ৫৯৩ রান। সেই সিরিজের পর থেকে অ্যাওয়ে টেস্ট সিরিজে সমস্যায় পড়ছেন কোহালি। বিদেশে পরের সাত টেস্টের ১৩ ইনিংসে এসেছে মাত্র একটি শতরান। যা কোহালির ধারাবাহিকতার পক্ষে বেমানান।
২০১৮ সালের ইংল্যান্ড সফরের পর অস্ট্রেলিয়ায় চার টেস্ট খেলেছেন কোহালি। ওয়েস্ট ইন্ডিজে খেলেছেন দুটো টেস্ট। আর নিউজিল্যান্ডে খেললেন একট টেস্ট। এই সাত টেস্টে তাঁর ব্যাটে এসেছে ৪৩৯ রান। গড় ৩৩.৭৬।
কোহালি এখনও পর্যন্ত খেলেছেন ৮৫ টেস্ট। তাতে ৫৪.৩০ গড়ে করেছেন ৭২২৩ রান। অথচ, শেষ সাত টেস্টে তাঁর গড় নেমে এসেছে ৩৩.৭৬-এ। বোঝাই যাচ্ছে, তাঁর ব্যাটিং গড় নিম্নমুখী।
শুধু টেস্টেই নয়, সীমিত ওভারের ফরম্যাটে কোহালির ব্যাট শান্ত থাকছে এখন। চলতি নিউজিল্যান্ড সফরে চার টি-টোয়েন্টি ও তিন একদিনের ম্যাচে মাত্র একবার পঞ্চাশের গণ্ডি পেরিয়ে গিয়েছেন তিনি। টেস্টের দুই ইনিংস ধরলে, এই সফরে নয় ইনিংসে ওই একটাই হাফ-সেঞ্চুরি করেছেন তিনি।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কোহালির শেষ সেঞ্চুরি এসেছিল ইডেনে গোলাপি বলের টেস্টে। নভেম্বরে সেই ইনিংসে তাঁর ব্যাটে এসেছিল ১৩৬ রান। তার পর থেকে ২০ আন্তর্জাতিক ইনিংসের একটিতেও শতরান পাননি তিনি।
২০০৮ সাল থেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলছেন কোহালি। ২০ বা তার বেশি ইনিংসে কোনও সেঞ্চুরি নেই, এমন মাত্র দু’বার ঘটেছে। ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বরে টানা ২৪ ইনিংসে শতরান পাননি তিনি। সেই সময়ে তাঁর ব্যাটিং গড়ও কমে গিয়েছিল।
২০১১ বিশ্বকাপের আগে কোহালির সব ফরম্যাট মিলিয়ে গড় ছিল ৪৮। পরের সাত মাসে সেটাই কমে দাঁড়ায় ৩৯। এটাই তাঁর কেরিয়ারের প্রথম ব্যাডপ্যাচ। তিন বছর পর আসে কোহালির কেরিয়ারের দ্বিতীয় ব্যাডপ্যাচ। ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে অক্টোবরে টানা ২৫ ইনিংসে একবারও তিন অঙ্কের রানে পৌঁছতে পারেননি তিনি।
শুধু তো ব্যাটিং নয়, চলতি টেস্টে প্রশ্ন উঠেছে তাঁর নেতৃত্ব নিয়েও। প্রাক্তন ক্রিকেটার ভিভিএস লক্ষ্মণ তাঁর পরিকল্পনাকে ভুল বলে চিহ্নিত করেছেন। ফিল্ডিং সাজানোকেও মানতে পারছেন না তিনি। লক্ষ্মণের মতে, ভারত অত্যন্ত রক্ষণাত্মক মানসিকতার পরিচয় রেখেছে। বিশেষ করে দ্বিতীয় নতুন বল নিয়ে আক্রমণাত্মক মানসিকতার পরিচয় রাখতে পারেননি কোহালি।