অধিনায়ক ডুবে হতাশায়। গ্রিনপার্কে কোহালি। বৃহস্পতিবার। ছবি: রয়টার্স।
ইডেনের ব্যর্থতার রেশ গ্রিনপার্কেও।
বৃহস্পতিবার জাতীয় ছুটির দিন কানপুরের ক্রিকেটপ্রেমীরা যে উৎসাহ নিয়ে গ্রিনপার্কের গ্যালারি ভরিয়ে তুলেছিলেন, সেই উৎসাহে শুরু থেকেই জল ঢেলে দিয়ে সাত উইকেটে প্রথম টি-টোয়েন্টি জিতে নিল ইংল্যান্ড। প্রধান কৃতিত্ব ইংরেজ বোলারদের। টস জিতে ভারতকে ব্যাট করতে পাঠিয়ে দেড়শোও তুলতে দিলেন না তাঁরা। ব্যাট হাতেও কোহালিদের দমিয়ে রাখলেন মর্গ্যানরা। এই প্রথম ইংল্যান্ডের এমন দাপুটে জয় দেখা গেল তাদের এই ভরত সফরে।
হারের পর কোহালি স্বীকার করে নেন, ‘‘এত ভাল বল করলে তো জয়টা ওদেরই প্রাপ্য। নিখুঁত এরিয়া, সঠিক লেংথ এ সব কিছুতেই ওরা আমাদের পিছনে ফেলে দিয়েছে আজ।’’ কুড়ি ওভারে ১৪৭-৭। এটা তুলতে ইংল্যান্ডের লাগে ১৮ ওভার ও এক বল। কোহালি যেটা নিয়ে বলছেন, ‘‘এই পিচে ১৭৫-এর কম নিয়ে লড়াই করা মুশকিল।’’
শুরু থেকেই এ দিন ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের এমন চাপে ফেলে দেন ইংল্যান্ডের দুই টি-টোয়েন্টি স্পেশালিস্ট পেসার ক্রিস জর্ডন ও টাইমাল মিলস যে সারা ইনিংসে ভারতীয়রা আর মাথা তুলে দাঁড়াতেই পারেননি বলা চলে। কেন তারা টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালিস্ট, তা বুঝিয়েই দিল ইংল্যান্ড।
টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম বল পড়ার আগে থেকেই বিরাট কোহালি বনাম টাইমাল মিলস যুদ্ধটা নিয়ে দু’দেশের ক্রিকেট মিডিয়া যে ভাবে সরগরম হয়ে উঠেছিল, সেই যুদ্ধের আঁচ কিছুটা হলেও পাওয়া যাচ্ছিল এ দিন। তবে সেই যুদ্ধের প্রথম বাজিটা মাত করলেন ইংরেজ পেসারই। এ দিন ওপেন করতেই নেমেছিলেন ভারত অধিনায়ক কোহালি। প্রথম ওভারও করেন মিলস, যিনি নাকি ব্যাটসম্যানদের শিরদাঁড়া দিয়ে প্রায়ই শীতল স্রোত নামান। প্রথম ওভারেই তাঁকে কোহালি ও লোকেশ রাহুল একবার করে বাউন্ডারির বাইরে পাঠান। মিলসের দ্বিতীয় ওভারে অবশ্য খুচরো রানের উপরই ছিলেন দুই ওপেনার।
প্রথম স্পেলেই ১৪৫ থেকে ১৫০ কিমির মধ্যে বেশ কয়েকটা গোলা বেরয় তাঁর হাত থেকে। আবার ১১৪ কিমির বলও করেন দু-একটা। যখন দ্বিতীয় স্পেলে বল করতে আসেন মিলস, তখন ক্রিজে এমএস ধোনি ও হার্দিক পাণ্ড্য। ডেথ ওভার তখন। এ বার যেন আরও বিধ্বংসী ২৪ বছর বয়সি ইংরেজ পেস বোমা। পাণ্ড্যকে ফিরিয়ে প্রথম আন্তর্জাতিক উইকেটটা তুলে নেন। সেই ওভারে যেমন একটাও বাউন্ডারি দেননি, পরের ওভারেও না। সব মিলিয়ে তাঁর ইকোনমি ৬.৭৫। জর্ডনেরও একই। ভারতের সারা ইনিংসে মাত্র একবার বল আছড়ে পড়ে সোজা গ্যালারিতে। সুরেশ রায়নার ব্যাট থেকে। যার পরও মর্গ্যান একাই চারটে ও জেসন রয় দুটো ছয় হাঁকান।
মিলস, জর্ডনরা তো আট ওভার করেন। বাকি সময়টাতে ঠান্ডা মাথায় ব্যাটসম্যানদের শাসন করেন মইন আলি। ম্যান অব দ্য ম্যাচ তিনিই। তাঁর বলেই কোহালিকে (২৬ বলে ২৯) মি়ডউইকেটে ধরেন মর্গ্যান। যাঁকে জায়গা করে দিতে ওপেন করতে নামেন কোহালি, সেই সুরেশ রায়না (২৩ বলে ৩৪) চালিয়েই খেলছিলেন। যুবরাজ সিংহ (১২) ফিরে যাওয়ার পর ধোনি (২৭ বলে ৩৬ নআ) ক্রিজে আসতে ধোনি-রায়না জুটির পুরনো ম্যাজিকের কথা ভেবে গ্যালারি ফের সরব হলেও সেই জুটি ভেঙে দেন বেন স্টোকস। রায়না তাঁকে ছক্কা হাঁকানোর ঠিক পরের বলটাতেই তাঁর স্টাম্প উপড়ে দেন। এই জুটিটাই শেষে আশা ছিল ভারতের। তবে ভারতের দেড়শোতেও পৌঁছতে না পারাটা অপ্রত্যাশিতই। শেষ পাঁচ ওভারে ৪১ রান তোলে ভারত। সে জন্যই সাংবাদিক বৈঠকে কোহালি ঘুরে ফিরে একই কথায় আসছিলেন, ‘‘রানটা আমাদের এতই কম ছিল যে, লড়াইয়ের কোনও জায়গাই ছিল না।’’
চতুর্থ ওভার থেকেই স্পিন আক্রমণ শুরু করে একটা চেষ্টা শুরু করেছিলেন কোহালি। প্রথম বলেই জেসন রয়কে ছয় দেন যজুবেন্দ্র চাহল। দ্বিতীয় বলেই তাঁর স্টাম্প ছিটকে দেন কোহালির আরসিবি সতীর্থ। একই ওভারে স্যাম বিলিংসকেও বোল্ড করে দেন তিনি। কিন্তু লড়াই ওখানেই শেষ। রুট-মর্গ্যানের ৮৩ রানের পার্টনারশিপই শেষ করে দেয় ভারতের শেষ চেষ্টা। পরভেজ রসুল যখন মর্গ্যানকে (৩৮ বলে ৫১) ফেরান তখন ইংল্যান্ডের জেতার জন্য আর ২২ রান দরকার। চোট সারিয়ে ফেরা রুট (৪৬ বলে ৪৬ ন.আ.) সেটা প্রায় একাই তুলে দেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ভারত ১৪৭-৭ (ধোনি ৩৬ ন.আ., রায়না ৩৪, কোহালি ২৯, মইন ২-২১)
ইংল্যান্ড ১৪৮-৩ (মর্গ্যান ৫১, রুট ৪৬ ন.আ., চাহল ২-২৭)