স্মৃতি: তাঁর সব চেয়ে বড় প্রেরণা বাবার সঙ্গে ছোট্ট বিরাট। টুইটার
যে কোনও বিশ্ব একাদশেই তিনি আজ হাসতে হাসতে সুযোগ পেয়ে যাবেন। কিন্তু এমন একটা দিন এসেছিল, যখন দিল্লির জুনিয়র দলেও সুযোগ পাননি বিরাট কোহালি। এবং, সেটা কোনও ক্রিকেটীয় কারণে নয়। তাঁর বাবা ঘুষ দিতে রাজি হননি বলে সুযোগ দেওয়া হয়নি ছোট্ট বিরাটকে।
সুনীল ছেত্রীর সঙ্গে একটি ওয়েব চ্যাটে এই চাঞ্চল্যকর কথা জানিয়েছেন বিরাট। ভারতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক বলেছেন, ‘‘আমার রাজ্য (দিল্লি) দলে মাঝে মাঝে এমন সব ব্যাপার ঘটত, যা একেবারেই অনৈতিক। এক বার দল নির্বাচনের সময় জনৈক ব্যক্তি মোটেই নিয়ম মেনে দল বাছেননি।’’ কী ঘটেছিল ওই সময়? সুনীলকে বিরাট বলেন, ‘‘ওই ব্যক্তি আমার বাবাকে বলেছিল, বিরাটের মধ্যে দক্ষতা আছে, কিন্তু দলে জায়গা নিশ্চিত করতে বাড়তি (ঘুষ) কিছু লাগবে।’’ জবাবে কী বলেছিলেন তাঁর বাবা, সে কথাও জানিয়েছেন বিরাট। বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান বলেছেন, ‘‘আমার বাবা ছিলেন একজন মধ্যবিত্ত, সৎ লোক। অনেক লড়াই করে একজন আইনজীবী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। যিনি ‘বাড়তি’ কী লাগবে, সেটাই বুঝতে পারেননি। বাবা জবাব দিয়েছিলেন, ‘যদি বিরাটকে দলে নিতেই হয়, তবে সেটা ওর দক্ষতার জন্য নেওয়া হোক। আমি বাড়তি কিছু দেব না।’ এমনই ছিলেন আমার বাবা।’’
এই ঘটনার পরে বিরাটকে সেই দলে নেওয়া হয়নি। যা নিয়ে ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান বলেছেন, ‘‘আমি ওই দলে সুযোগ পাইনি। খুব কান্নাকাটি করেছিলাম। ভীষণ ভেঙে পড়ি।’’ দিল্লি ক্রিকেট সংস্থায় দুর্নীতির অভিযোগ অবশ্য নতুন নয়। নানা সময় নানা অভিযোগ উঠেছে। ওই ঘটনা থেকে কী শিক্ষা নিয়েছিলেন বিরাট? ভারতের ফুটবল অধিনায়ককে ক্রিকেট অধিনায়ক বলেন, ‘‘ওই ঘটনা থেকে আমি অনেক কিছু শিখেছিলাম। বুঝেছিলাম, কী ভাবে এই দুনিয়া চলে।’’
আরও পড়ুন: ডোপিং করছেন ২১ থেকে, ফাঁস আর্মস্ট্রংয়ের
নির্মম বাস্তবের মুখে পড়ে বিরাট বুঝেছিলেন, সেরা হওয়ার রাস্তাটা মোটেই সহজ নয়। ‘‘আমি বুঝেছিলাম, সেরা হতে গেলে আমাকে এমন কিছু করতে হবে, যা অন্যরা করতে পারে না। আমাকে বাকিদের থেকে আলাদা হতে হবে। আর আমাকে সেটা করতে হবে কঠোর পরিশ্রম ও নিজের উদ্যমে। বাবা আমাকে ঠিক রাস্তা দেখিয়েছিলেন। কথায় নয়, কাজে। এই ছোট, ছোট ব্যাপারগুলো আমার জীবনে খুব প্রভাব ফেলেছিল।’’
মাত্র ১৮ বছর বয়সে রঞ্জি ট্রফি ম্যাচ খেলার সময় নিজের বাবাকে হারিয়েছিলেন বিরাট। কিন্তু পরের দিনই আবার দিল্লির হয়ে ব্যাট করতে নেমে পড়েন। এবং, গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলে দিল্লিকে ম্যাচ বাঁচাতে সাহায্য করেন। ছোটবেলায় বাবাকে হারানো নিয়ে বিরাট বলেছেন, ‘‘বাবার মৃত্যুকে মেনে নিয়ে আমি ক্রিকেটে ফোকাস করি। বাবার মৃত্যু বুঝিয়েছিল, জীবনে আমাকে কিছু করে দেখাতে হবে।’’
আরও পড়ুন: ইপিএলে নতুন করে ছয় করোনা আক্রান্তের হদিশ
এর পাশাপাশি বাংলাদেশের ওপেনার তামিম ইকবালের সঙ্গেও ইনস্টাগ্রাম লাইভে কথা বলেন বিরাট। ফাস্ট বোলিংয়ের বিরুদ্ধে ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের উন্নতির জন্য দলের সঙ্গে থাকা ‘থ্রোডাউন’ বিশেষজ্ঞ ডি রাঘবেন্দ্র বা রঘুরও প্রশংসা করেন ভারত অধিনায়ক। নেটে ঘন্টায় ১৫০-১৫৫ কিলোমিটার গতিতে বল ছুড়ে ব্যাটসম্যানদের প্র্যাক্টিস করান রঘু। বিরাট বলেছেন, ‘‘২০১৩ সালের পর থেকে দেখা গিয়েছে, আমাদের ব্যাটসম্যানরা আরও ভাল করে ফাস্ট বোলিং খেলতে পারছে। এই উন্নতির জন্য আমি রঘুকেই কৃতিত্ব দেব।’’
কোহালি আরও বলেন, ‘‘ব্যাটসম্যানদের ফুটওয়ার্ক, ব্যাটের নড়াচড়া সম্পর্কে খুব ভাল ধারণা আছে রঘুর। ও ১৫৫ কিলোমিটার গতিতেও বল ছুড়তে পারে। ওকে নেটে খেলার পরে ম্যাচে ফাস্ট বোলারদের বিরুদ্ধে ব্যাট করার সময় মনে হয় হাতে অনেক সময় পাচ্ছি।’’