বর্ষশেষে ফের টিম ইন্ডিয়ার কামাল! টেস্ট, ওডিআই এবং টি-টোয়েন্টি— আইসিসি-র দশকসেরা ক্রিকেটারদের তিনটে দলেই জায়গা করে নিলেন ভারতীয় ক্রিকেটাররা। টেস্ট হোক বা ওডিআই অথবা টি-টোয়েন্টির মতো উত্তেজক ফরম্যাট— কোনও তালিকাই টিম ইন্ডিয়ার কোনও না কোনও সদস্য রয়েছেন। কোন কোন ভারতীয়ের সে তকমা জুটল? কোন দলেই বা জায়গা পেলেন? এক নজরে সে সবের হালহকিকত জেনে নিন।
রবিবার এক দশকের সেরা ক্রিকেটারদের তিনটে তালিকা প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের নিয়ামক সংস্থা আইসিসি। তিন ফর্ম্যাটের তিনটে তালিকা মিলিয়ে মোট পাঁচ জন ভারতীয় ক্রিকেটারকে দেখা গিয়েছে।
আইসিসি-র তিনটে দলেই রয়েছেন বিরাট কোহালি। কোহালি আবার দশকের সেরা টেস্ট দলের অধিনায়কও বটে। টেস্ট ছাড়াও টি-টোয়েন্টি এবং ওডিআই দলেও রয়েছেন বিরাট। একমাত্র ভারতীয় ক্রিকেটার হিসেবে তিনটি দলেই রয়েছেন তিনি। ফলে কোহালির মুকুটে ফের একটি অনন্য সম্মান জুড়ল।
দশকের সেরা ক্রিকেটার হিসেবে টেস্ট দলে কোহালি ছাড়াও রয়েছেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন। অন্য দিকে, আইসিসি-র বিচারে কোহালি ছাড়াও রোহিত শর্মা এবং মহেন্দ্র সিংহ ধোনি ওডিআই এবং টি-টোয়েন্টিতে দশকসেরা দলে রয়েছেন।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে নিউজিল্যান্ডের ট্রেন্ট বোল্টকে হঠিয়ে আইসিসি-র ওডিআইতে র্যাঙ্কিংয়ে এক নম্বর বোলারের জায়গা দখল করেছিলেন যশপ্রীত বুমরা। তবে সেই আইসিসি-র বিচারেই ওডিআই দলে জায়গা হয়নি তাঁর। যদিও টি-টোয়েন্টির দশকসেরা দলে ঢুকেছেন বুমরা।
যে ৫ ভারতীয় ক্রিকেটার আইসিসি-র কোনও না কোনও দশকসেরা দলে রয়েছেন, তাঁদের মধ্যে যশপ্রীত বুমরাই সর্বকনিষ্ঠ। ২০১৬ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচে অভিষেকের পর থেকে ডেথ ওভারে বিপক্ষের ত্রাস হয়ে উঠেছেন বুমরা। ৫০ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ৫৯টা শিকার রয়েছে তাঁর ঝুলিতে। ডেথ ওভারে উইকেট তোলার পাশাপাশি রান দেওয়ার ব্যাপারেও বিশ্বের অন্যতম কৃপণ বোলার হিসেবেও নাম কুড়িয়েছেন তিনি।
আইসিসি-র দশকসেরার দলে নাম রয়ছে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের ক্যাপ্টেন রোহিত শর্মারও। টেস্ট দলে জায়গা না হলেও টি-টোয়েন্টি এবং ওডিআই— দু’দলেই রয়েছেন রোহিত।
টি-টোয়েন্টি এবং ওডিআই কেরিয়ারে দেদার রান কুড়িয়েছেন রোহিত শর্মা। ২০০৭ সালে ওই দুই ফরম্যাটেই অভিষেক হয়েছিল তাঁর। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ভারতীয় জার্সিতে নেমেছিলেন ওডিআইতে। এবং সে বছরই ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে অভিষেক হয়েছিল টি-টোয়েন্টি ম্যাচে।
আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ৪টে সেঞ্চুরির মালিক রোহিতের ব্যাটে থেকে বেরিয়েছে ২৭৭৩ রান। স্ট্রাইক রেট ১৩৮.৩৮। অন্য দিকে, ৫০ ওভারের ফরম্যাটে তাঁর রান প্রায় ১০ হাজারের কাছাকাছি (৯১১৫)। গড় ৪৯.২৭। সর্বোচ্চ ২৬৪। সেই সঙ্গে যোগ করুন ২৯টা সেঞ্চুরিও।
রোহিতের মতোই টি-টোয়েন্টি এবং ওডিআই, দু’দলে জায়গা না হলেও টেস্টের দশকসেরার দলে রয়েছেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন। বিদেশের মাটিতে তো বটেই, দেশের মাটিতেও টিম ইন্ডিয়ার বহু জয়ের শরিক অশ্বিন। একমাত্র ভারতীয় বোলার হিসেবে আইসিসি-র দশকসেরা টেস্ট দলে রয়েছেন তিনি।
এখনও পর্যন্ত ৭৩টি টেস্ট খেলা অশ্বিনের শিকার হয়েছেন ৩৭০ জন। ইকোনমি রেট ২.৮৪। গড় ২৫.২৭। যদিও অস্ট্রেলিয়ার চলতি সিরিজে থাকা এই বোলারের পরিসংখ্যানে আরও সংখ্যা জুড়বে বলেই আশা ভারতীয় ক্রিকেট ভক্তদের।
রোহিতের মতোই টেস্ট দলে জায়গা পাননি মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। তবে সে ‘খামতি’ পুষিয়ে দিয়েছেন আইসিসি-র বিচারে দশকসেরা ওডিআই এবং টি-টোয়েন্টি দলের ক্যাপ্টেন হয়ে। ২০১১-র আইসিসি বিশ্বকাপ জয়ী ক্যাপ্টেনের রেকর্ডই তাঁর হয়ে কথা বলছে।
দেশের অন্যতম সফল অধিনায়ক ধোনি ৭২টি টি-টোয়েন্টিতে ভারতকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তার মধ্যে ৪১টি জয় এসেছে টিম ইন্ডিয়ার। টি-টোয়েন্টিতেও তাঁর সাফল্য কম নয়।
কেরিয়ারে ৩৫০টি ওডিআই খেলেছেন ধোনি। তাতে সর্বোচ্চ ১৮৩ রানের অপরাজিত ইনিংসের পাশাপাশি বহু ম্যাচজেতানো মুহূর্তও রয়েছে। রয়েছে ১০৭৭৩ রান। এর সঙ্গে ১০টি সেঞ্চুরিও যোগ করে নিন। টি-টোয়েন্টিতেও ধোনির কেরিয়ার কম আকর্ষণীয় নয়। চলতি বছরের ১৫ অগস্টে অবসরের আগে ৯৮ আন্তর্জাতিক ম্যাচে ১৬১৭ রান রয়েছে তাঁর। স্ট্রাইক রেট ১২৬.১৩।
একমাত্র এশীয় ক্যাপ্টেন হিসেবে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে টেস্ট সিরিজ জেতার কৃতিত্ব রয়েছে বিরাট কোহালির। ২০১৪-’১৫ মরসুমে টিম ইন্ডিয়ার ক্যাপ্টেন্সি পাওয়ার পর থেকে প্রায়শই নয়া নজির গড়েছেন তিনি। ৫৬টি টেস্ট ম্যাচে ৩৩টি জয় এসেছে তাঁর নেতৃত্বে।
২০১০ সালে জিম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে টি-টোয়েন্টি অভিষেক হয়েছিল কোহালির। এখনও পর্যন্ত ৮৪টি ম্যাচে ২৯১৮ রান করা কোহালির স্ট্রাইক রেট ১৩৮.৪৪। ২৫১টি ওডিআই ম্যাচে ১২ হাজারের বেশি রান (১২০৪০)। সেখানেও চমকপ্রদ গড় ৫৯.৩১। অন্য দিকে, ২০১১-তে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে টেস্টে অভিষেক পর থেকে ৭৩১৮ রান বেরিয়েছে তাঁর ব্যাট থেকে। টেস্টে ২৭ এবং ওডিআইতে ৪৩ সেঞ্চুরির মালিক যে আইসিসি-র বিচারে তিন ফরম্যাটেই দশকসেরার দলে থাকবেন, তাতে তাই আশ্চর্যের কিছু নেই।
কোহালি-ধোনিদের পাশাপাশি টি-টোয়েন্টির দলে রয়েছেন ক্রিস গেল অ্যারন ফিঞ্চ, এবি ডেভিলিয়ার্স, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, কায়রন পোলার্ড লাসিথ মালিঙ্গারা। তবে চমকে দিয়েছেন আফগানিস্তানের স্পিনার রশিদ খান। আইপিএলের সফল বোলার জায়গা করে নিয়েছেন আইসিসি-র দশকসেরাদের দলে।
টেস্ট দলে কোহালির সঙ্গী হয়েছেন অ্যালিস্টার কুক বা ডেভিড ওয়ার্নার, কেন উইলিয়ামসন, স্টিভ স্মিথ, কুমার সঙ্গকারা, বেন স্টোকস, ডেল স্টেইন, স্টুয়ার্ট ব্রড এবং জেমস অ্যান্ডারসন।
ওডিআই টিমে ওয়ার্নার, ডেভিলিয়ার্সের পাশাপাশি রয়েছেন শাকিব আল হাসান, বেন স্টোকস, মিচেল স্টার্ক, ট্রেন্ট বোল্ট, ইমরান তাহির এবং মালিঙ্গা।
দশকসেরা টিমের নাম তো ঘোষণা হল। তবে কী ভাবে বেছে নেওয়া হল এই ক্রিকেটারদের? আইসিসি-র তরফে জানানো হয়েছে যে সাংবাদিক এবং সম্পচারকারীদের নিয়ে গঠিত ভোটিং অ্যাকাডেমির বিচারে ওই দল তৈরি করা হয়েছে।