অবশেষে অপেক্ষার অবসান। দুই থেকে তিন হলেন বিরাট-অনুষ্কা । তাঁদের কোল আলো করে সোমবার দুপুরে এল কন্যাসন্তান।
সকলের সঙ্গে টুইটারের মাধ্যমে এই সুখবর ভাগ করে নিয়েছেন স্বয়ং কোহালি। এই খবর জানার পরেই অনেকে বলছেন, সইফিনার তৈমুরের নতুন ‘কম্পিটিটর’ এসে গেল!
দিন কয়েক আগেই একটি রেডিয়ো টক শো-তে স্বয়ং শর্মিলা ঠাকুর বৌমা করিনাকে বলেছিলেন, বিরাট- অনুষ্কার সন্তান এলেই পাপারাৎজিদের হাত থেকে নিস্তার পাবে তৈমুর। নয় নয় করে সেই দিনটা এসে গেল। কিন্তু আদৌ কি শর্মিলার অনুমান সত্যি হতে চলেছে?
দিন কয়েক আগেই একটি ম্যাগাজিনের সাক্ষাৎকারে অনুষ্কা বলেছিলেন, সোশ্যাল মিডিয়া এবং গ্ল্যামার দুনিয়ার আলোর ঝলকানি থেকে নিজের সন্তানকে তিনি দূরে রাখতে চান। প্রাচুর্যের মধ্যে বড় হয়ে সে যাতে ‘অবাধ্য’ না হয়, তা নিয়ে সতর্ক থাকবেন বিরাট এবং অনুষ্কা দু’জনেই।
তবে এখনই এ সব ভাবার সময় নয়। প্রেম, বিয়ে-সংসারের পর নতুন অতিথিকে তিলে তিলে বড় করার নতুন অধ্যায় শুরু হল তাঁদের জীবনে। সে আসার সঙ্গেই পূর্ণতা পেল ‘বিরুষ্কা’র পরিবার। কিন্তু প্রেমের নতুন অভিধান তৈরি করা এই পাওয়ার কাপলের ভালবাসার শুরুর দিনগুলো কি এতটাই মসৃণ ছিল? দেখে নেওয়া যাক এক ঝলকে
এক ঝলকে ‘বিরুষ্কা’র লভস্টোরি বলতে গেলে অনেক কথাই বলতে হবে। ২০১৩ সালে একটি বিজ্ঞাপনের শ্যুটিংয়ের সময় প্রথম দেখা হয়েছিল বিরাট-অনুষ্কার। সে দিন থেকেই প্রেম শুরু। এটা কি ‘লভ অ্যাট ফার্স্ট সাইট’?
বিরাট একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, হিল পরে সেটে এসেছিলেন অনুষ্কা। বিরাটের চেয়ে তাঁর উচ্চতা অনেকটা বেশি বলেই মনে হচ্ছিল। এ দিকে শ্যুটিং নিয়ে একটু চিন্তায় ছিলেন বিরাট। আলাপ করে বরফ গলানোর জন্য মজার ছলেই তাঁকে বলেন, এর থেকে উচু হিল ছিল না?
বিরাট জানান, অনুষ্কার ভাবটা ছিল, ‘এক্সকিউজ মি’! খানিকটা অপ্রস্তুত হয়েই বিরাট বলে ফেলেন, আমি মজা করছিলাম। বিরাটের কথায়, “অনুষ্কাকে এত আত্মবিশ্বাসী মনে হচ্ছিল, আর আমি একেবারে বোকা বনে গিয়েছিলাম।’’
সম্পর্ক শুরু হওয়ার পর থেকে সেই অর্থে কোনওদিনই তা গোপন করেননি দুই তারকা। ২০১৪-এ দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ভারতীয় ক্রিকেট টিম মুম্বই ফেরার পরই বিরাট সোজা গিয়েছিলেন অনুষ্কার বাড়িতে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে।
এ দিকে বলি ডিভা অনুষ্কাও ভারতীয় দলের নিউজিল্যান্ড সফরের সময় বিরাটের সঙ্গে গিয়ে দেখা করেছিলেন।
দু’জনকে একসঙ্গে আইএসএল চলাকালীন গ্যালারিতে একসঙ্গে দেখা গিয়েছিল। বিরাটের দল এফসি গোয়ার জন্য একসঙ্গে গলা ফাটাচ্ছিলেন ‘লভ বার্ডস’।
এর পর অসংখ্য বার একসঙ্গে জনসমক্ষে আসায় প্রমাণ হয়ে গিয়েছিল জমিয়ে প্রেম করছেন বিরুষ্কা। দু’জনেই মধ্যবিত্ত পরিবারে বেড়ে ওঠায় মূল্যবোধগুলোও ছিল এক। ২০০৮ সালে অনুষ্কা যখন প্রথম ছবি করছেন, তখন জাতীয় দলের হয়ে ডেবিউ করছেন বিরাট। দু’জনেই নিজের জগতে পরিশ্রম করে নিজের জায়গা তৈরি করেছেন। এগুলোও ছিল ভাল লাগার জায়গা, জানান বিরাট।
সতীর্থ যুবরাজ সিংহের বিয়েতে একসঙ্গে বিরাট-অনুষ্কার ভাংরা চোখ ধাঁধিয়ে দিয়েছিল সবার। পটৌডি-শর্মিলার উদাহরণও আসতে শুরু করে সেই সময় থেকেই। জল্পনা বাড়তে থাকে এই জুটিকে নিয়ে।
কয়েক বছর আগে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শাহরুখ খান বিরাটের হাতে তুলে দিয়েছিলেন অনুষ্কার একটি ছবি। সেই মুহূর্তে বিরাটের গাল লাল হওয়া থুরি ‘ব্লাশ’ করাই ফের প্রমাণ করেছিল কতটা গভীর হয়েছে তাঁদের সম্পর্ক।
২০১৪ সালেই বিরাটের সেই ‘এপিক ফ্লাইং কিস’-এ সবাই বুঝে যান, এ জুটির প্রেম কতটা গভীর।
এক দিনের ক্রিকেটে দ্রুততম ৬ হাজার রানের রেকর্ড গড়েন বিরাট। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ছিল সেই ম্যাচ। বিরাট ব্যাটে চুমু খান। তার পর ব্যাট দেখান স্ট্যান্ডে বসা অনুষ্কার দিকে। অনুষ্কাও উঠে দাঁড়ান। ‘লাভিডাভি কাপল’-এর সেরা উদাহরণ হয়ে দাঁড়ান তাঁরা। তবে সবটাই যে ভাল ছিল এমনটা নয়।
‘মেয়ে’ হওয়ার খেসারত দিতে হয় অনুষ্কাকে। বিরাটের খারাপ খেলার জন্য অনুষ্কাকে দায়ী করেছিলেন নেটিজেনদের একাংশ।
২০১৫-র বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ভারতের হার এবং ২০১৬-র আইসিসি ওয়ার্ল্ড টি টোয়েন্টিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ভারতের হারের জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় আক্রমণের মুখে পড়েছিলেন অনুষ্কা শর্মা।
বেশ কিছু দিন চুপ থাকার পর যোগ্য জবাব দিয়েছিলেন বিরাট। সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘শেম’ লিখে অনুষ্কার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন বিরাট।
২০১৬-র শুরুর দিকে রটে গিয়েছিল বিরাট-অনুষ্কার ব্রেক-আপ হয়ে গিয়েছে। বিরাট ইনস্টাগ্রামে একটি ছবি পোস্ট করে লিখেছিলেন, ‘হার্টব্রোকেন’। আর তাতেই জল্পনা জোরালো হয়।
যদিও সেই জল্পনায় জল ঢেলে তাঁদের ফের একসঙ্গে দেখা যায়। এর পর থেকে, একাধিক বার জনসমক্ষে প্রশংসা করে বিরাট বুঝিয়ে দিয়েছিলেন অনুষ্কা তাঁর জীবনে কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
আন্তর্জাতিক নারী দিবসে মা ও অনুষ্কার সঙ্গে দু’টি ছবির কোলাজ পোস্ট করে বিরাট লিখেছিলেন, ‘...আমার জীবনের সবচেয়ে শক্তিশালী দুই নারী...।’
ভ্যালেন্টাইন্স ডে’র পর দিন বিরাট এই ছবিটি পোস্ট করে লিখেছিলেন, ‘প্রতি দিনই ভ্যালেন্টাইন্স ডে। তুমি প্রতি দিনই এমন করে দিয়েছ...’।
২০১৭ সালে আরও একটি ছবি ভাইরাল হয়। একটি টেবিলে পাশাপাশি বসে রয়েছেন বিরাট-অনুষ্কা। তাঁদের সামনে একটি খাবারের থালি ও জলের বোতল। অনুষ্কা কোনও একটি পদ চেখে দেখছেন আর সেই সময়ে বিরাট মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে রয়েছেন বান্ধবীর দিকে। খাওয়ায় তাঁর মন নেই।
নানা সময় দু’জনের বেড়াতে যাওয়ার ছবিও ভাইরাল হয়েছে। বিরাট ছবি পোস্ট করে ক্যাপশনে লিখেছেন, ‘প্রয়োজনীয় ব্রেক আমার ভালবাসার সঙ্গে।’
আবার কখনও বলা হয়েছে বিরাটই অনুষ্কার ছবি প্রযোজনা করছেন। তখনই অনুষ্কা টুইটে জবাব দিয়েছেন, তাঁর এবং কলাকুশলীদের পরিশ্রমকে নিন্দুকরা এ ভাবে ছোট করতে চাইছেন। বিরাটও পাশে দাঁড়িয়েছেন অনুষ্কার।
জাহির খান ও সাগরিকা ঘাটগের রিসেপশনে দু’জনের একসঙ্গে উপস্থিতির পরই জল্পনা শুরু হয়েছিল, এ বার হয়তো ‘বিরুষ্কা’র পালা। ঠিক তার পরই ইটালির তাস্কানিতে সাত পাকে বাঁধা পড়লেন দু’জনে।
স্বপ্নের বিয়ের পরও করবা চৌথ অনুষ্ঠানের দিন অনুষ্কার সঙ্গে ছবি পোস্ট করে বিরাট লেখেন, যাঁরা এক সঙ্গে হাসতে পারে, এক সঙ্গে উপোস করতেও জানে। অনুষ্কার সঙ্গেই উপোস করেন বিরাটও। পিতৃতন্ত্রের সংজ্ঞা বদলে অনুষ্কার পাশে দাঁড়িয়েছেন তাঁর স্বামী এ ভাবেই।
বিয়ের পর টেস্টে ২১ নম্বর সেঞ্চুরি পূর্ণ করে কোহলি ওয়ে়ডিং রিংয়ে চুম্বন করে ভালবাসা ব্যক্ত করেন স্ত্রী অনুষ্কার প্রতি। দু’জনেই ব্যস্ততম তারকা। তবু যখনই দু’জনে সময় পান, একসঙ্গে সময় কাটানোর চেষ্টা করেন। তিনি এবং বিরাট একসঙ্গে থাকার সময় কী রকম অনুভূতি হয়? বিরাট-প্রেমে ডুবে গিয়ে অনুষ্কার জবাব, ‘‘দু’জনেরই তখন মনে হয় যেন বাকি পৃথিবীতে আর কোনও কিছুর অস্তিত্ব নেই। শুধু আমরা দু’জনেই আছি।’’
লকডাউনে দু’জন একসঙ্গে গেম খেলা থেকে বিরাটের চুল ছেঁটে দেওয়া, একে অপরের ছবি তোলা, আর পাঁচ জন যুগলের মতোই তাঁরাও সময় কাটিয়েছেন একান্তে তাঁদের সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট থেকে স্পষ্ট এ কথা। অনুষ্কা প্রযোজিত ‘পাতাললোক’ দেখে অভিভূত, বিরাটও জানান এ কথা।
জানুয়ারিতে আসতে চলেছে পরিবারের নতুন সদস্য, বিরুষ্কা নিজেই জানিয়েছিলেন অনুরাগীদের। সে ছবিও ভাইরাল হয়ে যায়।
সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে আইপিএলেও বিরাটের সঙ্গেই ছিলেন অনুষ্কা। অনুষ্কা খেয়েছেন কি না, মাঠ থেকে ইশারা করে জানতে চেয়েছিলেন সে কথাও। অনুষ্কাও উত্তর দিয়েছিলেন, হ্যাঁ।স্ত্রীর খেয়াল রাখতে অস্ট্রেলিয়া সিরিজের মাঝেই প্রথম দিন-রাতের টেস্ট খেলে বাড়ি চলে এসেছিলেন বিরাট। ভারতের অনেক প্রাক্তন ক্রিকেটারের মত ছিল, বিরাটের দলকে ছেড়ে দেশে ফিরে আসা উচিত হয়নি। তবে বিরাট সে সবে কান দেননি। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী অ্যাডিলেডে গোলাপি বলের টেস্ট খেলে স্ত্রীর পাশে থাকতে দেশে ফিরে এসেছিলেন ভারত অধিনায়ক। এর পর তাঁদের প্রেম নিয়ে আর কিইবা বলার থাকে!