বিতর্ক: ক্রিজ়ের বাইরে দাঁড়িয়ে ব্যাট করছেন ঋষভ। ফাইল চিত্র
সুইংয়ের মোকাবিলা করার জন্য ক্রিজ়ের বাইরে দাঁড়িয়ে ব্যাট করার প্রবণতা দেখা গিয়েছে ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের মধ্যে। ২০১৪ সালে ইংল্যান্ড সফরের টেস্ট সিরিজ়ে বিরাট কোহালি ব্যর্থ হওয়ার পর থেকেই সুইং সামলানোর জন্য এই পথ বেছে নেন। যাতে সুইং ভাঙার আগেই ব্যাটে স্পর্শ করে বল।
২০১৪ সালে অস্ট্রেলিয়া সফরে এই পন্থা অবলম্বন করেই চারটি সেঞ্চুরি করেছিলেন কোহালি। ২০১৮ সালেও ইংল্যান্ড সফরে সফল হয়েছিলেন। কিন্তু ২০২১-এর ইংল্যান্ড সফরে ক্রিজ়ের বাইরে দাঁড়িয়েও সুইং সামলাতে সমস্যা হচ্ছে তাঁর। বিরাটের পাশাপাশি অজিঙ্ক রাহানে, ঋষভ পন্থ, চেতেশ্বর পুজারাও ক্রিজ়ের বাইরে দাঁড়িয়েই ব্যাট করার পথে হাঁটতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছেন। দ্বিতীয় ইনিংসে যদিও সেই প্রবণতা খুব একটা দেখা যায়নি।
প্রাক্তন ভারতীয় অধিনায়ক দিলীপ বেঙ্গসরকর মনে করেন, এই পথ বেছে নেওয়া হলে বলের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ার প্রবণতা বাড়ে ব্যাটসম্যানদের মধ্যে। তাই বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বাইরের দিকে যাওয়া বলে ব্যাট ছুঁইয়ে বিপদে পড়ছেন বিরাট, রাহানেরা। বলের জন্য অপেক্ষা করে ব্যাকফুটে খেলার সাহসও দেখাচ্ছেন না কেউ। অথচ ইংল্যান্ড অধিনায়ক জো রুট, ব্যাকফুটে খেলে সাবলীল গতিতে রান করে চলেছেন। টানা তিন ম্যাচে তিনটি সেঞ্চুরি করে প্রমাণ করেছেন যে, সামনের পায়ে খেলার সঙ্গেই পিছনের পায়ের ব্যবহার কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
রুট যে পদ্ধতি অবলম্বন করে সফল হয়েছেন, ইংল্যান্ডের পরিবেশে কি সেটাই আদর্শ? আনন্দবাজারকে ‘লর্ড অব লর্ডস’ বেঙ্গসরকর বলেন, ‘‘অবশ্যই। লর্ডসে যে তিনটি সেঞ্চুরি করেছি, প্রত্যেকটি ম্যাচেই পিচে প্রচুর ঘাস ছিল। এখনও মনে পড়ে যাচ্ছে, ইনিংসের শুরুর দিকে একটিও বাইরের দিকে বেরিয়ে যাওয়া বলে ব্যাট বাড়াতাম না। অপেক্ষা করতাম শরীরের দিকে ধেয়ে আসা বলের জন্য। যাতে ব্যাট ছুঁয়ে বল স্লিপে না চলে যায়।’’যোগ করেন, ‘‘ভারতীয় ওপেনারদের বাদ দিয়ে মাঝের সারির ব্যাটসম্যানেরা বার বার একই ভুল করছে। কোহালি একই ভাবে প্রায় ১৫ বারেরও বেশি আউট হয়েছে।’’
ক্রিজ়ের বাইরে দাঁড়িয়ে ব্যাট করলে সুইং সামলাতে কি বেশি সুবিধে হয়? বেঙ্গসরকরের উত্তর, ‘‘উপমহাদেশের পিচে অবশ্যই তা সাহায্য করে। কারণ, পিচে বেশি বাউন্স থাকে না। ব্যাটের কোণে বল লাগলেও স্লিপে খুব একটা পৌঁছয় না। অস্ট্রেলিয়াতেও এই পথ বেছে নিলে সাহায্য পাওয়া যায়। সেখানে বাউন্স বেশি থাকে, তাই এলবিডব্লিউ হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। শট নিতে সমস্যা হয় না। কিন্ত ইংল্যান্ডে যতটা সম্ভব দেরিতে বল খেলা উচিত।’’
বেঙ্গসরকরের আরও ব্যাখ্যা, ‘‘ক্রিজ়ের বাইরে দাঁড়ালেই ব্যাটসম্যান মনে করে সে বলের অনেক কাছে চলে গিয়েছে। তাই শট খেলার ইচ্ছে তৈরি হয়। অজান্তেই বাইরের বলে ব্যাট বাড়িয়ে দেয়। আমি যদি ক্রিজ়ের ভিতরে দাঁড়াই, তা হলে অনায়াসে সুইংয়ের জন্য অপেক্ষা করতে পারব। শেষ মুহূর্তে বলের উপরে ব্যাট নিয়ে আসতে পারব। ব্যাকফুটে শট খেলার জন্যও অনেক সময় পাব।’’
প্রাক্তন ভারতীয় ওপেনার ওয়াসিম জাফরও ২০০২ সালে ইংল্যান্ড সফরের প্রথম ম্যাচেই হাফসেঞ্চুরি করেছিলেন। দেশের হয়ে মোট পাঁচটি সেঞ্চুরি আছে তাঁর। ইংল্যান্ডে বহু বছর কাউন্টি খেলেছেন বার্মিংহাম ও উল্ভারহ্যাম্পটনের হয়ে। তিনি বলছিলেন, ‘‘ইংল্যান্ডের পরিবেশে বোলার সব সময় চাইবে, ব্যাটসম্যান যেন বল তাড়া করে। সুইংয়ের সঙ্গে ব্যাট বাড়ালে শুধুমাত্র স্লিপ অঞ্চলে ক্যাচ দিয়ে আউট হওয়ার ভয়ই থাকে না, ব্যাট ও পায়ের মধ্যে বড় ফাঁকও তৈরি হয়।’’
প্রাক্তন ইংল্যান্ড ওপেনার রবার্ট কি বলছিলেন, ‘‘শেষ তিন ম্যাচে রুট যে ভাবে ইনিংস সাজিয়েছে, সেটাই এই পরিবেশে আদর্শ ব্যাটিং।’’