Vijay Amritraj

Vijay Amritraj: উইম্বলডনের মাঝে বিজয় অমৃতরাজকে সম্মানিত করল বিশ্ব টেনিস

টেনিসের জন্য যেমন নিজের সারা জীবন উৎসর্গ করেছেন, তেমনই মানুষের পাশে থাকতেও পিছপা হননি অমৃতরাজ। তাঁর এই বিশেষ ভূমিকাকেই স্বীকৃতি দিল আইটিএফ।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ জুন ২০২২ ২০:৪০
Share:

পুরস্কার হাতে বিজয় অমৃতরাজ। ছবি: টুইটার।

টেনিসে বিশেষ অবদানের জন্য বিজয় অমৃতরাজকে সম্মানিত করল আন্তর্জাতিক টেনিস ফেডারেশন। লন্ডনে গোল্ডেন অ্যাচিভমেন্ট ২০২১ পুরস্কার দেওয়া হল তাঁকে। উইম্বলডনের মাঝেই অমৃতরাজের হাত ধরে সম্মানিত হল ভারতীয় টেনিস।

Advertisement

কখনও গ্র্যান্ড স্ল্যাম সিঙ্গলসের সেমিফাইনাল খেলেননি। উইম্বলডন এবং ইউএস ওপেনের শেষ আটে পৌঁছেছিলেন দু’বার করে। ডাবলসে অবশ্য এক বার উইম্বলডনের শেষ চারে পৌঁছেছিলেন অমৃতরাজ। সেই অমৃতরাজকেই সম্মানিত করা হল টেনিস দুনিয়ার অন্যতম সম্মানজনক পুরস্কারে।

খেলোয়াড় জীবনে কোর্টের ভিতর এবং বাইরে সমান ভাবে উজ্জ্বল ছিলেন অমৃতরাজ। সে কথা মেনে নিয়েছে টেনিসের বিশ্ব নিয়ামক সংস্থাও। আন্তর্জাতিক টেনিস ফেডারেশনের হল অব ফেমের সিইও টড মার্টিন বলেছেন, ‘‘একজন খেলোয়াড়, মানবিক এবং খেলার দূত হিসাবে বিজয়কে সম্মানিত করা হল। ওঁর টেনিসের প্রতি আবেগ এবং ভালবাসা খেলার উন্নতির ক্ষেত্রে তফাৎ গড়ে দিয়েছে। এক দিকে খেলাটার প্রসার ঘটিয়েছেন, অন্য দিকে যাঁদের প্রয়োজন তাঁদের সাহায্য করেছেন।’’

Advertisement

বিশ্ব টেনিসের নিয়ামক সংস্থা আইটিএফের হল অব ফেমের পক্ষ থেকে প্রতি বছর এক জনকে দেওয়া হয় গোল্ডেন অ্যাচিভমেন্ট পুরস্কার। টেনিস কোর্ট এবং কোর্টের বাইরে খেলার প্রসার, উন্নয়ন-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতি এই বিশেষ পুরস্কার। প্রথম ভারতীয় হিসেবে যা পেলেন অমৃতরাজ।

সম্মানিত হয়ে খুশি অমৃতরাজ। তিনি বলেছেন, ‘‘আন্তর্জাতিক টেনিস ফেডারেশনের হল অব ফেমের তরফে এই দুর্দান্ত পুরস্কার পেয়ে আমি অভিভূত। অবিশ্বাস্য লাগছে। আমার জীবনযাত্রা এমন একটা খেলাকে ঘিরে, যেটাকে আমি সব সময় ভালবেসেছি। এই সম্মান আমার কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রত্যেক ভারতবাসীর তরফে পুরস্কার গ্রহণ করছি। ওঁরাই তো আমাকে বছরের পর বছর সমর্থন করেছেন।’’

অমৃতরাজ আরও বলেছেন, ‘‘আমি ভাগ্যবান। আমাদের খেলায় ভারতকে বিশ্বমঞ্চে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পেয়েছি। আশা করব আমার এই প্রচেষ্টা ভারতের অনেক তরুণকে অনুপ্রাণিত করবে। ওরাও বিশ্ব মঞ্চে ভারতের টেনিসকে তুলে ধরবে।’’

আন্তর্জাতিক টেনিসে অমৃতরাজকে সাফল্য বা পরিসংখ্যানের নিরিখে মাপতে গেলে ভুল হবে। প্রতিভা এবং দক্ষতার নিরিখে তাঁর টেনিসজীবন অনেক বেশি ঝকঝকে হওয়া উচিত ছিল। জীবনে ১৫টি খেতাব জিতেছিলেন অমৃতরাজ। টেনিসকে পেশা হিসাবে নেওয়ার সাহস ভারতে প্রথম দেখিয়ে ছিলেন তিনিই। তার পর অনেকেই টেনিসকে পেশা হিসাবে নিয়েছেন। কিন্তু সিঙ্গলসের ক্রমতালিকায় অমৃতরাজকে ছাপিয়ে যেতে পারেননি কেউই। ১৯৮০ সালের জুলাই মাসে তিনি ছিলেন বিশ্বের ১৮ নম্বর সিঙ্গলস খেলোয়াড়। এখনও পর্যন্ত কোনও ভারতীয় টেনিস খেলোয়াড়ের এটাই সেরা সিঙ্গলস র‌্যাঙ্কিং। ভারতের তো বটেই, তাঁর সময় অমৃতরাজই এশিয়ার সফলতম টেনিস খেলোয়াড় ছিলেন। দেশকে দু’বার ডেভিস কাপের ফাইনালেও তুলেছিলেন অমৃতরাজ। তা ছাড়াও ১৯৮৭ সালে ডেভিস কাপের ওয়ার্ল্ড গ্রুপে ইজরায়েলের বিরুদ্ধে খেলে বিশ্বমানবতার উদাহরণ সৃষ্টি করেছিলেন।

অমৃতরাজ হলেন সেই ব্যক্তি, যিনি ভারতীয় টেনিসকে পেশাদার দুনিয়ায় প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। ২৩ বছরের পেশাদার টেনিস জীবনে সমীহ আদায় করে নিয়েছিলেন বিশ্বের তাবড়ও প্রতিপক্ষদের। অবসর নেওয়ার পর ভারতের টেনিসের উন্নতির জন্য কাজ করেছেন। তরুণদের তুলে আনতে তৈরি করেছেন অ্যাকাডেমি। যে অ্যাকাডেমির সেরা ফসল লিয়েন্ডার পেজ।

বিশ্ব টেনিসে কোর্টের বাইরেও অমৃতরাজের অবদান উল্লেখযোগ্য। ১৯৮৯ সাল থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত তিনি ছিলেন এটিপির সভাপতি। ১৯৯১ সাল থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত তিনি ছিলেন এটিপি-র বোর্ডের অন্যতম সদস্য। সাধারণ মানুষের প্রতি তাঁর দরদ, ভালবাসাকে স্বীকৃতি দিয়েছে রাষ্ট্রপুঞ্জও। ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত তিনি ছিলেন এই বিশ্বসংস্থার শান্তির দূত। চাহিদা সম্পন্নদের পাশে দাঁড়াতে ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠা করেন বিজয় অমৃতরাজ ফাউন্ডেশন। যে সংস্থার প্রধান এবং একমাত্র লক্ষ্য সমাজসেবা।

পাঁচ দশকের বেশি সময় ধরে টেনিসের সঙ্গে নিজেকে প্রত্যক্ষ ভাবে জড়িয়ে রেখেছেন অমৃতরাজ। টেনিসের পরিচিতিকে কাজে লাগিয়েই কাজ করে চলেছেন সাধারণ চাহিদা সম্পন্ন মানুষের জন্য। ভবিষ্যতের টেনিস তারকাদের তুলে আনার চেষ্টা করছেন বছরের পর বছর। টেনিস আর অমৃতরাজ প্রায় সমার্থক হয়ে গিয়েছে ভারতের ক্রীড়াপ্রেমীদের কাছে। পাঁচ দশক ধরে অমৃতরাজের এই নিরলস অবদানকেই আইটিএফ স্বীকৃতি দিল।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement