কুস্তি কর্তার বিরুদ্ধে আন্দোলনে অনড় বজরং, সাক্ষীরা। —ফাইল ছবি।
কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রীদের সঙ্গে কয়েক দফা আলোচনায় যথাযথ তদন্তের আশ্বাস মিললেও প্রতিবাদের পথ থেকে সরতে নারাজ কুস্তিগিরেরা। কুস্তি কর্তা ব্রিজভূষণ শরণ সিংহের গ্রেফতারির দাবি থেকে সরছেন না তাঁরা। ১৫ জুনের মধ্যে অভিযুক্ত ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া না হলে আবার পথে নামার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বজরং পুনিয়া, সাক্ষী মালিকরা। তাঁদের অভিযোগ, ভুক্তভোগীদের উপর বিভিন্ন মহল থেকে চাপ দেওয়া হচ্ছে।
শনিবারই সাক্ষী জানিয়েছেন, সমস্যার সমাধান না হলে তাঁরা এশিয়ান গেমসে অংশগ্রহণ করবেন না। তিনি বলেছেন, “সব সমস্যার সমাধান হলে তবেই আমরা এশিয়ান গেমসে অংশ নেব। আপনারা কেউ জানেন না কতটা বিধ্বস্ত আমরা। রোজ কী পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যেতে হয়, সে সম্পর্কে কারও ধারণা নেই।” দ্রুত ব্যবস্থার আশায় নানা ভাবে কেন্দ্রীয় সরকারের উপর চাপ তৈরির চেষ্টা করছেন প্রতিবাদী কুস্তিগিরেরা। কুস্তিগিরদের করা এফআইআরের ভিত্তিতে ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে দিল্লি পুলিশ। কুস্তিগিরদের সঙ্গে আলোচনায় কেন্দ্রের পক্ষে ১৫ জুনের মধ্যে ছ’বারের বিজেপি সাংসদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। সেই দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে চান সাক্ষী, বজরংরা।
তাঁদের ধারণা, চাপের মুখেই অভিযোগের বয়ান বদল করতে বাধ্য হয়েছেন নাবালিকা কু্স্তিগিরের বাবা। সাক্ষী বলেছেন, ‘‘আর কী প্রমাণ চাই। নথিভুক্ত বয়ান হঠাৎ কী ভাবে পরিবর্তন হল, বুঝতে পারছি না আমরা। পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে নাবালিকা কুস্তিগিরের বাবাকে চাপ দেওয়া হয়েছে। অসম্ভব চাপ দেওয়া হচ্ছে। জানি না এ ভাবে আমরা কত দূর লড়াই করতে পারব।’’ সাক্ষীর আরও অভিযোগ, ‘‘বজরংয়ের কাছে একটা ফোন এসেছিল। ওকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, টাকা নিয়ে আন্দোলন থেকে সরে যাওয়ার জন্য। অনৈতিক ভাবে আন্দোলন শেষ করার চেষ্টা হচ্ছে। এই ঘটনায় আমরা ব্যথিত।’’
নাবালিকা কুস্তিগিরের বাবার ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে অভিযোগ পরিবর্তন নিয়ে বজরং বলেছেন, ‘‘ঠিক কী ঘটেছিল, তা ওই কুস্তিগিরের পরিবারই বলতে পারবে। সে নাবালিকা না কি সাবালিকা, তা-ও তাঁরা জানেন। তবে অনেক ভুয়ো খবর ছড়ানো হচ্ছে আমাদের আন্দোলনকে দুর্বল করার জন্য। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং ক্রীড়ামন্ত্রী আমাদের যথাযথ তদন্ত এবং ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। আমরা ১৫ জুন পর্যন্ত অপেক্ষা করব। না হলে আবার পথে নামব। আন্দোলনের জন্য কুস্তিগিরেরা কেউ সরকারি কাজে ফাঁকি দিচ্ছে না।’’ দিল্লির যন্তর মন্তর অথবা রামলীলা ময়দানে প্রয়োজনে আবার ধর্নায় বসার কথা বলেছেন কুস্তিগিরেরা। একই সঙ্গে সাক্ষীদের দাবি, তাঁদের একতা ভাঙার চেষ্টা করে লাভ হবে না। ভুয়ো খবর ছড়িয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি না করার আবেদন করেছেন সাক্ষী।
কুস্তিগিরদের পক্ষে আইনি বিষয়ের দেখভাল করছেন বিনেশ ফোগট। সোনিপতের পঞ্চায়েতে তাই তিনি উপস্থিত থাকতে পারেননি। তাঁর অভিযোগ, প্রতিবাদ শুরুর পর থেকে নানা ভাবে অপমানিত হতে হচ্ছে তাঁদের। তিনি বলেছেন, ‘‘এক জন বিজেপি সাংসদের বিরুদ্ধে যৌন নিগ্রহের মতো গুরুতর অভিযোগ ওঠার পরেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর এখনও কোনও মন্তব্য না করা বিস্ময়ের। অথচ এক বছর আগেই তাঁকে এই বিষয়টি জানানো হয়েছিল।’’ তাঁর আরও অভিযোগ, কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রীও মন দিয়ে তাঁদের কথা শোনেননি। বিনেশ বলেছেন, ‘‘অনুরাগ ঠাকুর আমার কথা শুনতে আগ্রহী বলে মনে হয়নি। কথা বলার প্রায় পুরো সময়টাই মন্ত্রী ফোন নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন।’’
সোনিপতের ছোটু রাম ধরমশালায় শনিবার প্রতিবাদী কুস্তিগিরেরা পঞ্চায়েত বসিয়েছিলেন। সেই পঞ্চায়েতে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল আন্দোলনের পাশে থাকা পঞ্জাব ও হরিয়ানার বিভিন্ন খাপ পঞ্চায়েত, কৃষক এবং মহিলা সংগঠনের নেতাদের। সেখানে আন্দোলনের পরবর্তী রূপরেখা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।