বিবাদ: বাগযুদ্ধে জড়ালেন গম্ভীর (বাঁ দিকে) ও প্রসাদ। —ফাইল চিত্র
বিশ্বকাপ শেষ হয়ে গিয়েছে, কিন্তু অম্বাতি রায়ডুকে নিয়ে বিতর্ক থামার লক্ষণ নেই। এ বার প্রকাশ্য টিভি শো-তেই রায়ডুকে নিয়ে বাগ্যুদ্ধে জড়িয়ে পড়লেন প্রাক্তন ভারতীয় ওপেনার গৌতম গম্ভীর এবং সদ্য প্রাক্তন নির্বাচক প্রধান এম এস কে প্রসাদ। ২০১৯ বিশ্বকাপে একেবারে শেষ মুহূর্তে এসে দল থেকে বাদ পড়েন রায়ডু। তাঁর জায়গায় নেওয়া হয় অলরাউন্ডার বিজয় শঙ্করকে। যা নিয়ে বিতর্কের ঝড় বয়ে গিয়েছিল।
সম্প্রচারকারী চ্যানেল স্টার স্পোর্টসের একটি শো ‘ক্রিকেট কানেক্টেড’-এ গম্ভীর বলেন, ‘‘নির্বাচকেরা বাদ পড়া ক্রিকেটারদের সঙ্গে কথা বলে ছবিটা কখনও পরিষ্কার করে না। এই তো অম্বাতি রায়ডুর সঙ্গে কী হল, সবাই দেখল। ওকে দু’বছরের জন্য খেলিয়ে গেল নির্বাচকেরা। আর বিশ্বকাপের ঠিক আগে মনে হল এক জন থ্রি-ডি ক্রিকেটার দরকার। থ্রি-ডি ক্রিকেটার দরকার, এ রকম বিবৃতিও কি জাতীয় নির্বাচক কমিটির চেয়ারম্যানের থেকে আমরা শুনতে চাই?’’
যার উত্তরে এম এস প্রসাদ পাল্টা বলে ওঠেন, ‘‘আমাদের দলে উপরের দিকে সকলে ব্যাটসম্যান ছিল। শিখর ধওয়ন, রোহিত শর্মা, বিরাট কোহালি। এরা কেউ বল করে না। কিন্তু বিজয় শঙ্করের সুবিধা ছিল, ও উপরের দিকে ব্যাট করতে পারত আবার বলও করে দিত। ইংল্যান্ডের আবহাওয়ায় বল হাতে ও কাজে আসতে পারত।’’ এখানেই না থেমে প্রসাদ যোগ করেন, শঙ্করের ঘরোয়া ক্রিকেটের রেকর্ডও যথেষ্ট ভাল ছিল। তাঁকে দল নেওয়ার সময় সেই তথ্যটাও নির্বাচকদের প্রভাবিত করেছিল। যদিও বিজয় শঙ্করের নৈপুণ্য ও দক্ষতা নিয়ে সেই সময়েই অনেকের মনে প্রশ্ন জেগেছিল। শুরুতে চোট পেয়ে ছিটকেও যান তিনি। তাই বিশ্বকাপে খুব বেশি দিন খেলতেও পারেননি।
গম্ভীর ও প্রসাদ যখন একে অপরকে তির ছুড়ছেন, তাতে যোগ দেন কৃষ্ণমাচারী শ্রীকান্ত। অতীতের ঝোড়ো ব্যাটসম্যান বলেন, ‘‘আমি গৌতম বা এম এস কে কাউকেই ছোট করছি না। তবে একটা কথা বলে দিতে চাই। আন্তর্জাতিক আর ঘরোয়া ক্রিকেটের মধ্যে অনেক তফাত রয়েছে।’’ এর উত্তরে প্রসাদ তখন বলেন, ‘‘আমি চিকার (শ্রীকান্তের ডাক নাম) সঙ্গে একমত। তবে সব সময় অভিজ্ঞতার দিকটাকেই শুধু প্রাধান্য দিলে হয় না। সেটা করতে গেলে তরুণ ক্রিকেটারদের অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায় না।’’
বিশ্বকাপের প্রস্তুতি পর্বে একটা সময়ে ধরেই নেওয়া হয়েছিল, অম্বাতি রায়ডুকে চূড়ান্ত দলে দেখা যাবে। কিন্তু শেষ পর্বে এসে তিনি বাদ পড়েন। বিজয় শঙ্করের দলে ঢোকা নিয়ে বিতর্ক চরমে উঠলে তখনকার প্রধান নির্বাচক এম এস কে প্রসাদ বিবৃতি দেন, ‘‘বিজয় শঙ্কর থ্রি ডি (থ্রি ডাইমেনশনাল) ক্রিকেটার।’’ অর্থাৎ কি না, ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিং তিন বিভাগেই তিনি অবদান রাখতে পারেন। পাল্টা জবাব দিয়ে রায়ডু তখন টুইট করেন, ‘‘বিশ্বকাপ দেখব বলে থ্রি ডি চশমা অর্ডার করেছি।’’
প্রসাদের সেই মন্তব্য নিয়ে নতুন করে খোঁচা দিয়ে গেলেন গম্ভীর। নির্বাচকদের উপর ব্যক্তিগত রাগ উগরে দিতেও ছাড়েননি তিনি। বলেন, ‘‘কাউকে বাদ দিলে নির্বাচকদের দিক থেকে কোনও যোগাযোগ করা হয় না। ২০১৬-তে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম টেস্টের পরে আমাকে যখন বাদ দেওয়া হয়, নির্বাচকেরা কেউ যোগাযোগ করেননি। করুণ নায়ার, যুবরাজ সিংহ, সুরেশ রায়না— সকলের ক্ষেত্রে একই জিনিস হয়েছে।’’ যদিও গম্ভীরকে কেউ মনে করিয়ে দিতেই পারে যে, এর নাম ভারতীয় ক্রিকেট। কপিল দেবের মতো নক্ষত্র বাদ পড়েছেন ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন শট’ খেলার ‘অপরাধে’। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় ব্রাত্য ছিলেন দল থেকে। মোহিন্দর অমরনাথ বার বার উপেক্ষিত হয়ে শেষে বিস্ফোরণ ঘটে। নির্বাচকদের ‘ভাঁড়’ বলেছিলেন তিনি। এঁদের কাউকেও কি বাদ দেওয়ার আগে ফোন করে কেউ বলেছিল, বাদ যাচ্ছ?