ইটালি কোচ মানচিনির সঙ্গে ভায়ো (ডান দিকে)। ছবি টুইটার
ভালবাসেন পিৎজা খেতে। সারা জীবন কাজ করেছেন ব্যাঙ্কে। কিন্তু মাথার মধ্যে কিলবিল করে ফুটবলের ভাবনা। তাঁর মস্তিষ্কে ভর করেই সাম্প্রতিক কালে ফ্রি-কিকে বিপ্লব ঘটাচ্ছে ইটালি। ইউরো কাপেও একাধিকবার যা দেখা গিয়েছে।
লোরেনজো ইনসিনিয়ে বা মার্কো ভেরাত্তি যখন ইটালির হয়ে ফ্রি-কিক নিতে যান, তখন তাঁদের মাথায় ঘোরে ৪০০০-এরও বেশি কৌশল। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন উপায়ে দর্শনীয় সব ফ্রি-কিক করে চমকে দিয়েছেন। এর পিছনে রয়েছে জিয়ান্নি ভায়োর অবদান।
জমাটি ডিফেন্সের রণকৌশল ছেড়ে এবারের ইউরো কাপে ইটালিকে অনেক বেশি আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে খেলতে দেখা গিয়েছে। এটা সম্ভব হয়েছে কোচ রবের্তো মানচিনির জন্যেই। কিন্তু দায়িত্ব নিয়ে মানচিনি আরও একটা ভাল কাজ করেছেন। গত বছর ইটালির ফ্রি-কিক বিশেষজ্ঞ করে নিয়ে এসেছেন ভায়োকে। গত এক বছরে ভায়ো ইটালির ফ্রি-কিক নেওয়ার রণকৌশলে আমূল বদল এনেছেন।
ওয়েলসের বিরুদ্ধে মাতেয়ো পেসিনার গোলের কথাই ধরা যাক। ফ্রি-কিক নিতে দাঁড়িয়েছিলেন মার্কো ভেরাত্তি এবং ফেডেরিকো বার্নার্ডেস্কি। বক্সের মধ্যে ওয়েলসের ওয়ালের পিছনে দু’জন ইটালির ফুটবলার দাঁড়িয়েছিলেন। ফ্রি-কিক নেওয়ার সময় তাঁরা ঠেলেঠুলে ওয়েলসের ওয়ালে ঢুকে পড়েন। বার্নাডেস্কি ফ্রি-কিক নিতে গিয়েও পিছিয়ে আসেন। সঙ্গে সঙ্গে বল ভাসিয়ে দেন ভেরাত্তি। তাতে পা ছুঁইয়ে গোল করেন পেসিনা।
বেলজিয়ামের বিরুদ্ধে প্রথম গোলটাও কার্যত একই রকম। বেলজিয়ামকে বিভ্রান্ত করে বক্সে বল ভাসিয়েছিলেন ইনসিনিয়ে। সেখান থেকে একক দক্ষতায় গোল করেন নিকোলো বারেল্লা।
বিপক্ষকে বিভ্রান্ত করে গোল করার এরকমই অন্তত ৪,৮৩০টি কৌশল জানা আছে ভায়োর। অতীতে লিডস ইউনাইটেড, ব্রেন্টফোর্ড এবং এসি মিলানে কাজ করেছেন তিনি। শুধু তাই নয়, ফ্রি-কিক নিয়ে তাঁর বই ‘এক্সট্রা থার্টি পারসেন্ট’ আধুনিক কোচেদের মধ্যে ব্যপক জনপ্রিয়।
অদ্ভুত ফ্রি-কিকে চমকে দিচ্ছে ইটালি ছবি টুইটার
ইটালির চতুর্থ ডিভিশনের ক্লাব কুইন্টো ডি ট্রেভিসো থেকেই কাজ করা শুরু করেছিলেন ভায়ো। সেখানে দুই যমজ ভাই খেলতেন, যাঁদের দিয়ে ফ্রি-কিক নেওয়াতেন তিনি। ফ্রি-কিক নেওয়ার আগে দুই ভাই একে অপরের দিকে তাকিয়ে থাকতেন। কে ফ্রি-কিক নেবে, তা ভাবতে গিয়ে বিভ্রান্ত হয়ে যেত প্রতিপক্ষ দল। সেই সুযোগে দুই ভাই বুদ্ধি কাজে লাগিয়ে গোল করতেন।
কিন্তু সব জায়গায় একই কৌশল কাজে লাগে না। সেটা সামলান কী ভাবে? এক সাক্ষাৎকারে ভায়ো বলেছেন, “দক্ষতার উপর বিচার করে সেই দল থেকে খেলোয়াড় বেছে নিতে হয়। অনেকের ম্যাচ রিডিং ক্ষমতা অসাধারণ। যেমন সের্জিও র্যামোস। ওর পায়ে বল দিলেই সেটা ফিনিশ করতে চাইবে। তা ছাড়া, সময়জ্ঞান ফ্রি-কিক নেওয়ার ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেটা যাদের থাকে তারাই ভাল ফ্রি-কিক নিতে পারে।”
বসনিয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচে ফ্রি-কিক। ছবি টুইটার
২০০৫-এ রেড স্টার বেলগ্রেডের কোচ হয়ে আসার পর ওয়াল্টার জেঙ্গার ডেস্কে প্রথম যে বইটি এসে পড়েছিল তা ভায়োর লেখা। কী ভাবে সাধারণ একটা দল নিখুঁত ফ্রি-কিকের মাধ্যমে শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে, বইতে সেটাই লেখা ছিল।
এরপর আমিরশাহির আল-আইন ক্লাবের কোচ হওয়ার সময় জেঙ্গা সরাসরি ভায়োকে ক্লাবে ডেকে নেন। তাঁকে দিয়ে ২০ দিনের একটি বিশেষ ফ্রি-কিকের অনুশীলন করান। পরে ক্যাটানিয়ার কোচ হওয়ার সময় সেখানেও ভায়োকে ফ্রি-কিক বিশেষজ্ঞ হিসেবে নিযুক্ত করেন। ফলও পান হাতেনাতে। মরসুমে ক্যাটানিয়ার ৪৪টি গোলের ১৭টিই ছিল ফ্রি-কিক থেকে।
গত বছর সেপ্টেম্বরে ভায়োর সঙ্গে যোগাযোগ করেন মানচিনি। তাঁকে জাতীয় দলের হয়ে কাজ করতে বলেন। অল্প ক’দিনেই মেলে সাফল্য। নেশনস লিগে বসনিয়া এবং হার্জেগোভিনা ম্যাচে অদ্ভুত দৃশ্য দেখা যায় ফ্রি-কিকের সময়। বিপক্ষের ওয়ালের পিছনে দুটি ওয়াল তৈরি করেছিলেন ইটালির ফুটবলাররা। পর মুহূর্তেই তাঁরা সামনে এগিয়ে আসেন। হতভম্ব বসনিয়ার ফুটবলার কিছু বোঝার আগেই গোল করে ইটালি।
মানচিনি জানেন, ইউরো কাপের মতো সাত ম্যাচের প্রতিযোগিতায় ফ্রি-কিক কতটা বড় ভূমিকা নিতে পারে। তাই সঠিক লোককেই দলে নিয়ে এসেছেন তিনি। ইটালিও ফুল ফোটাচ্ছে মাঠে।