প্রাপ্তি: ট্রফি নিয়ে চেলসির ভারতীয় বিশেষজ্ঞ বিনয়। ছবি: টুইটার থেকে
বয়স মাত্র ২১! কিন্তু ১৫ বছর ধরে নিজের মধ্যে একটা স্বপ্নই লালন করেছেন। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে গোল করার স্বপ্ন। পোর্তোয় শনিবার এই তরুণ জার্মানের গোলেই ম্যাঞ্চেস্টার সিটিকে হারিয়ে চেলসি ইউরোপ সেরা হয়েছে। তিনি কাই হাভাৎস। ঘটনাচক্রে এটাই চ্যাম্পিয়ন্স লিগে তাঁর প্রথম গোল।
চেলসির সাফল্যের নেপথ্যে অবদান রয়েছে এক ভারতীয়েরও! তিনি, কেরলের বিনয় মেনন। চেলসির ওয়েলনেস কনসালট্যান্ট ও মাইন্ড স্ট্র্যাটেজিস্ট (ফুটবলারদের মানসিক ভাবে শক্তিশালী করা)। ক্রীড়া মনস্তত্ত্ব নিয়ে এম ফিল করার পরে কোচি থেকে তিনি হৃষীকেশে গিয়েছিলেন চাকরি করতে। দুবাইয়েও কাজ করেছেন বিনয়। সেখান থেকেই ইংল্যান্ডে চলে যান পাকাপাকি ভাবে। রোমান আব্রামোভিচের ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য পরামর্শদাতা ছিলেন বিনয়। তিনিই চেলসিতে নিয়ে যান এই ভারতীয়কে।
ফুটবলের সঙ্গে তার আগে বিনয়ের কোনও সম্পর্ক ছিল না। শৈশবে জুডো শিখেছিলেন। কেরলের হয়ে রাজ্যস্তরে প্রতিনিধিত্বও করেছেন। পরবর্তীকালে যোগ ব্যায়াম নিয়ে কাজ শুরু করেন বিনয়। তাঁর পরামর্শেই মানসিক ভাবে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠেছেন টিমো ওয়ের্নার, কাই হাভাৎস-রা।
এ দিকে ন’বছর পরে চেলসির চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ের অন্যতম নায়ক, একমাত্র গোলদাতা উচ্ছ্বসিত হাভাৎস বিস্ময়ের ঘোর কাটিয়ে উঠতে পারেননি। তিনি বলেছেন, ‘‘জানি না কী বলব। এই মুহূর্তটাকে সত্যি করতে ১৫ বছর ধরে পরিশ্রম করেছি।’’
হাভাৎসের প্রশংসায় পঞ্চমুখ চেলসির অধিনায়ক সেসার আথপিলিকোয়েতা। তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘হাভাৎস সেরা মানসিকতা নিয়ে ফুটবলটা খেলে। আমি নিশ্চিত, এই ছেলেটা একদিন মহানায়ক হয়ে উঠবে। চেলসি অধিনায়ক যোগ করেছেন, ‘‘আমি এই ক্লাবে খেলতে এসেছিলাম ২০১২-তে। চেয়েছিলাম, আর একবার অন্তত আমার প্রিয় ক্লাবকে ইউরোপ-সেরা করতে। তাই আজকের দিনটা ভুলতে পারব না।’’
হাভাৎস গোল করলেও ম্যাচের সেরার পুরস্কার পেয়েছেন এনগোলো কঁতে। ‘‘এত আনন্দ কখনও পাইনি। ক্লাবকে ইউরোপ সেরা করতে পেরে আমি গর্বিত,’’ বলেছেন চেলসির ফরাসি মিডফিল্ডার। তিনি আরও বলেছেন, ‘‘পুরো ব্যাপারটাই আমার কাছে বিস্ময়কর। গোটা মরসুম জুড়ে কঠোর পরিশ্রমের ফল আজ হাতেনাতে পেলাম। অবশ্য এখানে আমার একার কোনও কৃতিত্ব নেই। সবকিছুই হয়েছে দলগত ভাবে। আমরা সবাই মিলে একসঙ্গে যন্ত্রণা সহ্য করেছি। একসঙ্গে লড়াই করেছি। যার পুরস্কার হচ্ছে এই জয়।’’
২০১৮-তে বিশ্বকাপ জয়ী ফ্রান্স দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন কঁতে। পরের বছর চেলসির ইউরোপা লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ক্ষেত্রেও মুখ্য ভূমিকা নিয়েছিলেন তিনি। চেলসির এই সাফল্যের অনেকটা কৃতিত্বই কঁতে দিচ্ছেন নতুন ম্যানেজার টোমাস টুহলকে। গত জানুয়ারিতে ফ্র্যাঙ্ক ল্যাম্পার্ডকে সরিয়ে এই জার্মানের হাতে ক্লাবের দায়িত্ব তুলে দিয়েছিলেন কর্তারা। যিনি চেলসিকে ইউরোপ সেরা করার পাশাপাশি ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে চতুর্থও করেছেন। এফএ কাপ ফাইনালে হাভাৎসরা হেরে গিয়েছিলেন লেস্টার সিটির কাছে। কঁতে বলেছেন, ‘‘নতুন ম্যানেজার এসেই আমাদের খেলার ধরন পুরোপুরি বদলে দেন। তাই ফুটবলারদের মতোই চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কৃতিত্ব টোমাসেরও।’’ চেলসি ম্যানেজার বলেছেন, ‘‘সত্যি কথা বলতে, এমন কোনও কাজ নেই যা ম্যাচে কঁতে করেনি। অক্লান্ত পরিশ্রম করে যায় কঁতে। ম্যান সিটি ফুটবলারদের কাছ থেকে আজ কত বার যে বল কেড়ে নিয়েছে, হিসাবও রাখতে পারিনি।” যোগ করেছেন, “যখন যে ক্লাবে কোচিং করিয়েছি, সেখানেই কঁতে-কে নেওয়ার চেষ্টা করেছি। আমি ভাগ্যবান, শেষপর্যন্ত চেলসিতে ওকে পেলাম।’’