নজর: এনবিএ ড্রাফ্টে সুযোগ পাওয়া লক্ষ্য ব্রিজেশ (বাঁ দিকে), লালেপুইয়ার।
মিজোরামের লালেপুইয়া চাকচুয়াক স্বপ্ন দেখত মালসাওয়াম টুলুঙ্গা, জেজে লালপেখুলায়ার মতো ভারতীয় ফুটবল দলের প্রতিনিধিত্ব করার। আর মধ্য প্রদেশের ব্রিজেশ তিওয়ারির লক্ষ্য ছিল ক্রিকেটার হওয়া। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দু’জনেই বেছে নিয়েছে বাস্কেটবল!
লালেপুইয়ার বয়স তখন আট। মিজোরামের রাজধানী আইজলে তার বাড়ির পাশেই থাকতেন এক জন বাস্কেটবল কোচ। লালেপুইয়ার উচ্চতা দেখেই তিনি বাস্কেটবল খেলার পরামর্শ দেন। কিন্তু লালেপুইয়ার শয়নে-স্বপনে শুধুই ছিল ফুটবল। অনেক বুঝিয়ে তিনি এক দিন বাস্কেটবল কোর্টে নিয়ে যেতে সফল হন ফুটবলার হওয়ার স্বপ্নে বিভোর কিশোরকে। তার পরেই নাটকীয় ভাবে ছবিটা বদলে যায়। লালেপুইয়ার কথায়, ‘‘বাস্কেটবল খেলোয়াড় হওয়ার কথা কখনও ভাবিনি। বরাবরই ফুটবলার হতে চাইতাম আমি। কারণ, আমার বন্ধুরা সবাই ফুটবল খেলত।’’ বছর সতেরোর লালেপুইয়া যোগ করে, ‘‘সেই সময় আইজলে বাস্কেটবলের জনপ্রিয়তা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। সেই সঙ্গে প্রতিশ্রুতিমান বাস্কেটবল খেলোয়াড়েরও খোঁজ চলছিল। আমাদের প্রতিবেশী সেই বাস্কেটবল কোচই প্রায় জোর করে আমাকে নিয়ে গিয়েছিলেন সেই শিবিরে। অল্প কয়েক দিনের মধ্যেই ভালবেসে ফেলি বাস্কেটবলকে। সিদ্ধান্ত নিই, ভবিষ্যতে বাস্কেটবল খেলোয়াড়ই হব। আমার এক তুতো ভাইও বাস্কেটবল খেলত। ও আমাকে বল এবং নেট উপহার দিয়েছিল।’’
বাস্কেটবল শুরু করার কয়েক বছরের মধ্যেই রাজ্য দলে সুযোগ পান কোবে ব্রায়ান্টের ভক্ত লালেপুইয়া। জাতীয় প্রতিযোগিতায় তার খেলা মুগ্ধ করে এনবিএ অ্যাকাডেমির নির্বাচকদের। এই মুহূর্তে নয়ডায় কোচিংয়ে ব্যস্ত ছ’ফুট এক ইঞ্চি উচ্চতার এই প্রতিশ্রুতিমান মিজো বাস্কেটবল খেলোয়াড়।
ব্রিজেশের ক্রিকেট ছেড়ে বাস্কেটবল খেলোয়াড় হয়ে ওঠার নেপথ্যে তার দিদি। বছর ষোলোর প্রতিশ্রুতিমান খেলোয়াড়ের দিদি বাস্কেটবল খেলতেন। ছোট ভাইকে তিনিও প্রায় জোর করেই এক দিন নিয়ে গিয়েছিলেন অনুশীলনে। ব্রিজেশের কথায়, ‘‘ক্রিকেট আমার প্রিয় ছিল। অলরাউন্ডার ছিলাম আমি। কিন্তু দিদি সব সময়ই বলত, আমার ভবিষ্যৎ বাস্কেটবলেই। আমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে এক দিন অনুশীলনে নিয়ে গিয়েছিল। তবে প্রথম দিনই আমি মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম বাস্কেটবল দেখে। টানটান উত্তেজনা আমাকেও উৎসাহিত করল বাস্কেটবল খেলতে।’’ তার সংযোজন, ‘‘তার পর থেকে বাস্কেটবলই আমার ধ্যানজ্ঞান। মধ্যপ্রদেশ রাজ্য দলে সুযোগ পাই। নির্বাচিত হই এনবিএ অ্যাকাডেমিতে। দিদিই আমার প্রথম কোচ।’’
ক্রিকেট ছেড়ে বাস্কেটবলকে বেছে নেওয়া ব্রিজেশের আদর্শ আশ্চর্যজনক ভাবে এক জন ফুটবলার! তিনি, ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো। কেন? ব্রিজেশের ব্যাখ্যা, ‘‘রোনাল্ডো দুর্দান্ত অ্যাথলিট শুধু নয়, অসাধারণ মানুষও।’’ নয়ডায় এনবিএ অ্যাকাডেমিতে সুযোগ পেলেই ফুটবল খেলতে নেমে পড়ে ছ’ফুট তিন ইঞ্চি উচ্চতার ব্রিজেশ।
দুই প্রতিশ্রুতিমান বাস্কেটবল খেলোয়াড়ের পাখির চোখ এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এনবিএ ড্রাফ্টে সুযোগ পাওয়া। চলতি বছরেই ক্যালিফোর্নিয়ায় সপ্তাহখানেক অনুশীলন করার সুযোগ পেয়েছিল লালেপুইয়া ও ব্রিজেশ। তার পরে আটলান্টায় একটি প্রতিযোগিতাতেও অংশ নেয় তারা। সতনাম সিংহের মতো লালেপুইয়া ও ব্রিজেশও স্বপ্ন দেখছে মাইকেল জর্ডান, লেব্রন জেমসদের দেশে ঝড় তোলার।