isl

ইস্টবেঙ্গল কোচ ফাওলারের সহকারীর বিস্ফোরক টুইট, ভাঙনের জল্পনা বাড়াল লগ্নিকারী

বুধবার সন্ধেবেলা ক্লাব কর্তাদের বিরুদ্ধে অন্তর্ঘাতের মতো মারাত্মক অভিযোগ তুলে দিলেন এসসি ইস্টবেঙ্গলের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর টনি গ্রান্ট।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ২২:৩০
Share:

টুইটারে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ক্লাব কর্তাদের দিকে অন্তর্ঘাতের অভিযোগ তুললেন টনি গ্রান্ট। ফাইল চিত্র

ক্ষোভের আগুন অনেক দিন ধরেই ধিকি ধিকি জ্বলছিল। ক্লাব কর্তা ও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সংঘাতের জেরে সেটা বারবার সবার সামনেও এসেছে। যদিও হেড কোচ রবি ফাওলার কিংবা তাঁর দলের তরফ থেকে কেউ এই বিষয়ে প্রকাশ্যে মন্তব্য করেননি। তবে এবার যেন সব ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেল। বুধবার সন্ধেবেলা ক্লাব কর্তাদের বিরুদ্ধে অন্তর্ঘাতের মতো মারাত্মক অভিযোগ তুলে দিলেন এসসি ইস্টবেঙ্গলের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর টনি গ্রান্ট। সমাজমাধ্যমে বিস্ফোরণ ঘটান রবি ফাওলারের সহযোগী ও প্রিয় বন্ধু। মজার ব্যাপার হল গ্রান্টের এই টুইটকে পুরোপুরি সমর্থন করলেন শ্রী সিমেন্টের ম্যানেজিং ডিরেক্টর হরিমোহন বাঙ্গুর। এমনকি তাঁদের শর্ত না মানা হলে যে চুক্তি ছেড়ে বেরিয়ে যাবেন সেই হুমকিও দিয়ে রাখলেন তিনি। যদিও গ্রান্টের টুইটকে বাড়তি গুরুত্ব দিতে রাজি নন লাল-হলুদ কর্তা। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, প্রথম দিকে সমাজমাধ্যমে সরব হলেও পরে নিজের টুইট সরিয়ে দেন গ্রান্ট।

Advertisement

গ্রান্ট এদিন টুইটারে লিখেছিলেন, “বেশ বুঝতে পারছি ক্লাবের পুরনো কর্তারা আমাদের সমস্যায় ফেলতে চাইছেন। আশাকরি ক্লাব কর্তারা তাদের সাংবাদিক বন্ধুদের সাহায্য নিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত আক্রমণ করবেন না। এই অবস্থা মোটেও কাম্য নয়। এটা মেনে নেওয়া যায় না। শ্রী কর্তৃপক্ষ ক্লাব ও ফুটবলের উন্নতির জন্য এখানে এসেছে। এরপরেও যদি আপনারা ক্লাব কর্তাদের সঙ্গে থাকতে চান তাহলে সেটা ভেবে দেখুন।” তবে এখানেই তিনি থেমে থাকেননি। আরও একটি টুইটারে লিখলেন, “ইস্টবেঙ্গলে নতুন হলেও এই ক্লাবের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে আমি ওয়াকিবহাল। আইএসএল একটা নতুন মঞ্চ। তাই আমাদের আরও সময় দেওয়া উচিত। সমর্থকরাও সেটা আশাকরি জানেন।” পরে অবশ্য নিজের টুইটার হ্যান্ডল থেকে তা ডিলিট করে দেন গ্রান্ট।

দলের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর এমন বিস্ফোরক টুইট করলেও গ্রান্টের পাশেই থাকছেন শ্রী সিমেন্টের ম্যানেজিং ডিরেক্টর হরিমোহন বাঙ্গুর। দুবাই থেকে আনন্দবাজার ডিজিটালকে তিনি টেলিফোনে বলেছেন, “আমরা সব সময় ভুল বিষয় নিয়ে আলোচনা করি। টনি গ্রান্ট ওর মনের কথা লিখেছে। এখানে আমি কেন ওকে আপত্তি জানাতে যাব! তাই ওকে শ-কজ করার কোনও প্রশ্নই নেই।” একটু থেমে ফের জুড়লেন, “ক্লাবের সঙ্গে চুক্তি হওয়ার পর থেকে একটার পর ঝামেলা লেগেই আছে। চুক্তি নিয়ে সমস্যা এখনও মিটল না। এগুলো ফুটবলার ও সাপোর্ট স্টাফদের উপর কিন্তু মারাত্মক প্রভাব পড়েছে। সেটা ভুলে গেলে চলবে না। টনি গ্রান্টের এই টুইট কিন্তু সেই ক্ষোভেরই বহিঃপ্রকাশ।”

Advertisement

এদিন শুধু গ্রান্টের পাশে দাঁড়ানো নয়, লাল-হলুদ কর্তাদের বিরুদ্ধেও তিনি একরাশ ক্ষোভ উগরে দিলেন। ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে চুক্তি জটিলতা নিয়ে প্রশ্ন করতেই ক্ষুব্ধ বিনিয়োগকারী কর্তা বলে দিলেন, “আর কতবার চূড়ান্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে বলতে পারেন! সব চুক্তি ইতিমধ্যেই হয়ে গিয়েছে। নতুন করে আর কোনও চুক্তি হওয়ার নেই। আর সেটা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সামনেই হয়েছে। এরপরেও যদি ক্লাব চুক্তি অনুসারে কাজ না করলে আমরাই পিছিয়ে যাব। চুক্তি ভঙ্গ করতে বাধ্য হব।”

যদিও চুক্তি ভেঙে বেরিয়ে যাওয়া কিংবা টনি গ্রান্টের বিতর্কিত টুইট নিয়ে বাড়তি মাথা ঘামাতে রাজি নন লাল-হলুদ কর্তা দেবব্রত সরকার। তিনি বলেছেন, “টনি গ্রান্ট কি টুইট করল সেটা নিয়ে বিন্দুমাত্র ভাবছি না। আর চূড়ান্ত চুক্তি নিয়ে আগেও মন্তব্য করেছি। আমাদের দাবিগুলো ন্যায্য। এগুলো সমর্থকদের দাবি। সেটা মানতে হবে।”

আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি আইএসএলের ফিরতি ডার্বির পর গোয়াতে দুই পক্ষ আলোচনায় বসার কথা। কারণ ক্লাব ও বিনিয়োগকারীদের এই ব্যক্তিত্বের সঙ্ঘাত মোটেও ভাল চোখে দেখছে না এফএসডিএল। যাবতীয় ব্যাপারটা মিটিয়ে ফেলার জন্য নীতা অম্বানির তরফ থেকে তরুণ ঝুনঝুনওয়ালার থাকার কথা। শ্রী সিমেন্টের তরফ থেকে থাকতে পারেন প্রশান্ত বাঙ্গুর ও তাঁর আইনজীবী। লাল-হলুদের তরফ থেকে থাকবেন সভাপতি ডাক্তার প্রণব দাশগুপ্ত। সেই আলোচনায় বসার আগে আরও বেশ কয়েকটি শর্ত আরোপ করেছিল ক্লাব। গত ৫ সেপ্টেম্বর যে টার্মশিটটি দেওয়া হয়েছিল, তার সঙ্গে আরও কয়েকটি উপধারা যোগ করা হয়েছে।

তবে বুধবার সন্ধেবেলা টনি গ্রান্টের বিস্ফোরক টুইট ও শ্রী সিমেন্টের ম্যানেজিং ডিরেক্টর হরিমোহন বাঙ্গুরের ক্লাব কর্তাদের বিরুদ্ধে বর্ষণ, দুই পক্ষের জটিল হয়ে যাওয়া সম্পর্ককে আরও খারাপ দিকে নিয়ে গেল।

যদিও বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে ক্লবা কর্তাদের সম্পর্কের অবনতি নতুন নয়। দুই মরসুম আগে কোয়েস জামানায় একই ঘটনা বারবার ঘটেছিল। সেবারও তৎকালীন হেড কোচ আলেয়ান্দ্রো মেনেন্দেজ গার্সিয়া থেকে শুরু করে কোয়েসের চেয়ারম্যান অজিত আইজ্যাক অনেকবার ক্লাব কর্তাদের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন। এবার শুধু জুড়ে গেল রবি ফাওলারের সহযোগীর নাম। যা ক্লাব বনাম বিনিয়োগকারীদের অন্তর্দ্বন্দে নতুন মাত্রা যোগ করল। এবার এই সমস্যার আদৌ সমাধান হয় কিনা সেটাই দেখার।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement