বিনোদ কুমারের পাশে দাঁড়ালেন দীপা মালিক।
বিনোদ কুমার। সোমবার ভারতীয় ক্রীড়া জগতে নামটা ছড়িয়ে পড়েছে। পদক জিতে নয়, তিনি পরিচিত হয়ে গেলেন পদক খুইয়ে। প্যারালিম্পিক্স কমিটির তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, বিনোদ ডিসকাস থ্রোয়ের যে বিভাগে (এফ ৫২) অংশ নিয়েছিলেন, তার যোগ্য তিনি নন। পদক জয় সম্ভব নয় বিনোদের, তবে এই ঘটনাকে কলঙ্কের বা লজ্জার বলে মানতে নারাজ ভারতের প্যারালিম্পিক্স কমিটি (পিআইসি)-র প্রধান দীপা মালিক।
প্যারালিম্পিক্সের বিভিন্ন ইভেন্টকে ভাগ করা হয় প্রতিযোগীর প্রতিবন্ধকতার মাত্রা দিয়ে। বিনোদ অংশ নিয়েছিলেন ডিসকাস থ্রোয়ের এফ ৫২ বিভাগে। এই বিভাগের প্রতিযোগীদের পেশি শক্তি দুর্বল হয়, চলাফেরায় সীমাবদ্ধতা থাকে, কোনও অঙ্গ থাকে না বা দুই পায়ের মাপ এক থাকে না। এই বিভাগের প্রতিযোগীদের শিরদাঁড়া বা তার উপরের অংশে কোনও আঘাত অথবা কোনও রকম গন্ডগোল থাকার কারণে হুইলচেয়ারে বসে অংশ নিতে হয়।
২০০২ সালে লেহ্-তে পাহাড় থেকে পড়ে যান বিনোদ। শিরদাঁড়ায় চোট পেয়েছিলেন তিনি। তার পর থেকে হুইলচেয়ারই ভরসা। ২০১৯ সাল থেকে এফ ৫২ বিভাগেই অংশ নেন তিনি। টোকিয়ো প্যারালিম্পিক্সে সেই বিভাগেই যোগ্যতা অর্জন করেছিলেন। তা হলে কেন বাদ পড়তে হল তাঁকে? আনন্দবাজার অনলাইন যোগাযোগ করে দীপা মালিকের সঙ্গে। ভারতের প্যারালিম্পিক্স কমিটির প্রধান ২০১৬ সালে রিয়ো প্যারালিম্পিক্সে রুপো জিতেছিলেন (শট পাট-এ)। তাঁর সাফল্যই অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল বিনোদকে। দীপা বলেন, “এটা কোনও ভাবেই পদক ছিনিয়ে নেওয়া নয়। অনুশীলনের কারণে অনেক সময় আঘাত পাওয়া পেশির উন্নতি হয়। এর ফলে যে বিভাগে এক জন প্রতিযোগী যোগ্যতা অর্জন করেছেন, দেখা যায় তার থেকে উন্নত হয়ে গিয়েছে।”
করোনার জন্য অনেক প্রতিযোগিতা বাতিল হয়ে গিয়েছিল। বিনোদ প্যারালিম্পিক্সের জন্য যোগ্যতা অর্জন করেছিলেন ২০১৯ সালে দুবাইয়ে। সেই সময় এফ ৫২ বিভাগেই অংশগ্রহণ করেছিলেন তিনি। সময়ের সঙ্গে উন্নতি হওয়ার কারণেই এমন বিপত্তি বলে মত দীপার। তিনি বলেন, “আমি নিজে শুরু করেছিলাম যে বিভাগে, রিয়ো প্যারালিম্পিক্সে সেই বিভাগে অংশ নিতে পারিনি। বয়সের কারণে আমার শরীর ভেঙে যায়। রিয়োতে আমি রুপো জিতেছিলাম এফ ৫৩ বিভাগে।”
ইভেন্ট হওয়ার পর অন্য প্রতিযোগীদের আপত্তি তোলাও নতুন নয় বলে জানাচ্ছেন দীপা। তিনি বলেন, “আমার সঙ্গেই এমন হয়েছে। খেলোয়াড় জীবনে পাঁচ বার আমার বিরুদ্ধে আবেদন করা হয়েছিল। ভারতীয় প্রতিযোগীরাও আমার বিরুদ্ধে আবেদন করেছিলেন।”
টোকিয়োতে বিনোদের পদক জয় হচ্ছে না। তবে ভেঙে পড়ার কারণ নেই বলেই জানাচ্ছেন দীপা। তিনি বলেন, “নতুন বিভাগে অংশ নিতে হবে বিনোদকে। পরীক্ষা করে জানা যাবে কোন বিভাগে অংশ নিতে পারবে ও। সেই অনুযায়ী প্রস্তুতি নিয়ে পরের প্রতিযোগিতায় খেলতে নামতে হবে বিনোদকে।”
টোকিয়োতে ২২ অগস্ট বিনোদের শারীরিক পরীক্ষা করেছিল আয়োজক কমিটি। সেখানে যদিও তাঁর পেশি শক্তির উন্নতি ধরা পড়েনি। এফ ৫২ বিভাগের যে প্রতিবন্ধকতার মাত্রা থাকে সেটাই রয়েছে বলে জানিয়েছিল আয়োজক কমিটি।