হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনীরা কেউ গভর্নর, সেনেটর কিংবা বিদেশি ছবি তারকা হয়েছেন। তালিকায় রয়েছেন জর্জ বুশ, বারাক ওবামার মতো আমেরিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্টরাও। কিন্তু আমেরিকার স্প্রিন্টার গ্যাবি টমাস সম্প্রতি এমন কিছু করে দেখালেন যার রেকর্ড এর আগে কোনও হার্ভার্ড প্রাক্তনীর নেই।
গ্যাবি আমেরিকার ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ড অ্যাথলিট। ২০২০ টোকিয়ো অলিম্পিক্স-এ তিনি দু’টি পদক জিতেছেন। বিশ্বের তৃতীয় সর্বোচ্চ গতিসম্পন্ন মহিলা তিনি।
এর আগে আর কোনও হার্ভার্ড স্নাতক এমন নজির গড়তে পারেননি। ১৮৯৬ সালে ট্রিপল জাম্প-এ এক জন হার্ভার্ড ছাত্র সোনা পেয়েছিলেন। কিন্তু হার্ভার্ডের স্নাতক ডিগ্রি তাঁর ছিল না।
চলতি অলিম্পিক্স-এ ২০০ মিটার দৌড়ে ব্রোঞ্জ পেয়েছেন গ্যাবি। এই পথ অতিক্রম করতে তিনি সময় নিযেছেন ২১.৬১ সেকেন্ড। আর ৪x১০০ মিটার রিলে-তে জামাইকার কাছে পরাজিত হয়ে নিজের দলকে রুপো এনে দিয়েছেন।
১৯৯৬ সালে জর্জিয়ার আটলান্টায় জন্ম গ্যাবির। তাঁর পুরো নাম গ্যাব্রিয়েল টমাস। অলিম্পিক্সের দৌড়ে বারবার বাধার মুখোমুখি হতে হয়েছে তাঁকে। কখনও অসুখে পড়েছেন তো কখনও অলিম্পিক্সে যোগ্যতা প্রমাণ পর্বেই পরাজিত হয়েছেন। নাছোড় গ্যাবি সমস্ত বাধা জয় করে নিয়েছেন।
আমেরিকার ম্যাসাচুসেটসের স্কুলে পড়ার সময় সকার এবং সফটবল খেলতেন গ্যাবি। কিন্তু মেয়েকে অ্যাথলিট হওয়ার জন্য জোর করেন মা। তার পরই ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ডে অনুশীলন শুরু হয় তাঁর।
দুরন্ত গতির জন্য হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্যাবি খুবই জনপ্রিয় ছিলেন। মাঠের পাশাপাশি ক্লাসেও তিনি ছিলেন প্রথম সারির পড়ুয়া।
স্নাতক স্তরে স্নায়ুবিদ্যা এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য নিয়ে পড়াশোনা করেন। স্নায়ুবিদ্যা বেছে নেওয়ার পিছনে ব্যক্তিগত একটি কারণ ছিল। গ্যাবির যমজ ভাই অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপারঅ্যাকটিভিটি ডিসঅর্ডার (এডিএইচডি) নামে এক রোগে আক্রান্ত। তাঁর আরও এক ভাই রয়েছে। সে আবার অটিজমে আক্রান্ত।
হার্ভার্ড থেকে পাশ করে বেরনোর পর টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এপিডেমিওলজি নিয়ে স্নাতকোত্তর করছেন গ্যাবি। পাশাপাশি জোরকদমে চালিয়ে যাচ্ছিলেন টোকিয়ো অলিম্পিক্সের জন্য প্রস্তুতি।
অলিম্পিক্স প্রস্তুতি পর্বে ভাল খেলতে পারছিলেন না গ্যাবি। পর পর দু’বছর খুব খারাপ ফল ছিল তাঁর। যার জেরে ২০২০ সালে তাঁকে কোচ টনজা বুফর্ড বহিষ্কারও করে দিয়েছিলেন।
হাল ছাড়েননি গ্যাবি। কঠোর পরিশ্রম করে নিজেকে অলিম্পিক্সের যোগ্য করে তুলেছিলেন। অলিম্পিক্সের সমস্ত প্রস্তুতি যখন শেষ, ঠিক সে সময়েই গ্যাবির শরীরে একটি বড় রোগ ধরা পড়ে।
২০২১ সালে এমআরআই-এ দেখা যায় তাঁর যকৃৎ-এ একটি টিউমার হয়েছে। গ্যাবির অলিম্পিক্স যাত্রা ফের অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল।
টিউমারে ক্যানসারের জীবাণু না থাকলে দেশের নাম উজ্জ্বল করবেন, নিজের কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছিলেন গ্যাবি। বায়োপসি করে ক্যানসার জীবাণু মেলেনি টিউমারে।
দেশকে দু’টি পদক এনে দিয়ে নিজেকে করা প্রতিজ্ঞা রেখেছেন গ্যাবি।