Tokyo Olympics

Tokyo Olympics: একদা জীবন থেকে পালাতে চেয়েছিলেন, বুধবার টোকিয়োয় সেমিফাইনাল খেলতে নামছেন সেই রানি

রানির বাবা রিক্সা চালাতেন, মা লোকের বাড়িতে কাজ করতেন। তার থেকে যা আয় হত তা দিয়ে দু’বেলা পেট ভরে খেতে পর্যন্ত পারতেন না।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ অগস্ট ২০২১ ১৬:০০
Share:

রানি রামপাল।

বাড়িতে আলো নেই, মশার কামড়ে ঘুম নেই, দু’বেলা খাবার জোটে না, বন্যায় ঘর ভেসে যায়, এমন জীবন থেকে পালাতে চেয়েছিলেন রানি রামপাল। ভারতীয় মহিলা হকি দলের অধিনায়ক। সব চেয়ে কম বয়সে (১৫ বছর) আন্তর্জাতিক দলে ডাক পেয়েছিলেন তিনি। তবে বাড়ির পরিস্থিতির চাপে হয়তো খেলাই শেখা হত না তাঁর।

রানির বাবা রিক্সা চালাতেন, মা লোকের বাড়িতে কাজ করতেন। তার থেকে যা আয় হত তা দিয়ে দু’বেলা পেট ভরে খেতে পর্যন্ত পেতেন না। কিন্তু বাড়ির কাছে হকি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। ছোট রানির খুব ইচ্ছা হকি খেলার। সেখানকার প্রশিক্ষককে খেলার কথা বলতে তিনি বলেছিলেন, “অনুশীলন করতে পারবে না, তোমার গায়ে শক্তি নেই।” রোগা মেয়েটার জেদ চেপে গেল। মাঠের ধারে পড়ে থাকা ভাঙা একটা হকি স্টিক নিয়ে অনুশীলন করে যেত সে। রানি বলেন, “বাবা দিনে ৮০ টাকা পেত। তা দিয়ে হকি স্টিক কেনা যায় না। তাই ভাঙা স্টিক দিয়েই খেলতাম। জামাও ছিল না আমার। সালওয়ার কামিজ পরেই খেলতাম। নিজেকে প্রমাণ করার জেদ চেপে গিয়েছিল।”

Advertisement

অনেক জোরাজুরির পর রাজি করাতে পেরেছিলেন প্রশিক্ষককে। কিন্তু তারপরেই এল নতুন বিপদ। বাড়িতে কেউ রাজি নন রানির খেলার ব্যাপারে। তাঁরা বললেন, “মেয়েরা ঘরের কাজ করে। আর স্কার্ট পরে তোমাকে খেলতে দেব না।” তাঁদেরও রাজি করাতে বেশ বেগ পেতে হয় রানিকে। তবে রানির জেদের সামনে হার মানতে বাধ্য হন তাঁরা।

অলিম্পিক্সে রানি। ছবি: রয়টার্স

খুব ভোরে শুরু হত অনুশীলন। কিন্তু রানিদের বাড়িতে ঘড়ি ছিল না। তাঁর মা জেগে থাকতেন আকাশের রং দেখার জন্য। সেই অনুযায়ী রানিকে ডেকে দিতেন তিনি। প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের নিয়ম হচ্ছে প্রতিদিন বাড়ি থেকে ৫০০ মিলিলিটার দুধ নিয়ে যেতে হবে। সেটা খেয়ে খেলতে নামবে সকলে। কিন্তু অতটা দুধ কেনার ক্ষমতাই ছিল না রানির। ২০০ মিলিলিটার দুধ কিনে তাতে জল মিশিয়ে দিতেন তিনি।

Advertisement

রানির খেলা দেখে খুশি হন প্রশিক্ষক। হকি খেলার সরঞ্জাম, জুতো সব কিনে দিয়েছিলেন তিনি। নিজের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে রানিকে খাওয়াতেনও সেই প্রশিক্ষক।

রানি বলেন, “এখনও মনে আছে সেই দিনটা। যে দিন প্রথম টাকা পেলাম। একটা প্রতিযোগিতায় খেলে ৫০০ টাকা জিতেছিলাম। বাবাকে দিয়েছিলাম টাকাটা। আমার বাবা কোনও দিন একসঙ্গে অত টাকা দেখেনি। কথা দিয়েছিলাম একদিন নিজেদের বাড়ি হবে আমাদের। নিজের সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করেছি সেই লক্ষ্যে পৌঁছতে।”

মাত্র ১৫ বছর বয়সে জাতীয় দলে ডাক পান রানি। তখনও পরিবারের অনেকে বলছেন, “কবে বিয়ে করবে?” তবে পাশে পেয়েছিলেন বাবাকে। রানির খেলায় কখনও বাধা দেননি তিনি। রানি বলেন, “দেশের জন্য সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করেছি সব সময়।” এখন তিনি অধিনায়ক। ভারতীয় দলের অধিনায়ক।

রানি বলেন, “একদিন এক বন্ধুর বাবা আমাদের বাড়িতে এলেন। সঙ্গে তাঁর নাতনি। আমাকে বললেন, ‘ও তোমাকে দেখে অনুপ্রাণিত, হকি খেলতে চায় ও।’ আনন্দে কেঁদে ফেলেছিলাম সেই দিন।”

২০১৭ সালে নিজের স্বপ্ন সত্যি করেন রানি। নিজেদের বাড়ি কেনেন। রানি বলেন, “নিজেদের জড়িয়ে ধরে কেঁদেছিলাম সেই দিন। তবে এখানেই শেষ নয়। এই বছর প্রশিক্ষক এবং বাড়ির সকলের পরিশ্রমের দাম দিতে হবে। টোকিয়োতে সোনা জিততে হবে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement