নিজস্বী: টোকিয়োয় সমাপ্তি অনুষ্ঠানে বজরংরা। পিটিআই
আমি নিশ্চিত ছিলাম যে, টোকিয়ো থেকে বজরং পুনিয়া এবং নীরজ চোপড়া পদক নিয়েই দেশে ফিরবে। শুধু তাই নয়, ২০১২ লন্ডন অলিম্পিক্সে ভারত যে ছ’টি পদক জিতেছিল, তার চেয়ে এ বার পদকের সংখ্যা বাড়বে, সে সম্পর্কেও একটা স্থির বিশ্বাস ছিল।
আগের কলামেই লিখেছিলাম, বজরং নিজের চেনা ছন্দে ফিরবে। ওর প্রতি বিশ্বাসটা আরও দৃঢ় হয়ে যায় এই কারণে যে, সাম্প্রতিক সময়ে বজরং হারিয়েছিল কাজ়াখস্তানের প্রতিযোগীকে। ফলে পদক দখলের লড়াইয়ে বজরং যে শুরু থেকে আগ্রাসী হয়ে উঠবে, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ ছিল না।
অনেককেই বলতে শুনছি ব্রোঞ্জের লড়াইয়ের আগে বজরং হাঁটুতে চোটের জায়গায় ব্যান্ডেজ না পরেই নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু আমি মনে করি, ফিটনেস নিয়ে ওর কোনও সময়েই সমস্যা ছিল না। পদক জয়ের ব্যাপারে অনেক বেশি প্রত্যয়ী ছিল বজরং এবং যখন লড়াইয়ে নামে, তখনই ওটা ব্যবহার করে থাকে।
বরং দেখলাম পদকের ম্যাচে নামার আগের বজরংয়ের মধ্যে কোনও ধরনের মানসিক উদ্বেগ ছিল না। অন্তত ম্যাচের আগে বা ম্যাচ চলাকালীন কোনও সময়েই সেটা মনে হয়নি। অথবা এটাও বলা যেতে পারে, যদি কোনও মানসিক উৎকণ্ঠার মধ্যে ওকে থাকতেও হয়, তার কোনও প্রতিফলন বজরংয়ের চোখেমুখে একবারের জন্য ফুটে ওঠেনি। সে সম্পর্কে ও নিজেও সতর্ক ছিল। বরং ম্যাটে পা রাখার পরে একটা শান্ত ভাব ছিল বজরংয়ের মুখে। যার অর্থ ও বুঝে নিয়েছিল ব্রোঞ্জ নিশ্চিত করার জন্য কী করা দরকার। সেই ভাবেই লড়াই করেছে ও।
আমরা তো বজরংয়ের লড়াইটা দেখছিলাম আখাড়ায় বসে। ও বেশ সহজেই ম্যাচটা জিতছিল এবং যত বার পয়েন্টের ব্যবধানটা বাড়ছিল, আমাদের উত্তেজনাও লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছিল। ওই সময় আখাড়ায় যারা অনুশীলন করতে এসেছিল, তারা নিজেদের প্রস্তুতি থামিয়ে একজোট হয়ে ওই জয়ের মুহূর্তের সাক্ষী হতে চাইছিল। সকলেই বুঝে ফেলেছিল, বজরং ম্যাচটা জেতার জন্য কতটা মরিয়া হয়ে উঠেছে। ওর জয়ের সুবাদে অলিম্পিক্স কুস্তি থেকে দ্বিতীয় পদক নিশ্চিত করে ফেলে ভারত। রবি কুমার দাহিয়ার রুপোর পরে বজরংয়ের ব্রোঞ্জ। তোমাকে স্বাগত জানাই।
বজরংয়ের সাফল্যে তুমুল করতালি শেষ হওয়ার আগেই আমাদের সকলের নজর চলে যায় নীরজের জ্যাভলিন ইভেন্টের দিকে। প্রথম থ্রো-এর পরেই আমাদের আখাড়া জুড়ে গর্জন শুরু হয়ে যায়। বিশেষ করে, প্রথম রাউন্ডের পরে আমরা সকলেই বুঝতে পারি, নীরজের পদক পাওয়াটা কিন্তু সময়ের অপেক্ষা ছাড়া আর কিছুই নয়। পরের থ্রো’টা এতটাই উঁচু দিয়ে উড়ে গেল যে, আমাদের এখানে উৎসব শুরু হয়ে যায়। কী ভাবে সেই পদক জয়ের মুহূর্তটা পালন করব, তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু হয়ে গিয়েছিল।
এমন একটা মুহূর্তের সাক্ষী থাকার জন্য প্রথমবার অনুশীলন থামিয়ে আখাড়া বন্ধ করে দেওয়ার জন্য আফসোস নেই। শনিবার বজরং এবং নীরজ যে ভাবে গোটা দেশ জুড়ে উৎসবের দীপ জ্বালিয়ে দিয়েছিল, তার পরে অনুশীলন থামিয়ে আমরাও যে সেই উচ্ছ্বাসের সঙ্গী হব, সেটাই তো স্বাভাবিক। এমন সোনার মুহূর্তের জাদুতে আচ্ছন্ন না হয়ে থাকা যায় না।
খুব ভাল লাগত, যদি মেয়েদের গল্ফে অদিতি অশোকও পদক জয় করতে পারত। সত্যি বলতে, এই খেলাটা সম্পর্কে আমার কোনও ধারণাই নেই। কিন্তু এও মানতে হবে, বিশ্ব ক্রমপর্যায়ে ২০০ নম্বরে থাকা একটা মেয়ে যে ভাবে পদক দৌড়ে ঢুকে পড়েছিল, সেটা সকলের কাছেই ছিল অভাবনীয়। তার কৃতিত্ব তো অদিতিকে দিতেই হবে। মেয়েটা একা লড়াই করেই গোটা দেশের মানুষের দৃষ্টি ওর দিকে টেনে নিয়েছিল।
শেষ হল টোকিয়ো অলিম্পিক্স। সাতটি পদক পেল ভারত। বেশ কিছু খেলোয়াড় খুব ভাল পারফর্ম করেছে। হয়তো পদকের সংখ্যা দশ হলে একটু বেশি খুশি হতাম। হয়তো তার জন্য কিছুটা চাপা হতাশাও থাকবে। কিন্তু তার পরেও বলতে হবে, সামগ্রিক ভাবে অগ্রগতি হয়েছে খেলাধুলোয়। আসুন, এই মুহূর্তটা সকলে মিলে প্রাণ ভরে উপভোগ করি। (টিসিএম)