বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন তুরস্কের বুসেনাজ সুরমেনেলি ছবি রয়টার্স
টোকিয়ো অলিম্পিক্সের সেমিফাইনালে উঠে ব্রোঞ্জ পদক নিশ্চিত করেছেন লভলিনা বড়গোঁহাই। তবে অসমের মেয়ে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, ব্রোঞ্জে তিনি মোটেই আটকে থাকতে চান না। তাঁর চোখ সোনায়।
তবে সোনা পাওয়ার প্রথম ধাপেই কঠিন লড়াই অপেক্ষা করে রয়েছে লভলিনার সামনে। তাঁকে খেলতে হবে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন তুরস্কের বুসেনাজ সুরমেনেলির বিপক্ষে। পরপর দুটি ম্যাচ জিতলে তবেই সোনার পদক গলায় ঝোলাতে পারবেন লভলিনা।
বস্তুত, তুরস্ককে এই তালিকায় থাকতে দেখে অনেকেই অবাক। কারণ, টোকিয়োর আগে তুরস্ক থেকে কোনও মহিলা বক্সারই অলিম্পিক্সের যোগ্যতা অর্জন করেননি। কিন্তু এ বার তুরস্কের চার বক্সারের মধ্যে তিন জনই মহিলা। শুধু তাই নয়, বুসেনাজ আবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়নও।
বয়সে লভলিনার থেকে মাত্র কয়েক মাসের ছোট বুসেনাজ। মাত্র দশ বছর বয়স থেকে বক্সিং শেখা শুরু করেন স্থানীয় ক্লাব ট্র্যাবজনস্পরে। স্থানীয় প্রশিক্ষকের কাছে হাতেখড়ি। শারীরিক ভাবে সমর্থ ছিলেন ছোটবেলা থেকেই। সেটাই বক্সিংয়ে কাজে দিয়েছে।
যুব স্তর থেকেই একের পর এক পদক জিততে শুরু করেন বুসেনাজ। তবে ১৫ বছর বয়সে চমকে দেন হাঙ্গেরিতে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন চ্যাম্পিয়নশিপ জিতে। নিজের থেকে র্যাঙ্কিং এবং অভিজ্ঞতায় অনেক এগিয়ে থাকা খেলোয়াড়দের অনায়াসে হারিয়ে দেন বুসেনাজ।
চার বছর পরে বড়দের ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন চ্যাম্পিয়নশিপে মিডলওয়েট বিভাগে রুপো জেতেন। তবে বুসেনাজের কাছে সব থেকে সফল বছর ২০১৯।
তুরস্কের অখ্যাত এক এলাকা থেকে উঠে আসা মেয়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে উঠে সোনা জিতে নেন। ফাইনালে তিনি হারিয়েছিলেন চিনের শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী ইয়াং লিউকে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সেটাই ছিল ওই প্রতিযোগিতার সব থেকে সেরা ম্যাচ।
সুপার-ফেদারওয়েট চ্যাম্পিয়ন তথা প্রাক্তন বক্সার অ্যালেক্স আর্থার ওই ম্যাচ দেখে বলেছিলেন, “আমরা ওর শক্তি দেখে স্রেফ চমকে গিয়েছি। এত বৈচিত্র ওর শটে ভাবাই যায় না।”
ছোটবেলার বক্সিং শিখতে গিয়ে অনেক প্রতিরোধের মুখে পড়তে হয়েছে বুসেনাজকে। কিন্তু পরিবারের সমর্থনে সেই বাধা-বিপত্তি ঠেলে এগিয়ে গিয়েছেন তিনি। হাল ছাড়েননি। বছর দুয়েক আগে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, “অলিম্পিক্সে পদক আমার ছোটবেলার স্বপ্ন। সেই স্বপ্ন পূরণ করতে যা দরকার হয় সেটাই করব।” বক্সিং রিংয়ের মধ্যেও তাঁর সেই আগ্রাসী, প্রতিবাদী মানসিকতা দেখতে পাওয়া যায়। প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়িপ এরদোগানকে বুসেনাজ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, অলিম্পিক্সে পদক জিতলে প্রথমে তাঁকেই দেখাবেন।
চলতি অলিম্পিক্সে দুটি ম্যাচে বিপক্ষকে একটাও পয়েন্ট পেতে দেননি বুসেনাজ। দুটি ম্যাচই জিতেছেন ৫-০ পয়েন্টে। তবে ভারতের লভলিনার বিরুদ্ধে লড়াই যে সহজ হবে না এটা বলেই দেওয়া যায়।