এ বার বক্সিংয়ের রিংয়ে ভারত-চিনের লড়াই। মুখোমুখি পূজা রানি ও লি কিয়ান
চলতি টোকিয়ো অলিম্পিস্কে এক অদ্ভুত সন্ধিক্ষণে ওঁরা দুজন দাঁড়িয়ে রয়েছেন। ওঁরা দুজন হলেন ভারতের পূজা রানি ভোরা ও চিনের লি কিয়ান। বিপক্ষকে উড়িয়ে দেওয়া পাঞ্চের জন্য দুজন আজ বিশ্ব মঞ্চে পরিচিত। তবে একটা সময় দুজনকেই বক্সিং রিংয়ে নামার জন্য, দুই হাতে ভারী দস্তানা তুলে নেওয়ার জন্য পরিবারের সঙ্গে ঝামেলাও করতে হয়েছে। পোহাতে হয়েছিল মানসিক যন্ত্রণা।
এ বার টোকিয়ো অলিম্পিক্সে নামার আগে ৫ ফুট ১১ ইঞ্চির কিয়ান বলেছিলেন, “আমাদের দেশে খেলাধুলাকে প্রাধান্য দেওয়া হলেও আমার বাবা-মা বক্সিং একেবারেই পছন্দ করতেন না। চিন থেকে পরিবারের সঙ্গে মঙ্গোলিয়া চলে আসার পর সেখানকার মঙ্গোলিয়া ভোকেশনাল কলেজ অব ফিজিক্যাল এডুকেশনে ভর্তি হয়ে যাই। লম্বা হওয়ার জন্য চুটিয়ে বাস্কেটবল খেলতাম। সেই সময় চিনের কয়েকটা স্কুল দলের বিরুদ্ধে খেলার সময় আমাকে একজন দেখে ফেলেন। সেই কোচের জন্যই বক্সিং শুরু। তারপর আর পিছনে ফিরে তাকাইনি। সেই কোচই বাবা-মাকে অনেক বুঝিয়ে রাজি করেছিলেন। সে দিন ওঁরা আমার পাশে না দাঁড়ালেও এখন গর্ববোধ করেন।”
বিজয়রথ এগিয়ে নিয়ে যেতে মরিয়া লি কিয়ান। ফাইল চিত্র
৩০ বছরের পূজার শুরুটাও এমনই কঠিন ছিল। হরিয়ানা কুস্তি ও বক্সিংয়ের জন্য বিখ্যাত হলেও ওঁর বাবা এই দুটো খেলার বিরোধী ছিলেন। বক্সিং খেলার জন্য প্রায় ছয় মাস মেয়ের মুখ পর্যন্ত দেখেননি ওঁর বাবা। একটা সাক্ষাতকারে পূজা বলেছিলেন, “আমার বাবা বলতেন খারাপ মেয়েরা কুস্তি ও বক্সিং করে। এমন খেলায় নাকি সম্মান বিকিয়ে দেওয়া হয়। তবে প্রথম বার যখন জাতীয় পর্যায়ে পদক জিতি, তখন বাবা সবার আগে আমাকে জড়িয়ে ধরেছিল।”
পূজা তাঁর প্রথম অলিম্পিক্সের কোয়ার্টার ফাইনালে নামার আগে প্রতিপক্ষ লি কিয়ানের বিরুদ্ধে একবারই মুখোমুখি হয়েছিলেন। ২০১৪ সালের ইনচিওন এশিয়ান গেমসে বিশ্বের চার নম্বরে থাকা লি কিয়ানের কাছে হেরে যান। সেই সেমি ফাইনাল ম্যাচের স্কোর লাইন ছিল চিনের বক্সারের পক্ষে ২-০। ফলে সে বার পূজাকে ব্রোঞ্জ নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল। তবে এ বার নির্ঘাত সেই হারের বদলা নিতে মরিয়া হবেন হরিয়ানার এই বক্সার।
এশিয়ান গেমসে হারের বদলা নিতে মরিয়া পূজা রানি। ফাইল চিত্র
শনিবার দুপুরে ৭৫ কেজি বিভাগের যুদ্ধে নামার আগে পরিসংখ্যান অবশ্য চিনের পক্ষেই কথা বলছে। ৩০ বছরের পূজার ঝুলিতে কমনওয়েলথ গেমসে ব্রোঞ্জ ও এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে দুবার সোনা জয় থাকলেও, ৩১ বছরের লি কিয়ান ইতিমধ্যেই অলিম্পিক্সে পদক জয়ের স্বাদ পেয়ে গিয়েছেন। পাঁচ বছর আগে রিয়ো অলিম্পিক্সে ব্রোঞ্জ জিতেছিলেন। এছাড়া বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ, এশিয়ান গেমস ও দুবারের এশিয়ার সেরার ঝুলিতে আরও পদক তো আছেই।
বিশেষজ্ঞদের মতে এই ম্যাচে লি কিয়ান এগিয়ে। কারণ অভিজ্ঞতা তাঁর হয়ে কথা বলছে। তবে ৫ ফুট ৮ ইঞ্চির পূজা মনের জোরকে সম্বল করে এগিয়ে চলেছেন। তাঁর সতীর্থ লভলিনা বড়গোহাঁই দেশকে পদক এনে দিয়েছেন। এ বার যে তাঁর পালা।