ব্রোঞ্জ নিশ্চিত করার পর লভলিনা বড়গোহাঁই। ছবি - টুইটার
লভলিনা বড়গোহাঁইয়ের জোরালো পাঞ্চের জোরে ভারতের ঝুলিতে আরও একটি পদক আসছেই। চেন নিয়েন-চিনের বিরুদ্ধে বড় জয় পেলেও এর আগে চার বার লভলিনাকে হারতে হয়েছিল। তবে এমন সাফল্যের দিনেও বাড়তি উচ্ছ্বাস দেখাতে রাজি নন জাতীয় মহিলা বক্সিং দলের মুখ্য প্রশিক্ষক আলি কামার। তাঁর মতে কোভিড বাধা হয়ে না দাঁড়ালে মহিলা বক্সিং দল চলতি টোকিয়ো অলিম্পিক্সে আরও ভাল পারফরম্যান্স করতে পারত।
শুধু তাই নয়, মেরি কমের আকস্মিক বিদায়ের পর যখন মহিলা বক্সাররা ভেঙে পড়েছেন, তখন লভলিনা ও পূজা রানির মানসিক জোর বাড়িয়েছিলেন এই বঙ্গ সন্তান। যদিও তিনি নিজেকে বাহবা দিতে রাজি নন।
চাইনিজ তাইপেইয়ের চেন নিয়েন-চিন এ দিন ৪-১ ব্যবধানে উড়ে গেলেও, অতীতের রেকর্ড কিন্তু বিপক্ষের হয়েই কথা বলছিল। চেন নিয়েন-চিনের কাছে এর আগে চার বার হেরেছিলেন লভলিনা। কিন্তু এ বার যেন চেনা প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে এক অন্য লভলিনাকে দেখা গেল। কীভাবে তাঁর খেলায় এল বদল?
বিপক্ষকে উড়িয়ে দেওয়ার পর লভলিনার উল্লাস। ছবি - টুইটার
আলি আনন্দবাজার অনলাইনকে টোকিয়ো থেকে বলছিলেন, “অতীতের রেকর্ড ধরে তো বর্তমান চলতে পারে না। সেটাই ওকে বলেছিলাম। পরিস্থিতি অনুসারে খেলার পরামর্শ দিয়েছিলাম। এর আগে চার বার হেরে যাওয়ার জন্য চেন নিয়েন-চিনের খেলা সম্পর্কে আমাদের ধারণা ছিল। গত চার বার লভলিনা শুরু থেকে রক্ষণাত্মক খেলছিল। এ বার শুরু থেকেই আক্রমণ করতে বলেছিলাম। আর এতেই এল সাফল্য।”
কিন্তু টোকিয়ো অলিম্পিক্সের এই সফরটা মোটেও সহজ ছিল না। গত বছর থেকে করোনার বাড়বাড়ন্তের জন্য মহিলা দলের অনুশীলনে ব্যাঘাত ঘটেছিল। নয়া দিল্লির ইন্দিরা গাঁধী ইন্ডোর স্টেডিয়ামে শিবিরের আয়োজন করা হলেও রাজধানীতে ভাইরাস হানার জন্য অনুশীলন বাতিল করে দেওয়া হয়। আলি ও দলের হাই পারফরম্যান্স কোচ রাফায়েল বেরগামাস্কো ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন। লভলিনাও কোভিডে আক্রান্ত হন। তবুও তাঁর লড়াই থেমে থাকেনি। নিভৃতবাসে থাকার সময় একাই অনুশীলন করে যেতেন এই তরুণী। সেই বাধা টপকানোর পর পুণের আর্মি স্পোর্টস ইন্সটিটিউটে ফের বসেছিল শিবির। সেখানে কয়েক সপ্তাহ অনুশীলনের পর পুরো দল দুবাই চলে যায়।
গত এক বছরের মন্দ অভিজ্ঞতার কথা শোনাতে গিয়ে আলি বলছিলেন, “আমরা আরও ভাল ফল করতে পারতাম। আমাদের মহিলা দলের বেশির ভাগ বক্সাররা রুপোর দাবিদার ছিল। কিন্তু কোভিডের জন্য ভাল ভাবে অনুশীলন করাই গেল না। আমাদের দলের একাধিক সদস্য ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিল। লভলিনাও রেহাই পায়নি। তবুও মনের জোর বজায় রেখে ঘর বন্দি অবস্থায় অনুশীলন চালিয়ে গিয়েছে। আমাদের অনেকে অসুস্থ হলেও ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমে খেলোয়াড়দের সঙ্গে রোজ যোগাযোগ রেখেছি। তাই তো অলিম্পিক্সের মতো আসরে অনেক চাপের মধ্যেও লভলিনা, পূজার মতো বক্সার হাল ছাড়েনি। ওদের জেদ দেখে ভাল লাগছে।”
উল্লাসের সেই মুহূর্ত। জয়ের পর আলি কামারের সঙ্গে লভলিনা। ছবি - ফেসবুক
৬০ কেজিতে ইতিমধ্যেই সিমরনজিত কৌর হেরে গিয়েছেন। তবে সবচেয়ে বড় ধাক্কা লেগেছিল মেরির বিদায়। ২০০২ সালে ম্যানচেস্টার কমনওয়েলথ গেমসে সোনা জয়ী প্রাক্তন বক্সারের মতে, “মেরি কমের হেরে যাওয়া লভলিনা, পূজার কাছে বড় ধাক্কা ছিল। সেটা নিয়ে কোনও দ্বিমত নেই। তবে লভলিনা অন্য ধাতু দিয়ে গড়া। ওর যখন ১৬ বছর বয়স তখন থেকে আমার কাছে অনুশীলন করছে। পূজাও অনেক বছর ধরে আছে। এই প্রতিযোগিতার গুরুত্ব ওরা জানে। তাই ওদের মনোবল বাড়ানোর জন্য আমাকে বাড়তি পরিশ্রম করতে হয়নি। নিজেদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে ওরা উদ্বুদ্ধ হয়েছে।”
অসম থেকে এই প্রথম বার কোন অ্যাথলিট দেশের হয়ে অলিম্পিক্সে নামলেন। আর প্রথম ধাপেই এল সাফল্য। লভলিনা ইতিমধ্যেই ব্রোঞ্জ নিশ্চিত করে ফেলেছেন। তবে এ বার তাঁর লক্ষ্য আরও বড়। সেই লক্ষ্য পূরণ করার জন্য অনেক বেশি খোলা মনে নামতে পারবেন ২৩ বছরের বক্সার। প্রাক্তন বক্সার আলি এমনটাই বিশ্বাস করেন।