উল্লাস: ব্রোঞ্জ পদকের ম্যাচে জার্মানিকে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পরে হারিয়ে অবশেষে পদক জয়। আনন্দে গোলপোস্টে উঠে পড়েছেন সৃজেশ। পিটিআই
ছবিটা ভাইরাল হতে সময় লাগেনি। জার্মানিকে হারিয়ে হকির ব্রোঞ্জ জিতে গোলপোস্টে উঠে বসে আছেন পারাত্তু রবীন্দ্রন সৃজেশ! যেন ওই চৌহদ্দির তিনিই সম্রাট।
ভারত শেষ অলিম্পিক্স পদক পায় ১৯৮০তে। মস্কোর সোনাজয়ী দলে ছিলেন গুরমায়েল সিংহ নামে অধুনা বিস্মৃত এক প্রতিভা। সেই পরিবারেরই নতুন প্রজন্ম হার্দিক সিংহ বলছেন, ‘‘সৃজেশই আসল নায়ক। শেষ সেকেন্ডেও একশো ভাগ নিশ্চিত গোল বাঁচিয়ে দিল।’’ জার্মানির বিরুদ্ধে গোল করে হার্দিক নিজেও কিন্তু কম গেলেন না। নায়ক এগারো জনই। রিজার্ভ বেঞ্চ, কোচ, সাপোর্টস্টাফও। যাঁরা ৪১ বছরের আপেক্ষায় দাঁড়ি টেনে দিলেন।
নায়কদের সবার জীবনই যেন অবশ্যপাঠ্য হওয়ার অপেক্ষায়। সৃজেশ যেমন কেরলের এর্নাকুলামের ছেলে। গ্রামের নাম কিঝাকাকামবলাম। বাবা চাষী। স্কুলে কোন খেলাটা খেলেননি! শেষে মনে ধরল হকি। কিন্তু গোলকিপিং করতে চাই কিট। কোথায় পাবেন সে সব কেনার টাকা? অগত্যা বাবা বেরিয়ে পড়লেন পোষ্য দু’টি গরু নিয়ে। যে প্রাণীদের জন্য সংসারে সামান্য আয় হত, তাদেরই বিক্রি করলেন। জুটল দশ হাজার টাকা। যা দিয়ে কেনা হল হকির গোলরক্ষকের বিশেষ হেলমেট, প্যাড ইত্যাদি। বলা যায়, সেখান থেকেই ব্রোঞ্জ জয়ের জমি তৈরি হয়ে গেল।
কিন্তু গোলপোস্টের উপরে বসলেন কেন? তিনটি অলিম্পিক্স খেলা ভারতীয় গোলরক্ষকের সহাস্য জবাব, ‘‘ওটাই তো আমার জায়গা। সারাটা জীবন ওখানেই কাটিয়েছি। আমাকে তো বোঝাতে হবে যে আমিই গোলপোস্টের মালিক!’’ বৃহস্পতিবার জার্মানি ১৩টি পেনাল্টি কর্নার পায়। যার একটা থেকে মাত্র গোল করে। বাকিগুলো আটকে যায় কারণ ভারতীয় গোলের দুর্ভেদ্য প্রহরী হিসেবে যে ছিলেন সৃজেশ। মূলত যাঁর সৌজন্যে পাওয়া জয় নিয়ে ভারত-অধিনায়ক মনপ্রীত সিংহকে বলতে শোনা গেল, ‘‘খেলা শেষের হুটারটা বাজার পরে ভাষা হারিয়ে ফেলেছিলাম। বাড়িঘর ছেড়ে ১৫ মাস বেঙ্গালুরুতে থেকেছি। ওখানে কারও কারও কোভিডও হল। তবু পাগলের মতো খেটেছি।’’
জলন্ধরের মিঠাপুর গ্রামের ছেলে মনপ্রীত অলিম্পিক্স পদকের পাশাপাশি সিনেমায় নামার স্বপ্নও দেখতেন। যদিও রুপোলী পর্দায় নামার আগেই একটি ধাতব চাকতি গলায় নিয়ে তিনি মহানায়ক হয়ে গেলেন। মনপ্রীত অবশ্য মনে করছেন আসল নায়ক সেই সমস্ত স্বাস্থ্যকর্মীরা, যাঁরা জীবন বাজি রেখে লড়াই করছেন কোভিডের সঙ্গে। তাঁদেরকেই পদক উৎসর্গ করলেন ভারতের অন্যতম সেরা মিডফিল্ডার।
মনপ্রীত বললেন, ‘‘ভাবতেই পারছি না ১-৩ পিছিয়েও জিতেছি, তাও শেষ সেকেন্ডে জার্মানি পেনাল্টি কর্নার পাওয়ার পরেও। তখন শুধু মনে হচ্ছিল, জীবন দিয়ে ওদের আটকাতে হবে।’’ সৃজেশের বিশ্বাস ভারতের জয় হকি মাঠে কচিকাঁচাদের ভিড় বাড়িয়ে দেবে। হকিতে হাতেখড়ির সময় ফরোয়ার্ড হতে চেয়েছিলেন অমৃতসরের হরমনপ্রীত সিংহ। পরে চাষের জমিতে বাবার ট্র্যাক্টরের গিয়ার সামলাতে গিয়ে পেয়ে গেলেন কব্জিতে কোনও ‘দৈব শক্তি’। হয়ে উঠলেন ভারত সেরা ডিফেন্ডার,অসাধারণ ড্র্যাগফ্লিকার। টোকিয়োয় এ বার ছ’টি গোল করে চমকে দিয়েছেন তিনি।