2020 Tokyo Olympics

Tokyo Olympics : টোকিয়োর সময় ধরে অনুশীলন, কপিলের পরামর্শে পদক জয়ের স্বপ্নে বিভোর সুতীর্থা

প্রথম অলিম্পিক্স বলে কথা। আর প্রথম দর্শনেই বাজিমাত করতে চাইছেন। সেই জন্য প্রস্তুতিও সেরে রেখেছেন।

Advertisement

সব্যসাচী বাগচী

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ জুলাই ২০২১ ১৪:২৩
Share:

সুতীর্থা মুখোপাধ্য়ায়। ফাইল ছবি

উত্তর ২৪ পরগণার কাঁকিনাড়ার মাদ্রাল থেকে টোকিয়োর গেমস ভিলেজে পা রাখা। এই দীর্ঘ যাত্রার জন্য ২৫ বছরের সুতীর্থা মুখোপাধ্যায়কে অনেক যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়েছে। তবে সেই সব কালো দিন এখন অতীত। শনিবার রাতে অলিম্পিক্সগামী বিমানে টোকিয়ো রওনা হয়েছেন এই টেবিল টেনিস খেলোয়াড়। এর আগে অবশ্য নিজেকে পুরোপুরি তৈরি করে নিয়েছেন। সঙ্গে রয়েছে কপিল দেবের মহা মূল্যবান পরামর্শ।

Advertisement

প্রথম অলিম্পিক্স বলে কথা। আর প্রথম দর্শনেই বাজিমাত করতে চাইছেন। সেই জন্য প্রস্তুতিও সেরে রেখেছেন। আনন্দবাজার অনলাইনকে টেলিফোনে সুতীর্থা বলছিলেন, “হরিয়ানার সোনিপথের জাতীয় শিবির ও কলকাতায় আসার পরে সৌম্যদীপ রায়ের কাছে টোকিয়োর স্থানীয় সময় অনুসারে অনুশীলন করতাম। গত ছয়-সাত মাস আমার দৈনিক জীবনযাপন সে ভাবেই তৈরি করেছিলাম। এ ভাবে অনুশীলন করে দারুণ ফল পেয়েছি।”

কেন টোকিয়োর স্থানীয় সময় অনুসারে প্রিয় ছাত্রীকে অনুশীলন করাতেন? সেটা জানিয়ে দিলেন জাতীয় টেবিল টেনিস দলের প্রশিক্ষক সৌম্যদীপ রায়। বলছিলেন, “সুতীর্থার ম্যাচ টোকিয়োর সময় অনুসারে সকাল ১০টা। ভারতের সময় তখন সকাল ৬:৩০ মিনিট। তাই সে ভাবে আমরা অনুশীলনের আয়োজন করেছিলাম। রোজ ভোর ৫:৩০ মিনিটে ঘুম থেকে উঠে ও প্রস্তুতি শুরু করে দিত। প্রথম দিকে অনেকটা সময় ধরে এ ভাবে অনুশীলন চললেও গত এক মাস ওকে ফুরফুরে মেজাজে থাকতে দিয়েছি। নিজের সেরা খেলা দেখা ছাড়াও প্রচুর ওয়েব সিরিজ দেখে। গান শোনে। আসলে এত বড় মঞ্চে প্রথম বার নামার আগে একটা ভীতি কাজ করে। আমি ও আমার স্ত্রী পৌলমী ওকে চাপমুক্ত রাখার চেষ্টা করেছি।”

Advertisement

কোচ সৌম্যদীপ রায়ের সঙ্গে সুতীর্থা।

ওঁর বয়স নিয়ে একটা সময় বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। সেই সয়ম এক বছরের নির্বাসনে থাকতে হয়েছিল সুতীর্থাকে। ফলে ২০১৬ সালে রিও অলিম্পিক্সে অংশগ্রহণ করা হয়নি। তবে এ বার আর থেমে থাকা নয়। লক্ষ্য পূরণের উদ্দেশে নিজেকে মেলে দিয়েছেন সুতীর্থা। বাবা-মা, ছোটবেলার প্রশিক্ষক মিহির ঘোষ ওঁকে সব সময় উৎসাহ যুগিয়ে যাচ্ছেন। সঙ্গে যোগ হয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও কপিল দেবের বার্তা।

সুতীর্থাকে কী বলেছিলেন প্রথম বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক? বঙ্গ তনয়ার প্রতিক্রিয়া, “আমাদের সঙ্গে নেট মাধ্যমে কথা বলার আগে তিনি সবার অতীত সম্পর্কে জানতেন। তাই বলেছিলেন, ‘জীবনে সাফল্য পেতে হলে প্রতিটি মানুষের হোঁচট খাওয়া জরুরী। সেই কঠিন দিনগুলো একজন মানুষকে মানসিক ভাবে আরও শক্তিশালী করে তোলে।’ আমার কাছে সেই অতীতের দিনগুলি খুব ভয়ঙ্কর ছিল। একটা সময় মানসিক অবসাদে চলে গিয়েছিলাম। সেই সময় নিয়ে ভাবতে বসলেই কেঁদে ফেলতাম। তবে কপিল স্যরের কথা শোনার পর থেকে যেন আত্মবিশ্বাস আরও বেড়ে গিয়েছে।”

প্রাক্তন কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রী কিরেন রিজিজু এবং সৌম্যদীপ রায়ের সঙ্গে।

শুধু ঘড়ির কাঁটা ধরে অনুশীলন করা নয়, শারীরিক কসরতের উপরেও অনেকটা জোর দিয়েছেন। ওজন প্রায় ১০ কেজি কমে গিয়েছে। ফলে বেড়েছে পায়ের গতি। প্রাক্তন জাতীয় অ্যাথলিট অর্ঘ্য মজুমদার ও প্রাক্তন ফুটবলার সুভাষ চক্রবর্তীর কাছে নিয়মিত কসরত করতেন। সেই জন্য মাদ্রাল থেকে যাদবপুরে এসে থাকতে শুরু করেন সুতীর্থা।

তাই তো ছাত্রীর পদক জয়ের আশায় রয়েছেন সৌম্যদীপ। বিপক্ষ শক্তিশালী হলেও এই প্রাক্তন টেবিল টেনিস খেলোয়াড় কিন্তু সুতীর্থাকে এগিয়ে রাখলেন। বলছিলেন, “এই মুহূর্তে ও বিশ্ব তালিকার ৯৫ নম্বরে আছে। এটা কিন্তু গত তিন বছরের কঠিন লড়াইয়ের জন্য সম্ভব হল। এর আগে সুতীর্থা এক থেকে ২০-র মধ্যে খেলোয়াড়দের অনায়াসে হারিয়েছে। আর এ বার তো ওর ফিটনেস দারুণ। তাই পদক জিততেই পারে।”

স্বভাবতই এই একই স্বপ্নে বিভোর সুতীর্থাও। তবে তাঁর কাছে কেরিয়ারের প্রথম অলিম্পিক্স শুধু অংশ নেওয়ার জন্য নয়। এই অলিম্পিক্স নিন্দুকদের জবাব দেওয়ার জন্যও।

তাই তো শেষে যোগ করলেন, “নির্বাসন ওঠার আগে অনেক কটাক্ষ হজম করেছি। এর জবাব টোকিয়ো থেকে দিতে চাই। তাই আপাতত প্রথম লক্ষ্য কোয়ার্টার ফাইনালের বাধা টপকানো।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement