ছবি সংগৃহীত
একটি সোনা, দু’টি রুপো ও চারটি ব্রোঞ্জ। গত চার দশকে অলিম্পিক্সে এটাই সব চেয়ে ভাল পারফরম্যান্স ভারতের। পদক তালিকায় প্রথম ৫০ দেশের মধ্যেই রয়েছেন ভারতীয়েরা। তাঁদের অবস্থান ৪৮ নম্বরে।
যদি পদক সংখ্যায় এই অবস্থান নির্ধারিত হত, তা হলে ভারত থাকত ৩৩ নম্বরে। কিন্তু অলিম্পিক্সে এই অবস্থান নির্ধারণ হয় কোন দেশ কতগুলি সোনার পদক পেয়েছে, তার উপরে। সেই বিচারে টোকিয়ো অলিম্পিক্স শেষে ভারত পেয়েছে ৪৮তম স্থান।
এর আগে অলিম্পিক্সে গত চার দশকে ভারতের সেরা অবস্থান ছিল ৫১ নম্বর, ২০০৮ সালে বেজিং অলিম্পিক্সে। সে বার অভিনব বিন্দ্রার শুটিং থেকে পাওয়া সোনা-সহ ভারতীয় দলের পদক সংখ্যা ছিল ৩।
নর্মান প্রিচার্ডকে ধরলে আধুনিক অলিম্পক্সের ইতিহাসে ভারত অংশ নিচ্ছে সেই ১৯০০ সাল থেকে। সে বার কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের ছাত্র প্রিচার্ড ২০০ মিটার হার্ডলস ও ২০০ মিটারে রুপো পেয়েছিলেন। এর পরে অলিম্পিক্সে ভারত প্রথম দল পাঠায় ১৯২০ সালে অ্যান্টোয়ার্প অলিম্পিক্সে। সে বার ছ’জনের ভারতীয় দল কোনও পদক পায়নি। ১৯২৪ সালেও ভারতের পদক প্রাপ্তি ছিল শূন্য। ১৯২৮ সালে আমস্টারডাম অলিম্পিক্স থেকে ভারত প্রথম পদক পাওয়া শুরু করে। সে বার ভারত পেয়েছিল ২৪তম স্থান। ১৯২৮ সাল থেকে ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত ভারত যখন হকিতে স্বর্ণপদক পাওয়া নিয়ম করে ফেলেছিল, তখন পদক তালিকায় ভারত অনেক উপরের সারিতেই থেকেছে। কিন্তু তখন অংশগ্রহণকারী দেশের সংখ্যা যেমন কম ছিল, তেমনই বিভিন্ন ইভেন্টের সংখ্যাও ছিল কম। যা পরবর্তী কালে অনেক বেড়েছে। ১৯৮০ সালে ভারতের অবস্থান ছিল ২৩ নম্বরে। সে বার হকিতে সোনা পেয়েছিল বাসুদেব ভাস্করনের নেতৃত্বাধীন দল। যদি এ বারও ভারত একটি সোনার পদক পেয়ে টোকিয়োয় প্রতিযোগিতা শেষ করত, তা হলে ভারতের ভাগ্যে জুটত ৬৩তম স্থান।
বোঝাই যাচ্ছে যতই সময় এগিয়েছে, ততই খেলার বিভিন্ন ইভেন্ট ও দেশের সংখ্যা বাড়ছে। ২০১২ সালে লন্ডন অলিম্পিক্সে ভারত শেষ করেছিল ৫৭তম স্থানে। রিয়োতে ভারতের অবস্থান ছিল আরও ১০ ধাপ পিছনে। সে জায়গা থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে ভারত এক লাফে এগিয়ে এসেছে ১৯ ধাপ। এ বার নীরজ চোপড়ার জ্যাভলিনে সোনা ভারতকে পদক তালিকায় যেমন অনেকটাই শেষ দিকে উপরে তুলে দিয়েছে, তেমন ২০০৮ সালের পরে ভারতের জাতীয় সঙ্গীতও বেজে উঠেছে অলিম্পিক্সের আসরে।
পাশাপাশি উল্লেখ করতে হবে মণিপুরের ভারোত্তোলক মীরাবাই চানুর কথাও। এ বার অলিম্পিক্স শুরুর দিনেই চমক দেন রুপো পেয়ে। হরিয়ানার ২৩ বছরের কুস্তিগির রবি কুমার দাহিয়াও রুপো পেয়েছেন প্রথম অলিম্পিক্সে এসে। গোটা ভারতের আশা ছিল পি ভি সিন্ধু সোনা জিততে পারেন। কিন্তু সেই আশা পূরণ হয়নি। মেয়েদের ব্যাডমিন্টনে সিন্ধুকে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে ব্রোঞ্জ পেয়েই। রিয়ো অলিম্পিক্সে রুপো পেয়েছিলেন সিন্ধু।
একই সঙ্গে ৪১ বছর পরে হকিতে ব্রোঞ্জ পেয়ে ভারতের পুরুষ দল দেশের অলিম্পিক্স পদকের সংখ্যা বাড়িয়েছে। এ ছাড়াও ব্রোঞ্জ পেয়েছেন বক্সার লাভলিনা বরগোহাঁই এবং কুস্তিগির বজরং পুনিয়া। হাঁটুর চোটে কাবু না হলে বজরং আরও এগোতে পারতেন বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞেরা।
এ ছাড়াও, পদকের খুব কাছ থেকে ফিরেছেন ডিসকাস থ্রোয়ার কমলপ্রীত কৌর, ভারতের মহিলা হকি দল, কুস্তিগির দীপক পুনিয়া ও গলফার অদিতি অশোক।